ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

১০ মাসে ২৭ হাজার লেনদেন সন্দেহজনক! টাকা গেল কোথায়?

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৮ ১০:০৯:৪১
১০ মাসে ২৭ হাজার লেনদেন সন্দেহজনক! টাকা গেল কোথায়?

দেশ ছাড়ার পরই বাড়ল পাচারের মাত্রা, তদন্তে চমকে উঠেছেন কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম সাড়ে ১০ মাসে ২৭ হাজার ১৩০টি সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (STR) জমা পড়েছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ)। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৭৯ শতাংশ বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের জুলাই মাসের পর থেকে এ হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে—বিশেষ করে একটি সরকারের পতনের পরপরই।

পাচার ২০ বিলিয়ন ডলার! কারা জড়িত?

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে ১৮-২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এমনকি একজন ব্যক্তির একাই বিদেশে ৩৫০টি বাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই অর্থ পাচারের ঘটনা উদঘাটনের কথা জানিয়েছেন গভর্নর। তিনি বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য নতুন। কাউকে জেলে নেয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং বিদেশ থেকে অর্থ ফেরত আনাই এখন অগ্রাধিকার।”

সাড়ে ৩শ এমপিসহ বহু প্রভাবশালীর সম্পৃক্ততা সন্দেহ

বিএফআইইউ ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোর দাবি, সাবেক সরকারের সাড়ে তিন শ সংসদ সদস্য, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এই লেনদেনে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে।

১১টি গ্রুপ নিয়ে চলছে যৌথ তদন্ত

পাচারের অর্থ উদ্ধারে গঠন করা হয়েছে ১১টি যৌথ তদন্ত টিম। বিএফআইইউ বলছে, ইতোমধ্যে একটি বিদেশি সম্পত্তি জব্দ হয়েছে, আরও অনেকের বিরুদ্ধেই প্রক্রিয়া চলছে।

তাদের মতে, পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি এবং আন্তর্জাতিক আইনগত জটিলতায় ভরা হলেও বিশ্বব্যাংক, ইউএসডোজ, আইসিএআরসহ বিভিন্ন সংস্থা সহায়তা দিচ্ছে।

রিপোর্টের হার বেড়েছে কয়েক গুণ

২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট ছিল ১৪ হাজার ১০৬টি। ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয় ১৭ হাজার ৩৪৫টি। অথচ চলতি অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসেই তা ২৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা রেকর্ড।

হুন্ডি ও অর্থপাচারে দেশীয়-বিদেশি চক্র সক্রিয়

বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, হুন্ডি ও অর্থপাচার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও লেনদেন স্থিতিশীলতায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সরকারি সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

FAQ (সচরাচর জিজ্ঞাসা ও উত্তর):

১. ২৭ হাজার সন্দেহজনক লেনদেন বলতে কী বোঝানো হচ্ছে?

বিএফআইইউ যেসব লেনদেনে অস্বাভাবিকতা, অপরিচিত উৎস বা সন্দেহজনক আচরণ পায়, সেগুলোকে STR বা Suspicious Transaction Report হিসেবে চিহ্নিত করে।

২. কে এই অর্থপাচারে জড়িত?

প্রাথমিক তদন্তে সাবেক সরকারের শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যাংকার ও হুন্ডি সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

৩. এই অর্থ কি ফেরত আনা সম্ভব?

বিদেশি সহযোগিতা ও তদন্তের মাধ্যমে কিছু সম্পদ জব্দ হয়েছে, তবে পুরো অর্থ ফেরাতে সময় ও আইনি সহায়তা প্রয়োজন।

৪. কেন এত বেড়েছে সন্দেহজনক লেনদেনের হার?

রাজনৈতিক পরিবর্তন, বাড়তি নজরদারি এবং গোপনে অর্থ পাচারের প্রবণতার কারণে STR রিপোর্টের সংখ্যা বেড়েছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ