ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: আসল খেলা খেলছে চীন

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মে ০১ ২৩:২৯:০৩
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: আসল খেলা খেলছে চীন

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটকের মর্মান্তিক মৃত্যু দিয়ে শুরু, আর এখন তা রূপ নিচ্ছে এক আঞ্চলিক সংকটে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও বাড়ছে উত্তেজনা। সীমান্তে গোলাগুলি, আকাশসীমা বন্ধ, পানি চুক্তি স্থগিত—ঘটনা একটির পর একটি ঘটেই চলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে চমকে দেওয়ার মতো এক মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা। তাঁর মতে, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পেছনে প্রকৃত খেলা খেলছে চীন।

চীনের ছায়াযুদ্ধ: ইতিহাস কি নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে?

সুব্রত সাহা বলেন, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় যখন ভারত ও পাকিস্তান সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল, ঠিক তখনই সীমান্তে চীন তার নিজের ভূখণ্ড সম্প্রসারণে ব্যস্ত ছিল। আজও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে বেইজিং।

তাঁর মতে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভিত্তি হলো ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী, তৃতীয় কোনো শক্তি এই দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু যুদ্ধ বাঁধলে সেই চুক্তির গুরুত্ব হারাবে এবং কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলে যাবে—যা চীনের কৌশলগত লাভের বড় সুযোগ হয়ে উঠবে।

ভারতের অগ্রযাত্রা থামাতেই চীনের আগ্রহ?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে চীনের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। বহু পশ্চিমা দেশ এখন চীন থেকে কারখানা সরিয়ে ভারতে আনছে। এতে ভারতের প্রভাব ও বিনিয়োগ বাড়ছে। আর ঠিক সেই কারণেই চায়না চায় ভারত যেন একটি সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ে—যাতে অর্থনীতি ও কূটনৈতিক অগ্রযাত্রা থেমে যায়।

আরও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বাংলাদেশের যুদ্ধ প্রস্তুতি!

ভারতের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানালেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় নতুন মোড়: সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

সাহা সরাসরি মন্তব্য করেছেন, “চীন চায় ভারত গোলযোগে জড়াক। যুদ্ধ শুরু হলে ভারতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তখন আবার চীন নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে পারবে।”

সীমান্তে গোলাগুলি, আকাশসীমা বন্ধ, রাফাল পিছু হটার দাবি

এদিকে দুই দেশের সীমান্তে চলছে উত্তেজনা পূর্ণ প্রস্তুতি। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে ভারতের চারটি রাফাল যুদ্ধবিমানকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই একে অপরের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। নিরাপত্তা সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে জানা গেছে, পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত বড় ধরনের সামরিক অভিযানে যেতে পারে—এমন সতর্কতা ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যদি ভারত হামলা চালায়, তবে পাকিস্তানও এর উপযুক্ত জবাব দেবে।”

এমন হুঁশিয়ারির মধ্যেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও।

দক্ষিণ এশিয়ার সামনে এক অজানা অনিশ্চয়তা

এই উত্তেজনা এখন আর শুধু ভারত ও পাকিস্তানের সীমাবদ্ধ ইস্যু নয়। বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্য, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গভীর ছায়া ফেলছে। যুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ, নেপাল, আফগানিস্তান, এমনকি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও।

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা যতই সামনে এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—এর নেপথ্যে রয়েছে তৃতীয় একটি শক্তি। চীন নিজের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে এই সংঘাতকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। ইতিহাস, বাণিজ্য এবং ভূকৌশল—সবকিছুই যেন আজ একই সুতোয় গাঁথা। আর সেই সুতো ধরে টান দিচ্ছে চীন।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ