বিচারপতিদের কথায় হাসিনার পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ালেন আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিকে পেশাদারিত্বের শপথ, অন্যদিকে ব্যক্তিগত মতের ছায়া। শেষ পর্যন্ত ফেসবুক পোস্টই ছাপ ফেলল পেশার ভারে। আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আর দাঁড়াচ্ছেন না রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল গণি টিটু। আদালত বলছে, "ন্যায়বিচারের জন্য কণ্ঠস্বর শুধু সৎ হলেই হয় না, নিরপেক্ষও হতে হয়।"

বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় যখন শুনানি শুরু হয়, তখন সবকিছুই ছিল যেন প্রতিদিনকার মতো স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগেনি। আদালতের প্রশ্ন ছিল সরাসরি: “আপনি কি শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে এখনো এই মামলা পরিচালনা করতে চান?”

আমিনুল গণি দৃঢ়ভাবে বললেন, “আমি প্রস্তুত। প্রসিকিউশনের পর আমি যুক্তি উপস্থাপন করতে চাই।”

কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তখন জানাল, তারা আইনজীবীর অতীত কিছু ‘নেতিবাচক তথ্য’ পেয়েছেন। ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আমিনুল গণি তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন—যেখানে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি করেছিলেন। সেই পোস্ট এখন তার পেশাদার ভূমিকার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিচারপতিরা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “আপনি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একসময় কঠিন মত প্রকাশ করেছেন। সে অবস্থায় আপনি কি আদৌ তাকে নিরপেক্ষভাবে রক্ষা করতে পারবেন? আমরা সন্দিহান।”

অ্যাডভোকেট আমিনুল গণি তখনও নিজেকে একজন সৎ ও দায়িত্বশীল আইনজীবী হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। বলেন, “আমাকে প্রমাণ করার সুযোগ দিন।”

কিন্তু আদালতের ভাষ্য আরও দৃঢ়: “নৈতিকতার জায়গা থেকে এই মামলায় আপনার থাকা উচিত নয়। ভবিষ্যতে আপনি আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজে আসবেন। কিন্তু এই নয়।”

সবশেষে নিজেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আবেদন করেন আমিনুল গণি, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করে। তার জায়গায় নিয়োগ পান আওয়ামী ঘরানার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমির হোসেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সহঅভিযুক্ত শাকিল আকন্দ বুলবুলের পক্ষে আমিনুল গণিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। তবে নিয়োগের পরপরই আইনি ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়—একজন ব্যক্তি যিনি অতীতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন, তিনি কীভাবে তার রক্ষাকারী হতে পারেন?

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো—সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্ট, কখনো কখনো বদলে দিতে পারে পুরো পেশাজীবনের ধারা।

মো: রাজিব আলী/