ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জেনেনিন ডায়রিয়ায় আমাদের করণীয় কি

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৩ এপ্রিল ১১ ১৫:৫৫:২৩
জেনেনিন ডায়রিয়ায় আমাদের করণীয় কি

ডাক্তার সাহেব আনাসের সমস্যাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনে আনাসের শারীরিক পরীক্ষা করে আনাসকে ও আর টি কর্নারে নিয়ে ওআরএস খাওয়ানোর পরামর্শ দিলেন। চার ঘণ্টা পর আনাসকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছুটি দেওয়া হলো। এখন আনাসের মায়ের মাঝে নেই সেই উদ্যোগ উৎকণ্ঠা, হাসিমুখে ফিরে যাচ্ছে বাসায়।

সত্যি বলতে বাচ্চার অসুস্থ হলে পরিবারের সব সদস্যরা বিশেষভাবে মায়েরা মারাত্মকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া শিশুদের একটি সাধারণ রোগ বছরের সব সময় কম বেশি ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার প্রাদুর্ভাব দেখা দেখা যায়।

ও আর এস আবিষ্কারের আগে ডায়রিয়া হলে পানি শূন্যতার কারণে গ্রামকে গ্রাম মানুষ মারা যেত। এখন আর সে অবস্থা নেই। ওরস্যালাইন এবং কলেরা স্যালাইনের কল্যাণে মানুষ ডায়রিয়া এবং পানি শূন্যতাকে জয় করেছে। এরপরেও অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে এখনো ডায়রিয়া বা ডায়রিয়াজনিত সমস্যায় অনেক শিশুর মৃত্যুবরণ করে থাকে।

হু বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় তিনবার পাতলা পায়খানা হলে বা একবারো যদি অনেক বেশি পরিমাণ পাতলা পায়খানা হয় তাকে ডায়রিয়া বলে।

ডায়রিয়ার কারণ: ডায়রিয়া নানা কারণে হয়ে থাকে তবে প্রধান কারণ সমুহ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা প্রোটোজোয়া কর্তৃক ইনফেকশন হওয়া।

লক্ষণ সমূহ: বারবার পাতলা পায়খানা হওয়া। শুরুর দিকে বমি হওয়া। এছাড়া ডিহাইড্রেসন বা পানি শূন্যতার কারণে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। ডায়রিয়া হলে মূল সমস্যাই হলো পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেসন।

পানি শূন্যতার লক্ষণগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় মৃদুপানি শূন্যতা, স্বল্প পানি শূন্যতা, এবং তীব্র পানি শূন্যতা।

মৃদু পানি শূন্যতা: এখানে পানি শূন্যতার তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না বাচ্চা স্বাভাবিক থাকে। শুধু বারবার পাতলা পায়খানা হয়।

স্বল্প পানি শূন্যতা এখানে বাচ্চা অস্থির থাকে, বারবার পানি খেতে চায়, চোখ বসে যায় এবং চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়।

তীব্র পানি শূন্যতা: এখানে বাচ্চা নেতিয়ে পড়ে, পানি খাওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, চোখ অনেক বেশি বসে যায় এবং চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা খুব বেশি কমে যায়।

চিকিৎসা

ডায়রিয়া চিকিৎসার মূলত দুইটি অংশ

১) যে কারণে ডায়রিয়া হয়েছে সেটার চিকিৎসা করা। ২) পানি শূন্যতা প্রতিরোধ করা বা পানি শূন্যতার চিকিৎসা করা।

ডায়রিয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাস ঘটিত। তাই শুধু পানি শূন্যতার চিকিৎসা করলে শিশুরা সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াল ডায়রিয়া যেমন কলেরা এসব ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়। মৃদু ও স্বল্প পানি শূন্যতার ক্ষেত্রে মূল চিকিৎসা হলো বারবার ওরস্যালাইন খাওয়ানো।

আর তীব্র পানি শূন্যতা হলে বাচ্চাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ আইভী বা শিরা পথে কলেরা স্যালাইন দেওয়া।

বাচ্চার ডায়রিয়া হলে মায়েদের করণীয়

ডায়রিয়া শুরু হলে পানি শূন্যতার লক্ষণ আসুক আর না আসুক সাথে সাথে বুকের দুধ ও স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি শিশুদের ওর স্যালাইন খাওয়াতে শুরু করতে হবে।

তবে মনে রাখতে হবে ওরস্যালাইন বানানোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে যে ওরস্যালাইন প্যাকেটগুলো পাওয়া যায় তা অবশ্যই ৫০০ মিলি পানির সঙ্গে মিশাতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় বাজারে যে ৫০০ এমএল পানির বোতলগুলো পাওয়া যায় এর একটি বোতলে এক প্যাকেট ওরস্যালাইন মিশিয়ে সেখান থেকে অল্প অল্প করে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে।

কোন অবস্থাতেই ওরস্যালাইন এর প্যাকেট থেকে অল্প ওরস্যালাইন নিয়ে অল্প পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে না। এক্ষেত্রে মিশ্রণে লবণ এবং পানির পরিমাণ সঠিক না হওয়ার কারণে শিশুরা মারাত্মক রকমের জটিলতার শিকার হতে পারে।

ওরস্যালাইন খাওয়ানোর পাশাপাশি বাচ্চাদের পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা এবং যারা বাচ্চাদের দেখাশুনার দায়িত্বে থাকেন তাদেরও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

বারবার ওর স্যালাইন খাওয়ানোর পরও বাচ্চার অবস্থার উন্নতি না হলে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে অথবা একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

সঠিকভাবে ওরস্যালাইন খাওয়ানো সহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শিশুরা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়।

ডায়রিয়া চলাকালীন সময় ওরস্যালাইন খাওয়ানোসহ অন্যান্য ব্যবস্থা না নিলে শিশুরা ডায়রিয়া চলাকালীন অথবা ডায়রিয়া পরবর্তী সময়ে নানাবিধ জটিলতার শিকার হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তাই আসুন ডায়রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করি এবং ডায়েরিয়া হওয়ার সাথে সাথে শিশুদের সঠিকভাবে ওরস্যালাইন খাওয়ানোর পাশাপাশি শিশুদের আলাদা যত্ন নেই। একটি সুস্থ শিশু একটি দেশের ভবিষ্যৎ।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে