ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা পরিস্থিতিতে কপাল পুড়তে যাচ্ছে ৯৫ হাজার প্রবাসীদের

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ সেপ্টেম্বর ০১ ১৯:২৫:১৬
করোনা পরিস্থিতিতে কপাল পুড়তে যাচ্ছে ৯৫ হাজার প্রবাসীদের

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আটকে পড়া ও চাকুরী হারিয়ে দেশে ফেরা প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধারা রয়েছেন মহাসংকটে। দীর্ঘদিন ধরে কাজের বাইরে থাকা এসব প্রবাসী আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের ফলে চাকরি হারানোসহ নানা কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজার কর্মী দেশে ফিরেছেন। ২৬টি দেশ থেকে এই সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি ফিরেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।

মোট ২৭ হাজার ৬৫৮ জন এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ফেরত আসা শ্রমিকদের অনেকেই ছুটিতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। আবার করোনার নেতিবাচক প্রভাবে কর্মস্থল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেও অনেকে দেশে ফিরেছেন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তাদের কর্মস্থলে ডাকা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। ১৭ হাজার ৩১৭ জন এসেছেন সৌদি আরব থেকে।

কাজ না থাকায় মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন ২ হাজার ৪৭৪ জন প্রবাসী শ্রমিক। একই কারণে ইরাক থেকে ফিরেছেন ২ হাজার ১৩৬ জন। তুরস্ক থেকে ফিরেছেন ২ হাজার ৩৩৮ জন প্রবাসী। কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১ হাজার ৬০৪ জন প্রবাসী শ্রমিক ফিরেছেন সিঙ্গাপুর থেকে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন আরো অনেক প্রবাসী।

দেশে ফিরে চরম অনিশ্চয়তায় রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

করোনার আগে পরে দেশে ফেরা প্রবাসীরা পরিবার নিয়ে আর্থিকসহ নানাবিধ সমস্যায় দিন কাটাচ্ছেন। তারা বলছেন, আগামীর দিনগুলোর চরম অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন কাটছে তাদের।

দুবাই থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরেন মাইদুল ইসলাম। তখনও বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয়নি। দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটিয়ে তিন মাসের ছুটি নিয়ে এসে বিপাকে পড়েন তিনি। একমাস পরেই বাংলাদেশে করোনার হানায় বন্ধ হয়ে যায় যায় বিমান চলাচল, সঙ্গে বন্ধ হয় মাইদুলের বিদেশ যাত্রার সব পথ। তিনি জানান, ‘দুবাইয়ে যে কোম্পানিতে আমি চাকুরী করি, তারা আমাকে নিতে দুইবার আবেদন করেছে কিন্তু অ্যাপ্রুভালের জন্য হয়নি। তারা বলছে পর্যায়ক্রমে অ্যাপ্রুভাল দেবেন, কিন্তু কবে নাগাদ দেবে তার বিষয়ে কোনো কিছু বলেনি। আমাকে সর্বশেষ বলেছে গ্রিন সিগনালের জন্য আবেদন করতে আমি করার পর বলেছে ৬০ দিনের মধ্যে জানা যাবে’।

করোনার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তিন মাসের ছুটি নিয়ে আসছি, তখন একটা টার্গেট নিয়ে এসেছিলাম খরচের। কিন্তু সব টার্গেটই মিস হয়ে গেছে। পরিবার আমার উপরে নির্ভরশীল। আমার মা-বাবা, তিন ভাই আর স্ত্রী। এখন আমি নিজেই পরিবারের বোঝা হয়ে গেলাম। আমি চিন্তা করেছিলাম একটা ব্যবসা করব কিনা, তবে তাতেও তো আমার সহায়তা লাগবে। আমাদের এদিকে ইলিশের ব্যবসা ভালো চলে, কিন্তু পরিবার চালিয়ে আমার কোনো পুঁজি নেই।

ব্রুনাই থেকে মার্চে দেশে ফেরেন বরগুনার আবু হানিফ। তবে করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় এখনও যেতে পারেননি তিনি। আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বেকার বসে আছি, তাই আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এদিকে ভিসার মেয়াদও শেষ, এখন কবে ফ্লাইট চালু হবে আর কবে যেতে পারব তা অনিশ্চিত। আত্মহত্যা মহাপাপ না হলে আমার মতো হাজার প্রবাসী আত্মহত্যা করতো। তবে বিদেশে যেতে না পারলে ভাবছি গরু বা মুরগীর খামার করব। তবে সেটা নির্ভর করবে সরকারের সহযোগিতা অথবা লোন পাওয়াও উপর, কারণ আমার কোনো পুঁজি নেই।

তবে বিদেশ ফেরত অনেক প্রবাসী বলছেন, করোনা পরিস্থিতি সহসা স্বাভাবিক না হলে তারা উদ্যোক্তা হতে চান তারা। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগী ও ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার দাবি জানিয়েছেন এসব প্রবাসীরা।

উদ্যোক্তা হতে ঋণ না পাওয়ার অভিযোগ

করোনা পরিস্থিতিতে চাকরি হারিয়ে কিংবা দেশে এসে আটকে পড়া প্রবাসীদের অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রেও বাঁধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তারা বলছেন, ঋণপ্রাপ্তির জটিলতায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হচ্ছে তাদের। ব্যাংকের শর্তে সংশয়ে পড়ছেন তারা।

পর্তুগাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ফিরেছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মেহেরাজ রাজা। মার্চে যাওয়ার কথা থাকলেও ফ্লাইট বন্ধের কারণে আর যেতে পারেননি তিনি। ফলে জুলাই মাসে তার রেসিডেন্স কার্ডেও মেয়াদও শেষ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রেস্টুরেন্ট চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও জটিলতা তৈরি হয়েছে ঋণ প্রাপ্তিতে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, করোনার এমন পরিস্থিতিতে আমি চাইছিলাম বাংলাদেশেই কিছু করি। যেহেতু আমার কাছে তেমন পুঁজি নেই তাই ভাবছিলাম লোন নিয়েই শুরু করব। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যেটি কিনা আমাদের প্রবাসীদের জন্যই তারা এমন সব শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন যা দিয়ে অন্যান্য ব্যাংকেই লোন নেয়া যায়। আর তাদের একটি শর্ত হচ্ছে আগে ব্যবসা শুরু করতে হবে, এখন আমি যদি ব্যবসা শুরু করার সামর্থ্যই থাকে তাহলে লোন দিয়ে কি করব। আর তাছাড়া তাদের ঋণের সুদের পরিমাণ ১১ শতাংশ।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্‌তাব জাবিন প্রবাসমেইল-কে বলেন, প্রবাসীদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে আমাদের সকল উদ্যোগ রয়েছে। ঋণের শর্ত পূরণ ও যথাযথ ডকুমেন্ট সাবমিট করতে পারলে ঋণ পেতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতহীন ঋণ দিচ্ছি, কিন্তু তার উপরে হলে জামানত লাগবে। ঋণের জন্য যেসকল ফরমালিটিজ করা লাগে তা হলেই কিন্তু তারা ঋণ পাবে, সেখানে কোনো জটিলতা নেই।

সার্বিক বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ প্রবাসমেইল-কে বলেন, এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। তাদের জন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তা আমরা নিচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।

প্রবাসীদের ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বলছেন লোন পেতে জটিলতা হচ্ছে তারা সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের লোনের বিষয়ে সকল উদ্যোগ নেয়াই আছে। এই জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সবকিছুই করছে। যাদের এ লোন পেতে সমস্যা হচ্ছে, আগে দেখতে হবে তারা আইনের মধ্যে পড়ছেন কিনা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে