ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করেছেন একমাত্র এই বাংলাদেশী ক্রিকেটার

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ মার্চ ২৫ ১৬:০৯:২৮
দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করেছেন একমাত্র এই বাংলাদেশী ক্রিকেটার

পরিবারের প্রসঙ্গে একটু পরে আসি। তার আগে দু’দিন আগের একটি ঘটনা, সেদিন আমার সহকর্মী মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন খুব হতাশ কন্ঠে বলছিলেন, সিলেটের ক্রিকেটাররা কী আর জাতীয় দলে খেলতে পারবে না।

সিলেটের ক্রিকেটাররা অনেক পিছিয়ে পড়েছে বলে হা হুতাশ করলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে আমি পাল্টা জবাবে জানিয়েছিলাম, বাংলাদেশের অনুর্ধ ১৪, ১৬, ১৮ ও ১৯ বয়সভিত্তিক দলগুলোতে সিলেটের একাধিক ছেলে দারুন পারফর্ম করছে। বর্তমানেও তিনজন ক্রিকেটার অনুর্ধ ১৯ দলে খেলছে। এরা হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় দলে এসে আলো ছড়াবে।

এই আলাপের ঠিক দুই দিন পরই সিলেটের ছেলে আবুল হাসান রাজু টেস্টে রাজসিক কায়দায় পদার্পন করলেন। যেন জাতীয় দলে সিলেটের ক্রিকেটারদের ব্যাট নিজের হাতে তুলে নিলেন। সিলেটের রাজু আজ দেশে সবচেয়ে আলোচিত নাম। অথচ মঙ্গলবার পর্যন্ত আবুল হাসান রাজু নামটি ছিল অখ্যাত।

সিলেট বিভাগীয় ক্রিকেট কোচ এ কে এম মাহমুদ ইমনসহ সিলেটের ক্রিকেটের খোঁজ খবর যারা রাখেন তারা জানেন আবুল হাসান রাজুর মতো সিলেটের অনেক সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার পর্যায়ক্রমে জাতীয় দলে এসে আলো ছড়ানোর অপেক্ষায় আছে। রাজুর বিস্ময়কর পারফরম্যান্স যেন এই আশা জাগানিয়া তথ্যই জানান দিচ্ছে।

রাজুর বিরল ইনিংসটি বিস্ময়করই বলতে হবে। দশ নম্বরে ব্যাট করতে নামা ‘বোলার’ আবুল হাসান করলেন এক অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি! যে সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আজীবন দাগ কাটবে।

আর ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে এ কারণে, আবুল যে কীর্তি করেছেন, তা টেস্ট ক্রিকেটে বিরলতম ঘটনাগুলোর একটি। অভিষেকে দশ নম্বরে কোনো ব্যাটসম্যান টেস্ট ক্রিকেটে সর্বশেষ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ১১০ বছর আগে, ১৯০২ সালে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার রেগি ডাফ করেছিলেন সেই সেঞ্চুরি।

তবে ক্রিকইনফোর তথ্য থেকে জানা যায়, রেগি ডাফ বোলার ছিলেন না, তিনি ছিলেন পুরো দস্তুর টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। সে যাই হোক, সেই কীর্তিরই পুনরাবৃত্তি করলেন আমাদের আবুল হাসান। শুধু তাই নয়, রেগি ডাফকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ এখন রাজুর সামনে। আর মাত্র ৫ রান করলেই অভিষেকেই দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে রেগি ডাফের করা ১০৪ রানের ইনিংসকে পেছনে ফেলে বিশ্ব রেকর্ড গড়বেন রাজু। আর ১৮ রান করলেই ১২৮ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন করে লেখা হবে।

১৮৮৪ সালের ১১ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১১৭ রান করেছিলেন ইংল্যান্ডের উইলিয়াম রিডার। ইতিহাসের ১৬তম টেস্টে গড়া সেই রেকর্ড এখনও অক্ষত। সেই রেকর্ডকে এখন চোখ রাঙাচ্ছেন আমাদের সিলেটের রাজু।

রাজুর উত্থান কিন্তু কিছুটা নাটকীয়। শুরুতে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। অনুর্ধ ১৫ দলেও যখন খেলতেন, তখন পুরো দস্তুর ব্যাটসম্যানের তকমা ছিল। বয়সভিত্তিক একটি ম্যাচে বোলিং করতে দেখে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও নোবেল তাকে পেস বোলিং করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই থেকে বোলার হয়ে গেলেন রাজু। উত্থানটা হলো তরতর করে।

এরপর অনুর্ধ ১৯ দলে ছিলেন নিয়মিত পারফরমার। ২০০৯ সালের ৭ মে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলংকা অনুর্ধ ১৯ দলের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজু। সেবার ১৯৭ রান তাড়া করতে নেমে ১৪৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। এসময় নামেন রাজু। আর কোন উইকেট পড়েনি। অপরাজিত ৩০ রানের কার্যকরি ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের আনন্দ দিয়েছিলেন রাজু।

২০০৯ সালের ১৪ নভেম্বর জিম্বাবুয়ে অনুর্ধ ১৯ দলের সঙ্গে অলরাউন্ড নৈপুন্য দেখিয়েছিলেন রাজু। বল হাতে ২৬ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, ব্যাটিংয়ে নয় নম্বরে নেমে করেছিলেন অপরাজিত ২২। সেবার ক্রিকইনফো শিরোনাম দিয়েছিল ‘আবুল হাসান ব্রেক্স জিম্বাবুয়ে হার্টস’।

আবার চলে আসি রাজুর পরিবারে। রাজুর বাবা কুলাউড়ার গাজীপুর চা বাগানে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে চা বাগানেই সবার ছোট ছেলে রাজুর জন্ম। রাজুরা দুই ভাই এক বোন। রাজুর বড় ভাই এখন গাজীপুর চা বাগানে টিলা সুপারভাইজার পদে চাকরি করেন। একমাত্র বোন ফাতেমা আক্তার অগ্রণী ব্যাংকে চাকরি করেন। রাজুর বাবা ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করায় দেখে যেতে পারেননি ছেলের অনন্য সাফল্য।

বুধবার রাতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রাজুর ভাই আবুল কাশেম রুবেল জানান, তাদের পরিবারে এখন আনন্দের বন্যা। রাজুর ব্যাটিং তারা টিভিতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে দেখেছেন। বিশেষ করে শেষদিকের উত্তেজনাকর কয়েকটি ওভারের সময় তাদের টেনশন ছিল বেশি। শেষপর্যন্ত সেঞ্চুরি করায় তারা সবার মতোই খুবই আনন্দিত।

বড় ভাই জানালেন, সেঞ্চুরির পর হোটেলে ফিরে রাজুর সঙ্গে তার পরিবারের কথা হয়েছে। আগামী দিনের খেলার জন্য খুব বেশি কথা বলতে পারেন নি তারা। ভবিষ্যতে রাজু যাতে আরও ভালো খেলতে পারে সেজন্য সিলেটসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন বড় ভাই আবুল কাশেম রুবেল।

কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, সিলেটের যেসব ব্যক্তি রাজুকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাজুর ভাই।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে