ঢাকা, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

কোরবানি কবুল হবে না যদি এই ১০টি ভুলের একটি হয়

২০২৫ মে ০১ ১৯:২৭:৪৮
কোরবানি কবুল হবে না যদি এই ১০টি ভুলের একটি হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শরিক, বয়স, বিসমিল্লাহ—অসতর্কতায় বাতিল হতে পারে ইবাদত

কোরবানি শুধু একটি প্রথা নয়, বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম বড় একটি ইবাদত। সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। কিন্তু কিছু সাধারণ ভুল ও অবহেলার কারণে অনেক সময় এই মহান ইবাদত কবুল হয় না। তাই শুদ্ধ নিয়ত ও সঠিক পদ্ধতিতে কোরবানি আদায় করা অত্যন্ত জরুরি।

নিচে তুলে ধরা হলো কোরবানি শুদ্ধ না হওয়ার দশটি প্রধান কারণ—

১. নিয়ত বিশুদ্ধ না হওয়া

কোরবানি হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। লোক দেখানো, বেশি গোশতের আশায়, বা নাম কুড়াতে কোরবানি করলে তা কবুল হয় না। তবে কোরবানির গোশত খাওয়ার ইচ্ছা থাকা দোষের নয়।

সুরা হজ, আয়াত ৩৭:

"তোমাদের কোরবানির গোশত কিংবা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।"

২. হারাম উপার্জনে পশু কেনা

যে টাকায় কোরবানির পশু কেনা হবে, তা হালাল হতে হবে। হারাম বা সন্দেহজনক আয় থেকে কোরবানি দিলে তা আল্লাহ কবুল করেন না।

আরও পড়ুন:

শরিকে কোরবানি দেয়ার সঠিক নিয়ম কী? জানুন গোশত বণ্টনের পদ্ধতি

দাজ্জাল কোথায় আছেন? নবী মুহাম্মদ (সা.) আগেই জানিয়েছিলেন

হাদিস (সহিহ মুসলিম ১০১৫):

"নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি শুধু পবিত্র ও হালাল জিনিসই গ্রহণ করেন।"

৩. পশুর বয়স নির্ধারিত সীমার কম হওয়া

প্রতিটি পশুর জন্য শরিয়তে নির্ধারিত বয়স রয়েছে:

উট: ৫ বছর

গরু ও মহিষ: ২ বছর

ছাগল: ১ বছর

ভেড়া ও দুম্বা: ১ বছর (অথবা ৬ মাস, যদি হৃষ্টপুষ্ট হয়)

এই বয়স পূর্ণ না হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না।

৪. ত্রুটিপূর্ণ পশু কোরবানি

অন্ধ, মারাত্মক অসুস্থ, পঙ্গু বা ভাঙা অঙ্গবিশিষ্ট পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে না। এসব দোষের কারণে পশুটি কোরবানির অযোগ্য হয়ে যায়।

৫. জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ না বলা

ইচ্ছাকৃতভাবে “বিসমিল্লাহ” না বললে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তবে ভুলে গেলে আল্লাহ ক্ষমাশীল, এবং কোরবানি শুদ্ধ হবে।

সুরা আন’আম, আয়াত ১২১:

"যারা আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি, তোমরা তা খেয়ো না।"

৬. গলার অন্তত তিনটি রগ না কাটা

জবাই করার সময় পশুর গলার চারটি রগের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি কাটতে হবে। এই চারটি রগ হলো: কণ্ঠনালি, খাদ্যনালি এবং দু’পাশের মোটা রগ (ওয়াজদান)। কম রগ কাটা হলে কোরবানি সহিহ হবে না।

৭. শরিকের সংখ্যা বেশি হওয়া

একটি গরু, মহিষ বা উটে সর্বোচ্চ সাতজন অংশীদার হতে পারেন। এর বেশি হলে কারো কোরবানি কবুল হবে না। তবে ছাগল বা ভেড়ায় শরিক হওয়া বৈধ নয়।

৮. শরিকের টাকার উৎস হারাম হওয়া

যদি কোনো শরিক জেনে-বুঝে হারাম আয় থেকে কোরবানিতে অংশ নেয়, তাহলে অন্যদের কোরবানি কবুল হবে না। তবে যদি বাকি শরিকরা বিষয়টি না জানে, তাহলে তাদের কোরবানি শুদ্ধ থাকবে।

৯. শরিকদের মধ্যে কারো নিয়ত অশুদ্ধ হওয়া

শুধু একজন শরিকের নিয়তেও যদি গড়মিল থাকে (যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্য), তাহলে কারো কোরবানিই শুদ্ধ হবে না। তাই শরিক নির্বাচন খুব সতর্কভাবে করা উচিত।

১০. ভাগবাটোয়ারায় অনিয়ম

সবার ভাগ সমান হতে হবে। অনুমান করে বা ওজন ছাড়া ভাগ করা যাবে না। কেউ বেশি বা কম ভাগ পেলে পুরো কোরবানিই অশুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে কেউ নিজের ভাগ অন্যকে হাদিয়া দিলে সমস্যা নেই।

করণীয়

হালাল উপার্জন নিশ্চিত করুন

পশুর বয়স ও স্বাস্থ্য যাচাই করুন

শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি দিন

বিশ্বস্ত লোকজনকে শরিক করুন

ভাগাভাগিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন

কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের নাম নয়, এটি আল্লাহর জন্য আত্মত্যাগের প্রতীক। সামান্য ভুলে এই ইবাদত বাতিল হয়ে গেলে চরম ক্ষতি হবে। তাই কোরবানির পূর্বে প্রতিটি বিষয় সতর্কভাবে যাচাই করা উচিত, যেন আপনার কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ