ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি নিয়ে অজানা পাঁচ

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ মার্চ ২৫ ২১:২৯:৩৩
বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি নিয়ে অজানা পাঁচ

মেহরাব হোসেন ২৫ মার্চ তারিখটা কি ক্যালেন্ডারে গোল করে দাগিয়ে রাখেন? না হলে ফোন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন বলবেন, ‘ফোন দেওয়ার কারণটা অনুমান করতে পারছি!’ এ তারিখটা শুধু মেহরাব কেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট আর্কাইভেই জ্বলজ্বল করছে। ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মেহরাবের সৌজন্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি দেখেছিল বাংলাদেশ। আজ রেকর্ডটার ২০ বছর পূর্তি।

মেরিল আন্তর্জাতিক কাপের সে ম্যাচে তখনকার পরাক্রমশালী জিম্বাবুয়েকে প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিল বাংলাদেশ। মেহরাবের ব্যাটে চড়ে জয়ের স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ অনভিজ্ঞতার কারণেই হোক আর মাহবুবুর রহমানের সেই ক্যাচ হাতছাড়ার মাশুলে হোক, তীব্র লড়াই শেষে ম্যাচটা হেরে গিয়েছিল ৩ উইকেটে। ম্যাচ হারলেও ইতিহাসের পাতায় মেহরাবের নামটা ঠিকই উঠে গেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম কারও সেঞ্চুরি—এ নিয়ে গত ২০ বছরে কত কিছুই জানা হয়েছে। নতুন কিছু কি আর আছে, যেটি একেবারেই অজানা? স্মৃতি ঘেঁটে নতুন কিছু বলাটা যেন মেহরাবের কাছে সেঞ্চুরি করার চেয়েও কঠিন মনে হলো!

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের প্রশংসাসাধারণত প্রতিপক্ষ দলের কোনো ব্যাটসম্যান ভালো করতে থাকলে তাঁর মনোযোগ নষ্ট করতে উইকেটকিপাররা অনেক সময় মুখ চালাতে শুরু করেন। কিন্তু অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার এখানে ব্যতিক্রম। মেহরাবের মনে পড়ে, তাঁর ব্যাটিং দেখে জিম্বাবুইয়ান উইকেটকিপার প্রশংসা করছিলেন, ‘অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার উইকেটের পেছন থেকে অনেক প্রশংসা করছিল। এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করছিল। সেঞ্চুরির পরও সে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।’

শাহরিয়ার ৯৫ থেকে শিক্ষামেহরাব-শাহরিয়ার হোসেনের (বিদ্যুৎ) ওপেনিং জুটিতে তোলা ১৭০ রান এখনো উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। সেদিন শাহরিয়ার ৬৮ রানে আউট হলেও একই টুর্নামেন্টে এ ওপেনার কেনিয়ার বিপক্ষে আউট হয়েছিলেন ৯৫ রানে। সতীর্থ ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন। এটা থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন মেহরাব, ‘ওপেনিংয়ে আমাদের যে রেকর্ড জুটিটা হলো সেদিন, দুজনের একটা কথাই হচ্ছিল—তুই আউট হবি না, আমিও হব না। বোঝাপড়াটা দারুণ ছিল। গর্ব করি, ২০ বছর ধরে রেকর্ডটা টিকে আছে। যখন নব্বইয়ের ঘরে গেছি, মনের ভেতর শঙ্কার চোরাস্রোত। এর আগে বিদ্যুৎ ৯৫ রানে আউট হয়ে গেছে। এ কারণে খুব সতর্ক হয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ৯০ রানের ঘরে গেলে সেঞ্চুরি করবই করব। ভেবেছিলাম, বিদ্যুৎ আউট (৯৫ রানে) হয়েছে, আমি হব না। সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত গেছে ৯৯ রানে পৌঁছানোর পর। নার্ভাস হয়ে ৫-৭টা বল ডট খেলেছি তখন।’

সেঞ্চুরির পথে প্রিয় শট১১৬ বলে ১০১ রানের ইনিংসে ৯টা চার আর ২টি ছক্কা মেরেছিলেন মেহরাব। এর মধ্যে একটা শট এখনো লেগে আছে মেহরাবের চোখে, ‘গ্রান্ট ফ্লাওয়ারকে স্লগ সুইপে একটা ছক্কা মেরেছিলাম। তখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্লগ সুইপে এভাবে ছক্কা মারার সাহস দেখাত না। এখন তো মুশফিক (রহিম) প্রায়ই মারে। ওই শটটা ভীষণ মনে পড়ে।’

বাবার কথা রেখেছিআন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ফিফটি করেছিলেন আজহার হোসেন, ১৯৯০ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলেশিয়া কাপে। আজহার সম্পর্কে মেহরাবের চাচা। মেহরাবের বাবা স্বপ্ন দেখতেন তাঁর ছেলে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটা করবে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করার তৃপ্তি এখনো মেহরাবের চোখেমুখে, ‘সেদিন সেঞ্চুরির পর বাবার কথা মনে পড়েছিল খুব। আমার চাচা দেশের হয়ে প্রথম ফিফটি করার পর ছোটবেলায় বাবা বারবার জিজ্ঞেস করত, তুমি পারবে না প্রথম সেঞ্চুরিটা করতে? সব সময়ই বলতাম, হ্যাঁ পারব। সেঞ্চুরির পর এত ভালো লেগেছিল যে বাবাকে দেওয়া কথাটা অন্তত রাখতে পেরেছি। ’

অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতাবাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি করে যে আনন্দের ঢেউ উঠেছিল মেহরাবের মনে। কিন্তু সেটি পূর্ণতা পায়নি ম্যাচটা ৩ উইকেটে হেরে যাওয়ায়। মেহেরাবের আফসোস, জিতলে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা হয়তো তাঁর হাতেই উঠত, ‘ম্যাচের পর মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেঞ্চুরিটা বৃথা গেল। আমাদের জেতা ম্যাচ ছিল। মাহাবুবুর রহমান সেলিম ভাই অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের একটা ক্যাচ হাতছাড়া করেছিল। ওই ক্যাচটা হাতছাড়া না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমরা জিতব আর ম্যাচসেরার পুরস্কারটা পাব। দুর্ভাগ্য ম্যাচটা জিততে পারিনি। সেঞ্চুরিটার জন্য আনন্দ যেমন আছে, ম্যাচ হারায় খারাপ লাগাও আছে।’

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে