ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

আইপিএলের আগামী আসরে দলপতি পরিবর্তন করবে এই ৫ ফ্র্যাঞ্চাইজি

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৩ জুন ০৪ ১২:৩১:৪২
আইপিএলের আগামী আসরে দলপতি পরিবর্তন করবে এই ৫ ফ্র্যাঞ্চাইজি

বরং আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে টাইটান্সদের হারিয়ে নয়া রেকর্ড গড়লো চেন্নাই। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সাথে টুর্নামেন্টের সফলতম দলের তকমা ভাগাভাগি করে নিলো তারা। পাশাপাশি রেকর্ড বইতে নাম তুললেন মহেন্দ্র সিং ধোনিও। রোহিত শর্মার পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে পাঁচ বার আইপিএল ট্রফি জিতলেন তিনি।

এবারের মরসুমে ব্যাটিং ও বোলিং পারফর্ম্যান্সের পাশাপাশি দলগুলির চালিকাশক্তি হিসেবে নজর কেড়ে নিয়েছে ধোনি, হার্দিক, রোহিত শর্মাদের অধিনায়কত্ব। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন অধিনায়কের ক্রমাগত ভুলভ্রান্তিও নজর এড়ায় নি দর্শকদের। নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তে দলকে ডুবিয়েছেন যে পাঁচ অধিনায়ক, তাঁদের হদিশ রইলো এই প্রতিবেদনে।

কলকাতা নাইট রাইডার্স-

নেতৃত্ব প্রশ্নে এবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই পিঠের ‘বালজিং ডিস্কের’ সমস্যায় ভুগছিলেন শ্রেয়স আইয়ার। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিলো যে প্রথম কিছু ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি। ফলে আইয়ারের বিকল্প হিসেবে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় নীতিশ রানাকে। পরে শ্রেয়সের পিঠের সমস্যা না কমায় অস্ত্রোপচারের পথে হাঁটেন তিনি।

ফলে ছিটকে যান গোটা টুর্নামেন্ট থেকেই। পুরো আইপিএলেই কলকাতার নেতৃত্বভার চাপে নীতিশের কাঁধে। মুম্বইয়ের শ্রেয়সের বদলি হিসেবে দিল্লীর নীতিশ চূড়ান্ত ব্যর্থ। টিম কম্বিনেশন থেকে ফিল্ডার সাজানো বা স্ট্র্যাটেজি নির্মাণ, নাইটদের খেলায় এবার পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। ৮টি আলাদা আলাদা ওপেনিং জুটি ব্যবহার করেছে তারা। কোনো নির্দিষ্ট বোলিং ইউনিটও ছিলো না তাদের। দলে বারবার পরিবর্তন নাইট রাইডার্সের খেলার মান নীচের দিকে নামিয়ে দেয়।

অধিনায়ক হিসেবে বেশ কিছু সিদ্ধান্তে ভুলভ্রান্তি চোখে পড়েছে রানার। এর মধ্যে ঘরের মাঠে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে আচমকা নিজে প্রথম ওভারে বল করতে আসার সিদ্ধান্ত বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। পার্ট-টাইম স্পিনার রানার বলে চড়াও হন যশস্বী জয়সওয়াল, সেই ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়ার দোরগোড়ায় হাজির হয় নাইটরা।

এছাড়াও মাঠে বেশ কয়েকবার মেজাজ হারিয়ে দলকে বিপাকে ফেলেন নীতিশ। ২০২৩ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স শেষ করেছেন সাত নম্বরে। ব্যর্থতার অন্যতম কারণে অধিনায়কত্বের সমস্যা। জয়ের সরণিতে ফিরতে হলে আগামী মরসুমে নেতা বদলাতেই হবে কলকাতাকে। শ্রেয়সের হাতে ফের দায়িত্ব তুলে দেওয়াই হতে পারে সাফল্যের চাবিকাঠি।

লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস-

অধিনায়ক নিয়ে সমস্যায় পড়তে দেখা গিয়েছে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসকেও। মরসুমের শুরুতে তাদের হয়ে টস করতে যাওয়ার কথা ছিলো কে এল রাহুলের। কিন্তু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে একানা স্টেডিয়ামে ম্যাচ চলাকালীন চোট পান তিনি। বেঙ্গালুরুর ফাফ দু প্লেসির মারা বল’কে তাড়া করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের কাছে পেশীতে টান অনুভব করেন তিনি। ছিটকে যান গোটা টুর্নামেন্ট থেকেই।

রাহুলের বিকল্প হিসেবে ক্রুণাল পান্ডিয়ার হাতে অধিনায়কত্বের ব্যাটন তুলে দেয় লক্ষ্ণৌ ফ্র্যাঞ্চাইজি। নেতা হিসেবে ভালোয় মন্দয় মিশিয়ে মরসুম কেটেছে ক্রুণালের। প্রথম কয়েকটি ম্যাচে বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি তিনি। তবে লীগ পর্বের শেষ দুই ম্যাচে লক্ষ্ণৌ জেতায় তারা জায়গা করে নেয় প্লে-অফে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে এলিমিনেটর ম্যাচে ক্রুণালের নেতৃত্ব কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়।

নক-আউট ম্যাচে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে গিয়েই দলকে প্রায় ডুবিয়ে বসেন ক্রুণাল। পাওয়ার প্লে’তে বিশেষ সাফল্য না পেলেও ৩ ওভার বল করেন তিনি। শুরুতে রোহিত ও ঈশান কিষণের উইকেট হারালেও ক্রুণালকে পালটা আক্রমণ করেই মুম্বইকে ম্যাচে ফেরান ক্যামেরন গ্রিন। ৪ ওভারে তিনি খরচ করেন ৩৮ রান। কোনো উইকেট পান নি। ক্যুইন্টন ডি কক’কে বাইরে রাখাও এলিমিনেটরে লক্ষ্ণৌর বিপক্ষে যায়।

ক্রুণাল নিজে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১১ বল খেলে মাত্র ৮ রান করেন। তাঁর মন্থর ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’তে সমস্যায় ফেলে লক্ষ্ণৌকে। আগামী মরসুমে ক্রুণাল্কে নেতার দায়িত্ব থেকে সরাতে বাধ্য হবে লক্ষ্ণৌ। সম্ভবত ফিরবেন রাহুল। না হলে ডি কক বা পুরানকেও অধিনায়ক করতে পারে সুপারজায়ান্টস।

দিল্লী ক্যাপিটালস-

নেতৃত্ব প্রশ্নে চলতি বছর চাপে পড়তে হয়েছে দিল্লী ক্যাপিটালসকেও। দশ দলের লীগে তারা শেষ করেছে নবম স্থানে। এই বছর তাদের অধিনায়ক ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় বছরের গোড়াতেই জানা গিয়েছিলো যে ঋষভ পন্থ’কে দিল্লী গোটা মরসুমের জন্যই পাচ্ছে না।

ফলে বিকল্প অধিনায়ক হিসেবে ওয়ার্নারকে বেছে ছিলেন কর্মকর্তারা। নেতা হিসেবে ওয়ার্নারের পারফর্ম্যান্স দেখে মনে হলো যে পূর্বের ক্যারিশ্মা হারিয়েছেন তিনি। এর আগে আগ্রাসী অধিনায়ক হিসেবে ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি।

কিন্তু এবার দিল্লীর খেলায় আগ্রসনের অভাব বেশ চোখে পড়লো। বিশেষ করে ব্যাটিং লাইন আপ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট হলো ওয়ার্নারের পরিকল্পনার অভাব। অজি বাঁ-হাতি ওপেনারের পারফর্ম্যান্সও থাকবে আতসকাঁচের তলায়। মরসুমের গোড়ার দিকে তিনি রান পেলেও স্ট্রাইক রেট ১১০-১১৫’র ভেতরে ঘোরাফেরা করায় দলকে সমস্যায় পড়তে হয়। ব্যর্থতা ভুলতে আগামী মরসুমে ফের ঋষভকেই অধিনায়ক করতে চলেছে দিল্লী।

পাঞ্জাব কিংস-

অধিনায়ক হিসেবে পাঞ্জাব কিংস এই বছর বেছে নিয়েছিলো শিখর ধাওয়ানকে। মরসুমের শুরুটা জয় দিয়ে করলেও এরপর থেকে ক্রমাগত নীচের দিকে নামতে থাকে পাঞ্জাবের পারফর্ম্যান্স। অধিনায়ক ধাওয়ানও শুরুর ম্যাচগুলিতে ব্যাট হাতে ভালো খেললেও পরের দিকে ভুগতে থাকেন রান খরায়।

একই সাথে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সীমাবদ্ধতাও বারবার সামনে চলে আসতে থাকে। মিডল অর্ডারে সেরা বিকল্প নির্ধারণ মরসুমের শেষ ম্যাচ অবধি করে উঠতে পারে নি পাঞ্জাব। কখনও ম্যাথু শর্ট, কখনও বা ভানুকা রাজাপক্ষেকে খেলানো হলো তিন বা চার নম্বর পজিশনে।

জিতেশ শর্মা, শাহরুখ খানকেও ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারেন নি ধাওয়ান। তাঁর অধিনায়কত্ব অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক মনে হয়েছে। বোলিং বিভাগে পাঞ্জাব শিবিরে কাগিসো রাবাডার মত অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁকে যথেষ্ঠ ব্যবহার করেন নি ধাওয়ান। শিখরের বয়স আগামী বছর দাঁড়াবে ৩৮। সবদিক চিন্তা করেই নেতার দায়িত্ব থেকে তাঁকে ছেঁটে ফেলতে পারেন প্রীতি জিন্টারা। পরিবর্তে অধিনায়ক করা হতে পারে স্যাম কারানকে। ইংল্যান্ডের তরুণ অলরাউন্ডার চলতি মরসুমে বেশ কয়েকটি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে নজর কেড়েছেন।

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ-

তালিকায় থাকবে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের নামও। কেন উইলিয়ানসনকে বাতিল করে এইডেন মার্করামকে নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলো সানরাইজার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার টি-২০ লীগ SA20’তে সানরাইজার্স ইস্টার্ন কেপ’কে চ্যাম্পিয়ন করার পুরষ্কার পেয়েছিলেন মার্করাম। কিন্তু নেতা হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে চূড়ান্ত ব্যর্থ তিনি। ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করতে সমস্যায় পড়তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। নাইট রাইডার্সের মতই বেশ কয়েকটি ওপেনিং জুটি ব্যবহার করে সানরাইজার্স।

দলে বাঁধুনির অভাব তাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি বোলিং পরিবর্তনেও সমস্যা দেখা গেছে মার্করামের নেতৃত্বে। দলের ওপর মার্করামের যে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই তা বোঝা গিয়েছে উমরান মালিকের ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য থেকে। উমরান খেলছেন না কেনো? প্রশ্নের উত্তরে। “আমি জানি না” বলা ছাড়া উপায় ছিলো না মার্করামের। এই বছর দশম স্থানে শেষ করেছে সানরাইজার্স। টানা ব্যর্থতার পর সাফল্যের বৃত্তে প্রবেশ করতে নেতা বদল ছাড়া সম্ভবত উপায় নেই ‘অরেঞ্জ আর্মি’র। আগামী মরসুমে নেতা করা হতে পারে হেনরিখ ক্লাসেনকে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে