ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

আশা জাগিয়ে তীরে এসে হারল বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৩ ডিসেম্বর ০৯ ১৫:৫৩:৪৫
আশা জাগিয়ে তীরে এসে হারল বাংলাদেশ

৬৯ রানে ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন। মিরপুর তখন হাজার হাজার দর্শকের কোলাহল দখল করে। কিন্তু সেখান থেকে নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেন গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনার। এই ফিলিপসের ওপর ভর করেই প্রথম ইনিংসে লিড নেয় কিউইরা। ঢাকা টেস্টের শেষ মুহুর্তে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ফিলিপস।ব্যাঙ্কে ডুব দেওয়ার মতো ম্যাচ আবারও দেখল টাইগার ক্রিকেট ভক্তরা।

বাংলাদেশের স্পিনাররা একবার নিউজিল্যান্ডের জন্য ১৩৭ রানে জেতা কঠিন করে তুলেছিল। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও সপ্তম উইকেটে গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনারের ৭০ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে জয় এনে দেয়।

অথচ একটা সময় এই সাধারণ টার্গেটই যেন ছিল নিউজিল্যান্ডের ছিল বিশাল এক পাহাড়। ৫ রানেই ডেভন কনওয়ের উইকেটের পতন। ৩৩ রানের মাথায় কেইন উইলিয়ামসন আর হেনরি নিকোলসের ফিরে যাওয়া নিউজিল্যান্ডের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছিল। এরপর টম ব্লান্ডেল-টম ল্যাথামদের উইকেট ফিরিয়ে জয়ের কক্ষপথেই ছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু গ্লেন ফিলিপস আর মিচেল স্যান্টনার খেলেছেন কার্যকরী ইনিংস। ফিলিপস চলতি সিরিজেরই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তার ব্যাটেই ভর করে জয়ের দিকে যেতে পারে নিউজিল্যান্ড। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন স্যান্টনার। দুজন মিলে ৭৭ বলে করেছেন ৭০ রান। তাতেই মিরপুর টেস্টে জয়ের স্বাদ পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

সকাল থেকেই মিরপুরে ব্যাপক আকারে টার্ন পেয়েছিলেন স্পিনাররা। এজাজ প্যাটেল আর মিচেল স্যান্টনার দাঁড়াতেই দিলেন না বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে। এজাজের ৬ উইকেটের সুবাদে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছে মাত্র ১৪৪ রানে। আর কিউইদের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ১৩৭।

সংখ্যার দিক থেকে মামুলি মনে হলেও কন্ডিশন বিবেচনায় এটি খানিক চ্যালেঞ্জিংই বটে। স্পিনিং পিচের পূর্ণ ফায়দাই শুরু থেকেই নিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত ক্যাচ মিস আর কিউই ব্যাটারদের দৃঢ়তায় জয় পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের।

ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশের দরকার ছিল দারুণ কিছুর। সেটাই এনে দিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম ওভার থেকেই কনওয়েকে ভুগিয়েছিলেন নিজের দুর্দান্ত ইনসুইং দিয়ে। লাঞ্চের পরপরই সেই ইনসুইং দিয়েই কনওয়ের উইকেট তুলে নেন শরিফুল। নিচু হয়ে আসা বলটায় খেই হারান এই ওপেনার। বাংলাদেশ পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত উইকেট।

কেইন উইলিয়ামসন এর আগেও বহুবারই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন। ঢাকা টেস্টের এই ইনিংসেও তাকে নিয়েই ছিল দুশ্চিন্তা। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার দেখেশুনে বেশকিছু বাউন্ডারিও তুলে নিয়েছিলেন। অবশ্য তাকে বাড়তে দেননি তাইজুল। এগিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন, তবে তাইজুলের বাড়তি সুইং ব্যাট ফাঁকি দিয়ে চলে যায় উইকেটেরক্ষক সোহানের কারছে। স্ট্যাম্পিংয়ে শেষ হয় উইলিয়ামসনের ইনিংস।

হেনরি নিকোলস ফিরেছেন মিরাজের স্পিনে। মাপা এক বলে লেগবিফোরের শিকার হন এই ব্যাটার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। অন্যপাশে তখনও টিকে ছিলেন টম ল্যাথাম। দেখেশুনেই খেলছিলেন তিনি। মিরাজের বলে অবশ্য ব্যাটে বলে ঠিকঠাক হয়নি। দারুণ সুইংয়ের সুবাদে আউটসাইড এজড বল পরিণত হয় নাজমুল হোসান শান্তর জন্য। একইরকম উইকেটের শিকার টম ব্লান্ডেলও। তাইজুলের বলে উইকেটের পেছনে সোহানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি।

নিউজিল্যান্ড শিবিরে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিয়েছেন তাইজুল। ফর্মে থাকা ড্যারিল মিচেলকে শান্তর ক্যাচে পরিণত করেছেন তিনি। শুরুতে আম্পায়ার নাকচ করলেও রিভিউতে ঠিকই কাঙ্ক্ষিত উইকেট পেয়ে যায় টাইগাররা।

এরপরের গল্পটা নিছকই হতাশার। বাংলাদেশ একের পর এক দারুণ ডেলিভারি দিয়েছে। কিউই ব্যাটারদের চাপেও রেখেছিল ঠিকঠাক। কিন্তু উইকেট ছিল অধরা। বাংলাদেশকে যেন সুযোগই দেননি ফিলিপস আর স্যান্টনার। দুই একবার সুযোগ এলেও সেটায় খুব বেশি কার্যকর কিছু করে দেখানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ম্যাচটা হারতে হয়েছে সেই চার উইকেটের ব্যবধানেই।

এর আগে দিনের শুরুতে ৩৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার মুমিনুল আর জাকির মিলে যোগ করেন আরও ৩৩ রান। এরপরেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে শুরু করে টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত জাকিরের ফিফটির সুবাদে বাংলাদেশ থেমেছে ১৪৪ রানে। নিউজিল্যান্ডের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ১৩৭। সেটা টপকাতে কাঠখড় পোড়াতে হলেও অসম্ভব কিছু ছিল না কিউইদের জন্য।

ঢাকা টেস্টের শুরুতে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমদিনেই অবশ্য গুটিয়ে যেতে হয়েছে টাইগারদের। মুশফিকুর রহিমের ৩৫ রানই ছিল টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। রান এসেছিল ১৭২। জবাবে নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে গ্লেন ফিলিপসের সুবাদে রান তোলে ১৮০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ১৪৪।

মাঝে টেস্টের দ্বিতীয় দিন পণ্ড হয়েছিল বৃষ্টিতে। আর তৃতীয়দিনে খেলা আগেভাগে থেমেছে আলোকস্বল্পতার কারণে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের এবারের টেস্ট ছিল টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৭ম সর্বনিম্ন স্কোর।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে