ঢাকা, শনিবার, ৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

শুঁটকি বাজারে ধস, কেজিতে কমলো ৪৩০ টাকা

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মে ০৩ ১৫:৫২:১৮
শুঁটকি বাজারে ধস, কেজিতে কমলো ৪৩০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলনবিলের মিঠা পানির মাছ দিয়ে তৈরি শুঁটকি দেশের বাজারে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি রপ্তানিতেও ছিল সমান চাহিদাসম্পন্ন। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাজারে হঠাৎ দরপতনের কারণে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়াসহ আশপাশের শত শত শুঁটকি উৎপাদনকারী পরিবার।

উল্লাপাড়ার বড় পাঙ্গাসি গ্রামের বাসিন্দা কবির শেখ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবছর তাঁর চাতালে ৩০ থেকে ৪০ নারী শ্রমিক কাজ করলেও এবার সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ জনে।

কবির শেখ বলেন, “বাবার হাত ধরে এই ব্যবসায় নামি। এত বছরে এমন খারাপ বাজার দেখিনি। শুঁটকি তৈরি করে এবার বড় অঙ্কের লোকসান হয়েছে। যদি সংরক্ষণের জন্য একটা গুদাম থাকত, তাহলে এই ক্ষতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যেত। এখন ঋণে ডুবে চাতাল বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা করছি।”

অর্ধেকে নেমে এসেছে দাম

এক মাস আগেও রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বড় পুঁটি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছিল কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৭৮০ টাকায়। বর্তমানে সেই দাম নেমে এসেছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায়। মাঝারি ও ছোট আকৃতির শুঁটকির দামও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

এই দরপতনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাজারো মৎস্যচাষি, উৎপাদক ও শ্রমিক।

শ্রমিকদের জীবনে নেমেছে অনিশ্চয়তা

চাকশা গ্রামের জয়নব খাতুন বলেন, “স্বামী অসুস্থ। সংসারে উপার্জনের একমাত্র ভরসা আমি। দিনে ২০০ টাকা মজুরি পাই, কোনোরকমে সংসার চলে।”

একই গ্রামের ফিরুজা খাতুন ও আলেয়া বেগম বলেন, “এই চাতালে কাজ করেই আমাদের পরিবার চলে। এখন কাজ কমে যাওয়ায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।”

রাসায়নিকমুক্ত শুঁটকি, তবু নেই ন্যায্য দাম

শুঁটকি উৎপাদনকারী নুর মোহাম্মদ বলেন, “চলনবিলের মাছের স্বাদই আলাদা। এখানে তৈরি শুঁটকিতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না, শুধু লবণ দিয়েই প্রক্রিয়াজাত করা হয়। তবু বাজারে এর দাম মিলছে না।”

তিনি বলেন, “সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে বড় লোকসান গুনতে হচ্ছে।”

সীমান্ত জটিলতায় রপ্তানি বন্ধ

উল্লাপাড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, এবার প্রায় ৪০টি চাতাল চালু ছিল এবং মাছের সরবরাহও ভালো ছিল। তবে সীমান্ত জটিলতার কারণে ভারতে শুঁটকি রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাজারে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

তিনি আরও জানান, “সংরক্ষণের জন্য গুদাম স্থাপনের একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গুদাম থাকলে দরপতনের সময় শুঁটকি মজুত রেখে পরে উচ্চ দামে বাজারজাত করা যেত। এতে উৎপাদকরা ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা পেতেন।”

সমাধানে কাঠামোগত উদ্যোগ জরুরি

চলনবিল অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৮০০ বর্গমাইল, যা চারটি জেলায় বিস্তৃত। বিল ছাড়াও নদী, খাল ও ডোবা থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়।

কিন্তু মৌসুমি উৎপাদন, সংরক্ষণের অভাব এবং রপ্তানির অসুবিধার কারণে এই সম্ভাবনাময় খাত আজ টিকতে হিমশিম খাচ্ছে। সরকার যদি শুঁটকি উৎপাদন ও সংরক্ষণে কাঠামোগত সহায়তা দেয়, তবে আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে চলনবিলের অর্থনীতি।

করিম জান্নাত/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ