ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-লিটনদের আগ্রাসী ব্যাটিং চট্টগ্রামে

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৩ মার্চ ২৫ ২১:৫৫:২৮
সাকিব-লিটনদের আগ্রাসী ব্যাটিং চট্টগ্রামে

বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান গত কিছুদিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া ইংল্যান্ড সিরিজ থেকেই চলছে তার ব্যস্ততা। আন্তর্জাতিক ম্যাচের বিরতিতে ব্যক্তিগত কাজে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন। তারপর আয়ারল্যান্ড সিরিজে তো রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। সিলেটে সিরিজ শুরু হওয়ার পর কয়েক দফা ঢাকায় গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে সেরেছেন।

তারপরও তার মাঠের পারফরম্যান্সে কোনও অস্বস্তি দেখা যায়নি। এমনিতে অনুশীলনে খুব বেশি সিরিয়াস কখনোই থাকেন না সাকিব! তবে শনিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তাকে ভিন্ন রূপে পাওয়া গেলো। সাকিবের নেতৃত্বেই ইংলিশদের কয়দিন আগেই হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। এবারও আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ করতে উদগ্রীব সাকিবরা।

সিলেটে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ করেই শুক্রবার চট্টগ্রামে পা রাখে বাংলাদেশ দল। সাকিব অবশ্য দলের সাথে আসেননি। শুক্রবার তার ক্যানসার ফাউন্ডেশনের উদ্বোধন করেন ঢাকার একটি হোটেলে। ব্যক্তিগত কাজ শেষে শনিবার সকালের ফ্লাইটে চট্টগ্রামে আসেন সাকিব। চট্টগ্রামে নেমেই দুপুর দুইটার দিকে দুইজন নেট বোলার ও লেগ স্পিনার রিশাদকে নিয়ে সোজা চলে যান ড্রেসিংরুম প্রান্তের নেটে।

সেখানে ১৫ মিনিটের মতো ব্যাটিং করতে দেখা যায় সাকিবকে। মুখে কোনও কথা না বলে একের পর এক লং শট খেলতে থাকেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের ব্যাটিং অনুশীলনের সময় প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও বেশ কিছু পরামর্শ দিচ্ছিলেন। সেসব মন দিয়ে শুনছিলেন সাকিব। এমনটি শ্যাডো করেও দেখাচ্ছিলেন তিনি।

সাকিব ছাড়াও নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে হাথুরুসিংহকে কাজ করতে দেখা গেছে। দারুণ ছন্দে থাকলেও ইনিংসগুলোকে বড় করতে পারছেন না শান্ত। শনিবার হয়তো শিষ্যকে সেই টোটকাই দিচ্ছিলেন হাথুরুসিংহে। শান্ত বেশি কিছু সময় নেটে ব্যাটিং করেছেন স্পিনারদের বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লম্বা সময় পর জাতীয় দলে ফেরা রনি তালুকদারও অনেকক্ষণ ব্যাটিং করেছেন। ড্রেসিংরুম প্রান্তের নেট শেষ করে প্রেসবক্স প্রান্তের নেটে এসে ব্যাটিং করেছেন। শুধু ব্যাটিংয়েই সীমাবদ্ধ ছিলেন না রনি। বাউন্ডারি লাইনের সীমানায় লং ক্যাচের টানা অনুশীলন করেছেন।

তবে সবচেয়ে পরিশ্রম করতে দেখা গেছে লিটন দাসকে। সাধারণত অনুশীলনে এত সময় ব্যাটিং করতে কখনোই দেখা যায় না তাকে। আজ অনুশীলনে তাকে অন্য রূপে দেখা গেলো। শুরুতে সাকিবের পাশের নেটেই ব্যাটিংয়ে ছিলেন লিটন। পাশাপাশি দুই নেটে ব্যাট করার পর সেন্টার উইকেটে গিয়ে বড় শটের মহড়া দিয়েছেন তিনি। শুধু একবারই নয়, কয়েক দফা নেট ও সেন্টার উইকেট হয়ে ব্যাটিং অনুশীলনে সমাপ্তি টেনেছেন লিটন।

প্রেসবক্সের প্রান্তের উইকেটে নাসুমের বাজিতে জিতেছেন এই ব্যাটার। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম বোলিং করার আগে লিটনের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, ‘বলটা স্পেশাল হবে, উইকেট সামলান।’ লিটনের পাল্টা উত্তর, ‘ছক্কা’। সত্যিই লিটন মিড উইকেটের উপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকালেন। প্রেসবক্স প্রান্তে নেট শেষ করে এসে শেষ ব্যাটার হিসেবে সেন্টার উইকেটে হিটিং অনুশীলন শেষ হতেই পুরো দলের অনুশীলনে সমাপ্তি ঘটে এদিন।

লিটনের মতো শামীম হোসেনকে সিরিয়াস দেখা গেছে। সেন্টার উইকেটে লং অন, মিড অন, মিড অফ দিয়ে বড় বড় শট খেলতে দেখা গেছে তাকে। থ্রোয়ারের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিং করেছেন তিনি। এছাড়া প্রথমবার সুযোগ পাওয়া দুই ক্রিকেটার জাকের আলী অনিক ও রিশাদকে অনুশীলনে চনমনে দেখা গেছে।

নুরুল হাসান সোহানকে বাদ দিয়ে কিপার ব্যাটার হিসেবে রাখা হয়েছে জাকেরকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে প্রথমবার দলে আসা তরুণ ক্রিকেটার অনুশীলনেও ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত। নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ বড় মঞ্চে দিতেও মুখিয়ে আছেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউনকে জাকের বলেছেন, ‘সুযোগ পাওয়াটাতো বড় কথা নয়। আমাকে প্রমাণ করতে হবে আমি এই পর্যায়ে খেলার যোগ্য। আশা করি সুযোগ পেলে বিপিএলের মতো এখানে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবো।’

বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট একজন লেগ স্পিনারকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। প্রায় সবগুলো দলেই ভালো মানের লেগ স্পিনার থাকলেও বাংলাদেশ দলে সেটা নেই। অতীতে যারা সুযোগ পেয়েছেন তারা কেউই ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। আয়ারল্যান্ড সিরিজে নতুন করে সুযোগ দেওয়া হয়েছে রিশাদকে। কিন্তু শনিবার জাতীয় দলের তাঁবুতে প্রথম অনুশীলনে নেমেই ছন্দহীন রিশাদ।

নতুন আসা এই স্পিনার নেটে পেয়েছিলেন সাকিবকে। খুব একটা আঁটসাঁট বল করতে দেখা যায়নি তাকে। ফুলটস, লেগ স্টাম্পের বাইরে বল ফেলে মার খেয়েছেন অনেক। অবশ্য তার ভুলগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ধরিয়ে দিয়েছেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ।

এছাড়া পেস বোলারদের মধ্যে সবাই ছিলেন অনুশীলনে। তবে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজকে নিয়ে বাড়তি কাজ করতে দেখা গেছে এদিন। ড্রেসিংরুম প্রান্তের টেনে টানা বোলিং করে গেছেন গত কয়েক ম্যাচ ধরে সেরা ছন্দে না থাকা কাটার মাস্টারকে। এই সময় পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড পাখির চোখে পরখ করছিলেন বাঁহাতি পেসারকে।

বেশ কয়েক দফা পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে খুব ভালো বোলিং করতে পারেননি মোস্তাফিজ। আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। তার বদলে সুযোগ পাওয়া হাসান মাহমুদ দারুণ বোলিং করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিজেকে মেলে ধরতেই বাঁহাতি এই পেসারের প্রচেষ্টা।

সবমিলিয়ে শনিবারের অনুশীলনে পুরো দলকে ওতটা সিরিয়াস দেখা না গেলেও ব্যক্তিগতভাবে সাকিব-লিটন-শান্ত-মোস্তাফিজ-শামীমরা নিবেদন দিয়ে অনুশীলন করেছেন। ওয়ানডে সিরিজে আইরিশদের উড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও একই লক্ষ্য। হাবিবুল বাশার সুমন বলেছেন, ‘আমি চাইবো দলটা যে ক্রিকেটটা খেলেছে সেটাই খেলুক। ফল তো পরের কথা। যে খেলাটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে সেটাই ধরে রাখতে চাই। ভয়ডরহীন ক্রিকেট আর কী!’

এদিকে চট্টগ্রামে শনিবারের অনুশীলন বিসিবির অসহযোগিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনুশীলনের সময় সংবাদকর্মীরা খুব কাছ থেকে ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু বিসিবি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে! শুধু তাই নয়, নিয়ম অনুযায়ী অনুশীলনের দিনগুলোতে দলের একজন প্রতিনিধি এসে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন। কিন্তু শনিবার অনুশীলনের পর টিম ম্যানেজমেন্ট কাউকেই পাঠায়নি। গণমাধ্যম যেন হয়ে উঠছে বিসিবির বাধা!

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে