ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুলতান মনসুরের জয়ের নেপথ্যে

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ জানুয়ারি ০১ ১২:১৫:৩৬
সুলতান মনসুরের জয়ের নেপথ্যে

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ৭৯ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিটতটম প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোটের প্রার্থী বিকল্পধারা বাংলাদেশের এম এম শাহীন পেয়েছেন ৭৭ হাজার ১৭০ ভোট।

হামলা-মামলায় কোনঠাসা হয়ে প্রচারের শেষ তিনদিন মাঠেই নামতে পারেননি সুলতান মনসুরের কর্মীরা। কিন্তু ভোটের দিন নিরব ব্যালট বিপ্লবে জয়ী হয়ে আলোচনার তুঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপি। এক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যেখানে দাবি করে আসছেন সারাদেশে ভোট ডাকাতি হয়েছে সেখানে এই আসনে তার জয় আলোচনায় জন্ম দিয়েছে। তার জয়ের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-

মামলা-হামলা : প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল কিন্তু নির্বাচনী মাঠে প্রচারে নেমে প্রতিকূল অবস্থায় পরেন সুলতান মনসুর। বিভিন্ন ইউনিয়নে রাতের আঁধারে একের পর এক নৌকার অফিস ভাঙার অভিযোগে একেকটি মামলায় শত শত আসামি করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াতে হয় সুলতান সমর্থকদের। নৌকার সর্মথকদের দ্বারা সুলতান মনসুরের জনসভার প্যান্ডেল ভাঙচুর এবং উঠান বৈঠকেও পুলিশ লাটিচার্জ করে। দিনে দিনে গণসংযোগে কর্মীশূন্য হতে থাকেন তিনি।

অনেক সাধারণ মানুষ সুলতান মনসুরকে সমর্থন করে হয়রানির শিকার হন। ৫শ থেকে ৬শ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আটক হন পুলিশের হাতে। এই হামলা-মামলা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। তাদের ক্ষোভ জমে নৌকার প্রার্থীর প্রতি। এই হামলা মামলা এবং হয়রানির জন্য সাধারণ জনগণ এবং বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রচার করে এসবের নেপথ্যে এম এম শাহীন। তারা ভোটারদের কাছে প্রচার করতে থাকে একমাস আগেও এমএম শাহীন যখন বিএনপিতে ছিলেন আমরা তার কাছের মানুষ ছিলাম, তার জন্য দিনরাত কাজ করেছি কিন্তু ক্ষমতার জন্য তিনি আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছেন। এই হামলা এবং মামলা সুলতানের জন্য আর্শীবাদ হয়ে আসে।

প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর ভূমিকা : মৌলভীবাজার-২ আসনে ভোটাররা ভোট দেন প্রতীক নয় প্রার্থী দেখে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফলের হিসাব তাই বলছে। ২০০১ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও এখানে জয়ী হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী । সুলতান মনসুর এবং নৌকার প্রার্থী এম এম শাহীন দুইজনই এই আসনে ব্যাপক জনপ্রিয় । তবে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে সুলতান মনসুরের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এম এম শাহীনেরও এই আসনে নিজস্ব যে ইমেজ এবং ভোট ব্যাংক ছিল তাতে তাদের সিংহভাগ ছিলেন বিএনপিপন্থী। তফসিল ঘোষণার কিছু দিন আগেও এম এম শাহীন ছিলেন বিএনপির কান্ডারী, বিএনপি থেকে এমপি প্রার্থী হিসেবে ছিলেন আলোচনায় কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন পাওয়ার নিশ্চয়তা না পেয়ে তার দল বদল করে বিকল্পধারায় যোগ দেয়া মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি এবং সাধারণ জনগণ।

এক ভোটে তিন এমপি : ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সুলতান মনসুর মনোনয়ন বঞ্চিত হন, মহাজাট এই আসন উন্মুক্ত করে দিলে এখানে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা নিয়ে আতাউর রহমান শামিম এবং লাঙ্গল নিয়ে জাতীয় পার্টির নবাব আলী আব্বাস মহাজোটের হয়ে লড়েন। সুলতাস মনসুর মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে মহাজোটের লাঙ্গলের পক্ষে মাঠে নামেন। নবাব আলী আব্বাস এবং সুলতান মনসুর এক সঙ্গে প্রতিটি জনসংযোগ এবং জনসভায় বক্তব্য রেখে লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চান ‘এক ভোটে দুই এমপি’ স্লোগানে। সুলতানের পাশাপাশি নবাব আলী আব্বাসের ব্যক্তিগত ভোট ব্যাংক রয়েছে এই আসনে। সে নির্বাচনে সুলতান-নবাবের ‘এক ভোটে দুই এমপি’ প্রচারের বিপরীতে মাত্র ২ হাজার ভোট পায় নৌকা এবং প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন নবাব আলী আব্বাস। সে নির্বাচনে এখানে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নবাব আলী আব্বাস, আবেদ রাজা , সুলতান মনসুর একসাথে প্রচারে নামেন সুলতানের ধানের শীষের পক্ষে। সুলতান-নবাব-রাজা একসাথে ভোটের মাঠে প্রচার করেন ‘এক ভোটে তিন এমপি’। গণসংযোগে, জনসভায় তারা প্রচার করেন সুলতান মনসুর জয়ী হলে আমরা তিনজনকেই এমপি হিসেবে আপনাদের সেবায় কাছে পাবেন। তিন নেতার ঐক্য সুলতানের জয়কে সহজ করে।

উন্নয়ন : সুলতান মনসুর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এমপি থাকা অবস্থায় কুলাউড়া উপজেলায় উন্নয়নের বিপ্লব ঘটান। যা সাধারণ মানুষের কাছে এখনো দৃশ্যমান। নৌকার প্রাথী এম এম শাহীন বিএনপির বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র এমপি ছিলেন এই আসনে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। তার সময়েও এখানে উন্নয়ন হয়েছে তবে সুলতান মনসুরের উন্নয়ন ছিল ব্যাপক। সুলতান সেই সময়ে ৫৭০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের নিরব সমর্থন : প্রকাশ্যে পদধারী আওয়ামী লীগের নেতারা দিনের বেলায় এম এম শাহীনের পক্ষে থাকলে তারা সুলতান প্রীতি ছাড়তে পারেননি। দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে এম এম শাহীনের পক্ষে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিলেও অনেকেই নিরবে কাজ করেছেন সুলতান মনসুরের পক্ষে। পদ-পদবীহীন সাবেক নেতাদের অনেকেই প্রকাশ্যে সুলতানের পক্ষে মাঠে নামেন। কিন্তু যারা পদধারী বা আগামীতে দলের পদের প্রতাশী তারা গোপনে কাজ করেছেন সুলতান মনসুরের পক্ষে।

প্রকাশ্যে নৌকার লিফলেট বিলি করেছেন আবার ভোটারদের কানে কানে সুলতানের পক্ষে ভোট চেয়েছেন অনেক নৌকার কর্মী।

এ বিষয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, জনগণের প্রতি আমার আস্থা ছিল, জনগণ সেই আস্থা রেখেছে। প্রমাণ হয়েছে জনগণ ক্ষমতার উৎস।

তিনি বলেন, ভোটের আগের রাত থেকে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছে , যদি জালিয়াতি না হত তাহলে আমি ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হতাম। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার জয় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে জনগণ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত ভোট কেন্দ্র পাহারা দিয়েছে ।

ঐক্যফ্রন্ট এ নির্বাচন বর্জন করেছে, আপনি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতান মনসুর বলেন, পরশু ঢাকা গিয়ে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করব। এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে এখনই কিছুই বলতে পারব না। সুত্রঃ জাগো নিউজ২৪

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে