ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া টাকা দিয়ে যা কিনবেন তহুরা

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ অক্টোবর ১৭ ১৩:৫২:৫৫
প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া টাকা দিয়ে যা কিনবেন তহুরা

ফিরোজ মিয়ার ৫ মেয়ের মধ্যে তহুরা দ্বিতীয়। ছেলেও আছেন; কিন্তু লাজুক স্বভাবের সেই মেয়েটিই এখন ফিরোজ মিয়ার সবচেয়ে গর্বের জায়গা। অর্থ উপার্জনের কারণেই নয়, দেশের জার্সি গায়ে সুনাম অর্জন করাটাই বেশি গৌরবের অন্যের জমিজমা চাষ করা মুক্তাগাছার ওই কৃষকের।

১১ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবর্ধনা দিয়েছেন গত মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবলে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া মেয়েদের। কিশোরী ফুটবলারদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উপহার হিসেবে আরো দিয়েছেন ফুটবলারদের মায়েদের জন্য শাড়ী।

তহুরার বাবা ফিরোজ মিয়া মঙ্গলবার বাফুফে ভবনে এসেছিলেন মেয়ের উপহার হিসেবে পাওয়া রেফ্রিজারেটর নেয়ার জন্য। সাফ অনুর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়ন হওয়া মেয়েদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি করে রেফ্রিজারেটর উপহার দিয়েছে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। তহুরা ওই দলেরও সদস্য। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের ৯ ফুটবলার পেয়েছেন এই রেফ্রিজারেটর। তহুরার বাবা ফিরোজ মিয়া ও নাজমার বাবা আবুল কালাম ময়মনসিংহ থেকে পিকআপ নিয়ে এসেছেন ৯ জনের রেফ্রিজারেটর নিয়ে যেতে।

তহুরার বাবা স্বপ্নেও কল্পনা করেননি ১০ লাখ টাকা পাবেন। প্রথমে তিনি শুনে বিশ্বাসও করেননি। ‘তহুরা যখন ফোন করে বললো- বাবা, আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন, তখনই আমি বিশ্বাস করি। আমার মেয়ে তো আর মিথ্যা বলবে না’-কথাগুলো বলতে গিয়ে খুশিতে চিকচিক করছিল ফিরোজ মিয়ার চোখ-মুখ।

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই ১০ লাখ টাকা দিয়ে কী করবেন? জানতে চাইলে ফিরোজ মিয়া বললেন- ‘২০ কাঠা জমি আগেই ঠিক করা ছিল। ওটা তহুরারই পছন্দ। বাড়ীর পাশে আমারই এক বন্ধু জমি বিক্রি করবেন। তহুরার খুব পছন্দ ওই ফসলি জমিটা। সেই বলে রেখেছিল বাবা, এই জমিটা আমি তোমাকে কিনে দেবো একদিন। এখন আমি জমিটা কিনতে পারবো। রেজিস্ট্রেশনসহ ১২/১৩ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।’

যে তহুরা ফুটবল খেলে মুঠোভরে দিচ্ছেন বাবাকে, সেই তহুরা মাঠে যেতেন বলে একদিন কত কথাই না শুনতে হয়েছে ফিরোজ মিয়াকে। মঙ্গলবার বাফুফে ভবনে বসে পুরোনো দিনের সেই স্মৃতিকথা বললেন জাগো নিউজকে তহুরার বাবা। ‘আমি চিল্লা (তাবলিগে গিয়ে) করেছি। এলাকার অনেক হুজুর বলতেন, আপনি চিল্লা করেছেন আর মেয়ে ফুটবল খেলছে। এটা নাজায়েজ। আমি একদিন তহুরাকে বললাম, মারে ফুটবলটা তোমার জন্য ভালো হচ্ছে না। তুমি ফুটবল ছেড়ে দাও। তহুরা বলতো- আমি শুরু করলাম ফুটবল, এখন তুমি যদি বলো আমি খেলা চালিয়ে যেতে পারবো না। তবে তুমি হুজুরদের বিশ্বাস করো না। মানুষ তো ভালো বলছে। এভাবেই তহুরা খেলা চালিয়ে যেতো।’

সেই তহুরা এখন ফিরোজ মিয়ার গর্বের সবচেয়ে বড় জায়গা। তহুরা কেবল বাবা ফিরোজ মিয়ার গর্বই নন, পুরো দেশের গর্ব। প্রতিপক্ষের ডিফেন্স চুরমার করে ম্যাচের পর ম্যাচ গোল করে যান তহুরা। এলাকার মানুষ তহুরাকে দেখলে মেসি বলে ডাকেন, ‘আমার মেয়েকে অনেকে মেসি বলেন। আমার অনেক ভালো লাগে। এখন সে যতদিন পারবে খেলবে। তহুরা এখন বাড়িতে গেলে মানুষ দেখতে আসে। আত্মীয়স্বজন ছুটে আসেন। আমার এর চেয়ে কী আর থাকতে পারে আনন্দের’-বলছিলেন তহুরার বাবা।

এখন বাফুফের অধীনে যে ক’জন নারী ফুটবলার আছেন, তাদের মধ্যে তহুরা খাতুন বেশি লাজুক। এই তো মঙ্গলবার বাবা এসেছিন খবর পেয়ে বাফুফে ভবনের সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় মুখে তার লাজুক হাসি। বাবার কাছে আসলেন, বসলেন এবং বাবাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলেন। বাবাও তার খেলাধুলার খোঁজখবর নিলেন। বললেন- ভালো করে খেলবি। দোয়া করবা- তহুরা শুধু এ কথাটাই বললেন।

‘আমার এ মেয়েটা (তহুরা) অনেক লাজুক। বাড়িতে গেলে ঘরেই থাকে। কোথাও যায় না। তাই বলে কাজে কিন্তু পটু। জানেন? তহুরা ট্র্যাক্টর চালানো ও ধান রোপণসহ সব ধরণের কৃষি কাজ পারে। আমাকে কাজ করতে দেখে মাঝেমধ্যে বলতো– বাবা তুমি এত পরিশ্রম করো কেন? তাহলে তো তুমি বেশি দিন বাঁচবা না। আমি বলতাম, তোদের লালন-পালন করতে আমাকে তো কষ্ট করতেই হবে। তহুরা আমাকে বলতো, আমিও পরিশ্রম করে তোমার কষ্ট কমিয়ে দেবো’- মেয়ে তহুরার গল্প যেন শেষই হচ্ছিল না ফিরোজ মিয়ার।

তহুরা ফুটবল খেলেন। পায়ের যাদুতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেন। দেশের মানুষ টিভিতে সে খেলা দেখে বাহবা দেন; কিন্তু তার বাড়িতে টিভি নেই। মেয়ের খেলা হলে অন্যের বাড়ি গিয়ে টিভিতে দেখেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আগে যে ২ লাখ টাকা পেয়েছেন তহুরা, তা দিয়েও জমি কিনেছেন তার বাবা। এবার অবশ্য একটা টিভি কেনার কথা বললেন ফিরোজ মিয়া, ‘এবার টিভি কিনবো। যাতে ঘরে বসেই তহুরাদের খেলা দেখতে পারি।’

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে