ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

ইফতারে মুড়ির সঙ্গে জিলাপি খেলে উপকার নাকি ক্ষতি

২০২৫ মার্চ ০৭ ১৮:৩২:০৫
ইফতারে মুড়ির সঙ্গে জিলাপি খেলে উপকার নাকি ক্ষতি

রমজানের ইফতার মানেই নানা স্বাদের খাবারের সমাহার। প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি খাবার হলো মুড়ি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুড়ির সঙ্গে জিলাপি, বুন্দিয়া কিংবা অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবার মিশিয়ে খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এই অভ্যাস কতটা স্বাস্থ্যকর বা ক্ষতিকর—তা নিয়ে পুষ্টিবিদরা নানা দিক তুলে ধরছেন।

মুড়ি ও মিষ্টিজাতীয় খাবারের সংমিশ্রণ: কী বলে পুষ্টিবিজ্ঞান?

মুড়ি মূলত লো-ক্যালোরি ও সহজপাচ্য শস্যজাতীয় খাদ্য। এতে চর্বির পরিমাণ কম এবং এটি দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। অন্যদিকে, জিলাপি, বুন্দিয়া কিংবা অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবারে উচ্চমাত্রার চিনি ও ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা শরীরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। মুড়ির সঙ্গে এই ধরনের মিষ্টি খাবার মিশিয়ে খাওয়া হলে এটি উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) তৈরি করে, যা তাৎক্ষণিক রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়।

স্বাস্থ্যঝুঁকি: কেন সাবধান হওয়া জরুরি?

যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা স্থূলতার সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য মুড়ির সঙ্গে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট একসঙ্গে গ্রহণ করলে তা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

এছাড়াও, এই ধরনের খাবার অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক, হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বেশি পরিমাণে তেল ও চিনিযুক্ত খাবার শরীরের মেটাবলিজমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা দীর্ঘমেয়াদে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

পরিমিত পরিমাণে কি গ্রহণযোগ্য?

যদি কারও শারীরিক কোনো গুরুতর সমস্যা না থাকে, তবে পরিমিত পরিমাণে (সপ্তাহে এক-দুইবার) মুড়ির সঙ্গে অল্প পরিমাণে মিষ্টিজাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই তা সীমিত রাখা জরুরি এবং অতিরিক্ত তেল ও চিনি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

উন্নত বিকল্প: স্বাস্থ্যকর কীভাবে খাওয়া যায়?

মুড়ির সঙ্গে মিষ্টি খাবার মেশানোর পরিবর্তে আরও স্বাস্থ্যকর কিছু বিকল্প বেছে নেওয়া যেতে পারে। যেমন:

মুড়ির সঙ্গে দই: এটি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভালো উৎস, যা হজমের জন্যও উপকারী।

মুড়ির সঙ্গে ফল: আপেল, কলা বা ডুমুরের মতো ফল মিশিয়ে খেলে প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায় এবং পুষ্টিগুণও বৃদ্ধি পায়।

মুড়ির সঙ্গে বাদাম: বাদাম ও বিভিন্ন বীজযুক্ত মুড়ি খেলে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি

ইফতারে মুখরোচক খাবার থাকা স্বাভাবিক, তবে তা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। যারা মনে করেন মুড়ির সঙ্গে জিলাপি বা বুন্দিয়া না খেলে ইফতার অসম্পূর্ণ, তাদের উচিত সুস্থতার দিকটি গুরুত্ব দেওয়া। স্বল্পমেয়াদী স্বাদের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা বেশি জরুরি।

সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ড অনুসরণ না করে নিজের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে। সুস্থ থাকতে চাইলে খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা রাখা এবং পুষ্টিবিদদের পরামর্শ মেনে চলাই হবে সর্বোত্তম উপায়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ