ঢাকা, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আর কত নারী ইজ্জত হারালে জাগ্রত হবে আমাদের মনুষ্যত্ববোধ

২০১৯ জুলাই ১৫ ২১:০৭:১০
আর কত নারী ইজ্জত হারালে জাগ্রত হবে আমাদের মনুষ্যত্ববোধ

বাসে, পথে-ঘাটে, মাঠে কোথাও আজ যেন কোনো নারী নিরাপদ নয়। বিশেষ করে ৪ মাসের একটি অবুঝ ও নিষ্পাপ শিশুরও আজ রেহাই নেই । এতে কি একটি শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না?

সম্প্রতি এরূপ অসংখ্য ঘটনাই লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে অত্যন্ত পৈশাচিক ও নির্মম ভাবে। গত ৭ই জুলাই রাজধানীর ওয়ারীতে ৭ বছরের স্কুল শিক্ষার্থী সামিয়া আফরীন নামক এক শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। চলতি মাসে নারায়ণগঞ্জের ১২ ছাত্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা, সাভারের আশুলিয়ায় ১২ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক শিশু রিকশাচালক মনোয়ার মণ্ডল কর্তৃক ধর্ষণ, গলাচিপা মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক শিশু ছাত্রী ধর্ষণসহ প্রতিদিনের রেডিও, টেলিভিশন, গণমাধ্যম ও পত্রিকায় এ সংক্রান্ত অসংখ্য সংবাদ দেখা যায়। এভাবেই কি বিঘ্ন ঘটবে একজন নারীর স্বাধীনতা?

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে, ১১৮ টি দেশের মধ্যে ধর্ষণের হার বৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ তম । শিশু ধর্ষণের বিশ্বের প্রথম ৪০টি দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে পাকিস্তান এবং দ্বিতীয় স্থানে আছে মিশর। কিন্তু ধর্ষণের মাত্রা যে ভাবে বেড়ে চলেছে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এই তালিকার অগ্রভাগে উঠে আসতে বেশি সময় নিবে না । কারণ গত ৮ জুলাই দৈনিক সমকাল পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, গত ৬ মাসে দেশে ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার, যার মধ্যে গনধর্ষণ ৫৩ জন, এবং খুন হয়২০৩ জন শিশু। মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৬৩৯টি। এছাড়া গত ৯ জুলাই প্রথম আলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬ মাসে দেশে ২৭৬ নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়, ধর্ষিত হয় ৭৩১ জন।

গণমাধ্যমে প্রচারিত এসব ঘটনা দেখলে বুক কেপে উঠে, অস্থির হয়ে উঠে মন। এসব ঘটনা দেশের মানুষের বিবেকবোধকে কি অাদৌ নাড়া দিতে পারছে না? আর কত শিশু ও নারী ধর্ষিত হলে আমাদের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হবে?

সকল দেশ বা জাতির নিজস্ব পরিচয় থাকে। সে পরিচয় সেই দেশের মানুষই গড়ে তোলে। অর্থ্যাৎ মানুষের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একটি দেশ পরিচিতি লাভ করে। সম্প্রতি যে হারে দেশে ধর্ষণ, হত্যা, অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে এতে সোনার বাংলার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পথে।দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে এর দায়ভার বর্তাবে দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উপর।

এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন সামাজিক অবক্ষয়ের পরিচয় পাওয়া যায় অন্যদিকে সার্বিক সমাজ ব্যবস্থার ব্যর্থতার পরিচয়ই তুলে ধরে। আমাদের সামাজিক পুঁজিগুলো (বিশ্বাস, মূল্যবোধ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, মমতা ইত্যাদি) যেন প্রতিনিয়ত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। একটি শিশু ও ফুলকে পবিত্রতার প্রতীক বলা হয়। কিন্তু এই পাষণ্ডরা ফুলের দিকেও যৌনতার দৃষ্টিতে তাকায়। কতটা হিংস্র প্রকৃতির হলেই কেবল এরূপ কাজ সম্ভব হতে পারে?

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হচ্ছে, বর্তমানে ধর্ষকের মধ্যে কিছু অংশ হলো স্কুল- কলেজ কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষক। যেখানে আমরা বিদ্যা বা ধর্ম চর্চা করতে যাই কিংবা নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে যাই সেখানেই যদি এরূপ অপকর্ম স্থান পায়, তাহলে কীভাবে আমরা নিজেদের সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত করবো?

একজন শিক্ষক বা একজন সচেতন মানুষের পক্ষে যদি এরূপ কাজ করা সম্ভব হয় তাহলে জাতিকে পথপ্রদর্শন করবে কারা?

ধর্ষকরা সঠিক সময়ে যথাযোগ্য শাস্তি পায় না বলেই হয়তো পরবর্তী সময়ে তারা আবারো একই কাজ করে। আর তাদের দেখে অন্যরা উৎসাহিত হয়। দেশের ধর্ষণ নামের এই ব্যাধি দূর করার একমাত্র উপায় অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া । কিন্তু আমাদের আইনের ফাঁকফোকর আর দীর্ঘ সূত্রিতার কারণেই এসব অপরাধের হয়তো বিচার হয় না । কিন্তু আমরা এর সমাধান চাই। ধর্ষণকারীকে আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান এবং সামাজিকভাবে বয়কট করার মাধ্যমেই হয়তো আমরা এর তীব্রতা কিছুটা লাঘব করতে পারব।

সর্বোপরি ধর্ষণ প্রতিরোধে সরকারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজসহ সবারই একযোগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। দেশের এই অরাজকতা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও নারী স্বাধীনতার পথে চরম অন্তরায়। একটি সুখী, সুন্দর ও সাফল্যময় দেশ গঠনে ধর্ষণকে কঠোর হস্তে দমন করা অতীব জরুরি। আসুন আমরা প্রত্যেকের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সামাজিকভাবে বয়কট করি ধর্ষকদের। আমাদের সকলের সচেতনতাই গড়ে তুলতে পারে একটি ধর্ষণ মুক্ত নির্মল সমাজ।

লেখিকা: সাজেদা আক্তার লুপিনঅনার্স: প্রথম বর্ষ

বিভাগ: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে