খাদ্য খাতে ডিভিডেন্ডের খরা: ৫ কোম্পানির শূন্য লভ্যাংশ

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক শিল্প গোষ্ঠীর বর্তমান চিত্র মিশ্র। সমাপ্ত ৩০ জুন, ২০২৫ অর্থবছর শেষে এই খাতের মোট ২১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ পর্যন্ত ১১টি তাদের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণাগুলোর মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ডিএসই প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই বছর যেসব কোম্পানি ‘নো ডিভিডেন্ড’ প্রদান করছে সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই গত বছরের তুলনায় আর্থিক ক্ষতির মুখে আরও বেশি জর্জরিত হয়েছে। ডিভিডেন্ডশূন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, বিডি থাই ফুড, মেঘনা কন্ডেন্সড মিল্ক এবং মেঘনা পেট।

অন্যদিকে, এই ১১টি ঘোষণার মধ্যে কেবল ১টি কোম্পানির লভ্যাংশের হার অপরিবর্তিত আছে, ১টির বেড়েছে এবং বাকি ৪টি কোম্পানির লভ্যাংশ কমেছে। নিচে ডিভিডেন্ডশূন্য কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক আর্থিক চিত্র তুলে ধরা হলো:

শ্যামপুর সুগার: লোকসানের পরিমাণ ৫০.৭৭ টাকা, বেড়েছে নিট দায়

শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এটি শ্যামপুর সুগার মিলসের আরেকটি ডিভিডেন্ডশূন্য বছর। তারা ৩০ জুন, ২০২৫ সমাপ্ত অর্থবছর শেষেও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি, যা গত বছরের ধারবাহিকতা।

কোম্পানিটির ক্ষতির হার আরও বেড়েছে। প্রতি শেয়ারে ক্ষতি হয়েছে ৫০ টাকা ৭৭ পয়সা, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৪৮ টাকা ৮৪ পয়সা। তবে, নগদ প্রবাহে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে; শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহের পরিমাণ মাইনাস ৫৫ টাকা ২২ পয়সা থেকে মাইনাস ২২ টাকা ৪৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। আর্থিক ভারের দিক থেকে, প্রতি শেয়ারের নিট দায় ১ হাজার ২৫৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩১০ টাকা ৪৪ পয়সায় পৌঁছেছে।

জিলবাংলা সুগার: সর্বোচ্চ লোকসান নিয়ে লভ্যাংশশূন্য

জিলবাংলা সুগারও পর পর দ্বিতীয়বারের মতো লভ্যাংশ ঘোষণা না করে বিনিয়োগকারীদের নিরাশ করেছে। কোম্পানিটির আর্থিক ক্ষতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাপ্ত বছরে প্রতি শেয়ারে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮ টাকা ৮৭ পয়সা, যা আগের বছরে ছিল ৭৪ টাকা ৩৯ পয়সা।

নগদ প্রবাহের দিক থেকে এটি অত্যন্ত নেতিবাচক চিত্র দেখিয়েছে। প্রতি শেয়ারের নগদ প্রবাহ মাইনাস ৬২ টাকা ৮২ পয়সা থেকে ব্যাপক কমে মাইনাস ১৩৫ টাকা ৯৫ পয়সায় নেমে এসেছে। ফলে শেয়ারপ্রতি নিট দায়ও ১ হাজার ৬৩ টাকা ৩৯ পয়সা থেকে বেড়ে ১ হাজার ১৩৯ টাকা ১৯ পয়সা হয়েছে।

বিডি থাই ফুড: ১% ডিভিডেন্ড থেকে সরে এসে লোকসানে

বিডি থাই ফুডের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ প্রদান থেকে বিরত থাকা একটি বড় পরিবর্তন। প্রতিষ্ঠানটি ৩০ জুন, ২০২৫ অর্থবছর শেষে কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি, যেখানে এর আগের বছরে তারা ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

মুনাফার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের মুখে পড়েছে। গত বছর যেখানে শেয়ারপ্রতি ২ পয়সা মুনাফা ছিল, সেখানে এবার ১ টাকা ৬৪ পয়সা লোকসান হয়েছে। নগদ প্রবাহও দুর্বল হয়েছে। শেয়ারপ্রতি ১৭ পয়সা নগদ প্রবাহ হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৬৫ পয়সা। ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৪১ পয়সা।

মেঘনা কন্ডেন্সড মিল্ক: লোকসান তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি

মেঘনা কন্ডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডও টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোনো ডিভিডেন্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, কোম্পানিটির লোকসান ব্যাপক হারে বেড়েছে। সমাপ্ত বছরে প্রতি শেয়ারে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৫ পয়সা, যা পূর্ববর্তী বছরের লোকসান ৩ টাকা ২১ পয়সার চেয়ে বহুগুণ বেশি।

নগদ প্রবাহ মাইনাস ১ টাকা ১১ পয়সা থেকে মাইনাস ৪৯ পয়সায় উন্নীত হলেও, নিট দায়ভার বেড়েছে। প্রতি শেয়ারে নিট দায় ৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৬ টাকা ১৫ পয়সায় ঠেকেছে।

মেঘনা পেট: লোকসান বেড়েছে প্রায় দশ গুণ, এনএভিপিএস হ্রাস

মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডও লভ্যাংশবিহীন বছর পার করেছে। এটিও টানা দ্বিতীয়বারের মতো ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা। কোম্পানিটির লোকসানের মাত্রায় তীব্র বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। আগের বছরে শেয়ারপ্রতি ২৭ পয়সা লোকসান থেকে তা বেড়ে ২ টাকা ৭৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ মাইনাস ২ পয়সায় অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে এর এনএভিপিএস ৭৩ টাকা ১৮ পয়সা থেকে কমে ৭০ টাকা ৪৩ পয়সা হয়েছে।

আমিনুল ইসলাম/