ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য: পৃথিবীর এমন ছয়টি স্থান যেখানে কখনো সূর্য অস্ত যায় না

২০২১ ডিসেম্বর ১১ ১১:৫৫:৩১
অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য: পৃথিবীর এমন ছয়টি স্থান যেখানে কখনো সূর্য অস্ত যায় না

কল্পনাকেও হার মানানো এই জায়গাগুলোতে স্থানীয় লোকেরাও দিন ও রাতের হিসেব গোলমাল করে ফেলে। ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তিরা এসব স্থানে গিয়ে এক প্রকার দিশেহারা হয়ে যান। কারণ এসব জায়গায় বেড়াতে যেয়ে তারা কখন ঘুমাবেন আর কখন জেগে উঠবেন তা নিয়ে এক প্রকার বিভান্তিতে পড়ে যান। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর এমন ছয়টি স্থান সম্পর্কে যেখানে সূর্য অস্ত যায় না।

আলাস্কামার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্য আলাস্কা। উত্তর পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত এই অঞ্চলে মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সূর্যাস্ত হয় না। দর্শনীয় হিমবাহ এবং তুষারাবৃত পর্বতবেষ্টিত দেশটি এই সময়ে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অন্যতম আদর্শ একটি স্থানে পরিণত হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকেরা আলাস্কায় এই সময় হাইকিং করেন। রাতের বেলায় সূর্যের আলোয় বরফের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে পর্যটকেরা বিস্মিত হয়ে যান। ব্যারো, ফেয়ারব্যাংকস, অ্যাংকারিজ, সেওয়ার্ড প্রভৃতি স্থানগুলোতে পর্বতচূড়ায় আরোহণ করে দৃষ্টিনন্দন নিশীথ সূর্যের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

কানাডাপৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডার বেশ কিছু জায়গা সারাবছর বরফে ঢাকা থাকে। সুমেরু বৃত্তের দুই ডিগ্রি উপরে অবস্থিত নুনাভুট ও ইনুভিকসহ এই বরফঢাকা অঞ্চলগুলোতে গ্রীষ্মকালে টানা ৫০ দিন পর্যন্ত সূর্য ২৪ ঘণ্টাই আলো দেয়। আপাতদৃষ্টিতে খুবই অস্বাভাবিক মনে হলেও দর্শনার্থীরা এই সময়টাতে কানাডার এই সব উল্লেখযোগ্য জায়গায় বেড়াতে যান। পর্বতারোহণ, উষ্ণ ঝর্ণা, বিভিন্ন ঐতিহাসিক সমাধি দর্শন ছাড়াও এই দীর্ঘ দিনের আলোতে অনেকেই পৃথিবীর উত্তর অংশের বিখ্যাত মেরুজ্যোতি বা অরোরা দেখার আশায় ছুটে যান কানাডায়।

আইসল্যান্ডইউরোপ মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ বলা হয় আইসল্যান্ডকে। বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত এই অনিন্দ্যসুন্দর দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সূর্যের আলোয় দেশটি সম্পূর্ণ আলোকিত থাকে। আক্ষরিক অর্থেই, এই পুরোটা সময় জুড়ে এখানে সূর্য ডোবে না। দিগন্তরেখার উপরে সূর্যকে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা বহাল তবিয়তে লক্ষ করা যায়। নিশীথ সূর্যকে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায় এখানকার আকুবেরি এবং বিএমসিডিতে। মোহনীয় সুমেরুজ্যোতি বা নর্দান লাইটের জন্য খ্যাতি আছে এই অঞ্চলের। এছাড়াও এই সময়টায় আইসল্যান্ডে হাইকিং, বন্যপ্রাণী ও তিমি মাছ দর্শন ও গুহায় অবস্থান করা, সাইকেল ভ্রমণ ও বিভিন্ন পার্কে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আইসল্যান্ড ভ্রমণের আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো এখানে ঘুরতে গেলে আপনাকে কোনো মশার কামড় খেতে হবে না। কারণ আইসল্যান্ডে কোনো মশা নেই।

নরওয়েউত্তর গোলার্ধের সুমেরুবৃত্তে অবস্থিত নরওয়েকে বলা হয় নিশীথ সূর্যের দেশ। মে মাস থেকে শুরু করে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত প্রায় টানা ৭৬ দিন এই অঞ্চলে সূর্য ডোবে না। এ সময় প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘণ্টা এই দেশের প্রায় সব স্থানে ঝকঝকে সূর্যের আলো দেখা যায়। বাকি সময়টাতে আলোর তেজ কমে গেলেও দিগন্তে সূর্যের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না এবং কখনোই এখানে রাতের অন্ধকার নেমে আসে না। আর এখান থেকেই নিশীথ সূর্য নামটি এসেছে। নরওয়ে এবং ইউরোপের সর্ব উত্তরে মানুষের বসবাসের স্থানটির নাম স্ভালবার্ড। এখানে এপ্রিলের ১০ তারিখ থেকে আগস্টের ২৩ তারিখ পর্যন্ত বিরতিহীন দিনের আলো দেখা যায়। স্থানীয়রা এই প্রাকৃতিক বিষয়ের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারলেও দর্শনার্থীদের প্রায়শই দীর্ঘসময় আলোতে থাকার কারণে ক্লান্তি, নিদ্রাহীনতা এবং সময় কেন্দ্রিক বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়।

সুইডেনউত্তর গোলার্ধের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেন, এই অংশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ উষ্ণ। সুইডেনে বছরে প্রায় ছয় মাস ধরে টানা সূর্যালোকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সাধারণত মে মাস থেকে আগস্টের শেষ সময় পর্যন্ত সুইডেনে মাঝরাতে সূর্য দিগন্তরেখায় অবস্থান করে। এরপর ভোর চারটার দিকে সূর্য আবারো উদিত হয়। দীর্ঘসময় দিনের আলোতে গলফ খেলা, মাছ ধরা, ট্র্যাকিং, নর্দান লাইট বা মেরুজ্যোতি দেখাসহ বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা যায়। ২১শে জুন সুইডেনে উত্তরায়নের ফলে সবচেয়ে দীর্ঘসময় সূর্য দেখা যায়। একে সামার সলিষ্টিসও বলে।

ফিনল্যান্ডহাজার হ্রদ ও দ্বীপের দেশ ফিনল্যান্ড। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশবেষ্টিত এই দেশটিতে গ্রীষ্মকালে টানা ৭৩ দিন আকাশে সূর্য দেখা যায়। দীর্ঘসময় দিনের আলো থাকায় এই সময়টাতে স্থানীয়রা প্রায় না ঘুমিয়েই দিন যাপন করে। দীর্ঘ নিদ্রাহীনতার ক্লান্তি দূর করতে শীতকালের বেশিরভাগ সময় তারা ঘুমিয়ে কাটায়। গ্রীষ্মকাল ফিনল্যান্ডকে ভিন্ন এক রূপে ধরা দেয়। নর্দান লাইট দেখার পাশাপাশি এই সময় ফিনল্যান্ডে স্কিইং করা যায়। এছাড়াও গ্লাস দিয়ে তৈরি ইগলু নামের বাড়িগুলোতে থাকার জন্য ফিনল্যান্ড বেশ বিখ্যাত। দর্শনীয় স্থান এবং মনোরম পরিবেশের জন্য টানা সূর্যালোকের এই সময়টাতে ফিনল্যান্ডে ঘুরতে আসে হাজারো মানুষ।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে