ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাওয়ালের ৬ রোযার বিধান ও ফযিলত

২০১৮ জুন ২০ ১১:২৩:৪৬
শাওয়ালের ৬ রোযার বিধান ও ফযিলত

এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহিহ সূত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে—‘مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ’‘যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখল। এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখল সে যেন গোটা বছর রোযা রাখল।’ (মুসলিম, হাদিস নং-১১৬৪)

এ হাদিসকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য বাণী দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পরে ছয় দিন রোযা রাখবে সে যেন গোটা বছর রোযা রাখল। যে ব্যক্তি একটি নেকি করবে সে দশ গুণ সওয়াব পাবে।’

অন্য বর্ণনাতে আছে, ‘আল্লাহ এক নেকিকে দশ গুণ করেন। সুতরাং এক মাসের রোযা ১০ মাসের রোযার সমান। বাকি ছয় দিন রোযা রাখলে এক বছর হয়ে গেল।’ (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

সহিহ ইবনে খুজাইমাতে হাদিসটি এসেছে এভাবে, ‘রমযান মাসের রোযা হচ্ছে ১০ মাসের সমান। আর ছয় দিনের রোযা হচ্ছে, দুই মাসের সমান। এভাবে এক বছরের রোযা হয়ে গেল।’

ফিকাহবিদগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, রমযান মাসের পর শাওয়াল মাসে ছয় দিন রোযা রাখা এক বছর ফরয রোযা পালনের সমান। অন্যথায় সাধারণ নফল রোযার ক্ষেত্রেও সওয়াব বহু গুণ হওয়া সাব্যস্ত। কেন না এক নেকিতে ১০ নেকি দেয়া হয়।

এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোযা রাখার আরও ফায়দা হচ্ছে, অবহেলার কারণে অথবা গুণাহর কারণে রমযানের রোযার ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেটা পুষিয়ে নেয়া। কেয়ামতের দিন ফরয আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে। যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন– অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামায দেখ; সেকি নামায পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি নামাযে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামায লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন— দেখ আমার বান্দার কোনো নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলেন— নফল নামায দিয়ে বান্দার ফরযের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।’ (আবু দাউদ)

রমযানের কাযা না শাওয়ালের রোযা আগে?উপরোল্লেখিত সহিহ হাদিসটি থেকে বোঝা যায়, শাওয়ালের ছয় রোযা মূলত রমযানের রোযা পূর্ণ করার সাথে সম্পৃক্ত। তাই রমযানের কাযা রোযা আদায়ের আগে শাওয়ালের ছয় রোযা শুরু করা যাবে না। কেন না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, ‘যে ব্যক্তি রমযান মাসে রোযা রাখল অতঃপর এ রোযার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখল সে যেন সারা বছরই রোযা রাখল।’

হাদিসটি প্রমাণ করছে, আগে রমযানের রোযা পূর্ণ করতে হবে। সেটা তার সুনির্দিষ্ট সময় রমযানে আদায় হিসেবে হোক অথবা শাওয়াল মাসে কাযা পালন হিসেবে হোক। অর্থাৎ রমযানের সকল রোযা পূর্ণ করার পরই শাওয়ালের ছয় রোযা রাখা হলে হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে।

কারণ, যে ব্যক্তির ওপর রমযানের কাযা রোযা বাকি আছে সে তো পূর্ণ রমযানের রোযা রাখেনি। বরং কিছুদিন রোযা রেখেছে।

তবে কোনো নারী যদি নিফাসগ্রস্ত হন এবং তিনি পুরো রমযানে রোযা রাখতে না পারার কারণে, শাওয়াল মাসে রমযানের কাযা রোযা পালন শুরু করেন ও কাযা রোযা শেষ করতে করতে জিলক্বদ মাস শুরু হয়ে যায়, তাহলে তিনি জিলক্বদ মাসে ছয় রোযা রাখতে পারবেন।

এতে তিনি শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখার প্রতিদান পাবেন। কেন না তিনি বাধ্য হয়েই এই বিলম্ব করেছেন।

ফতোয়া সূত্র: ১. ফাতাওয়া সমগ্র ১৯/২০; ২. ইসলামকা, ফাতাওয়া নং- ৪০৮২ ও ৭৮৬৩

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে