ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২

শেয়ার কারসাজি: হিরু-সাকিব ২০৮ কোটি টাকা জরিমানা বিএসইসি'র

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০২ ১০:২০:৫৯
শেয়ার কারসাজি: হিরু-সাকিব ২০৮ কোটি টাকা জরিমানা বিএসইসি'র

নিজস্ব প্রতিবেদক: বছরের পর বছর ধরে শেয়ারবাজারে গোপনে চলছিল এক অভিনব কারসাজির নাটক। পর্দার আড়ালে ছিলেন এক সরকারি কর্মকর্তা, তার পরিবার এবং এক তারকা ক্রিকেটার। আর মঞ্চ? বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। শেষমেশ সেই পর্দা সরিয়ে দিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি লোপাট করে গড়ে তোলা হয়েছিল এক অদৃশ্য সিন্ডিকেট—যার নেতৃত্বে ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মো. আবুল খায়ের হিরু।

এই সিন্ডিকেটে আছেন তার স্ত্রী, বাবা, বোন এবং... বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও।

সব মিলিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিএসইসি যে আর্থিক জরিমানা আরোপ করেছে, তার অঙ্ক চমকে দেওয়ার মতো—২০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা!

ক্ষমতার ছায়ায় গড়ে ওঠা কারসাজির সাম্রাজ্য

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই আবুল খায়ের হিরুর বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তখন তাকে ছোঁয়া যায়নি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুনভাবে গঠিত বিএসইসি, খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে সেই শক্তিধর সিন্ডিকেট ভাঙার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়, সমবায় অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে বিএসইসি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়—একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও আবুল খায়ের হিরু আইন ভেঙে শেয়ারবাজারে প্রবেশ করেছেন, আর সেটি করেছেন সম্পূর্ণ পরিকল্পিত কারসাজির মাধ্যমে।

শেয়ার কারসাজির অ্যালবাম: যখন পুরো পরিবারই ‘খেলোয়াড়’

এই সিন্ডিকেটের কার্যকলাপ যেন একটি দীর্ঘ অপরাধ-চিত্র। কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা:

১৯ জুন ২০২২:

গ্রিন ডেল্টা ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্সে কারসাজির জন্য হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তাদের ট্রাস্টকে প্রায় ২ কোটি ৯ লাখ টাকা জরিমানা।

৬ জুলাই ২০২২:

ফরচুন সুজ ও এনআরবিসি ব্যাংকে কারসাজিতে হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর ও বোন কনিকা আফরোজকে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪:

প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে কারসাজিতে হিরু ও সাকিবসহ সহযোগীদের ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা। শুধু সাকিব আল হাসানই পেয়েছেন ৫০ লাখ টাকার জরিমানা।

৯ এপ্রিল ২০২৫:

সোনালী পেপারের শেয়ারে দু’দফায় কারসাজির জন্য দেওয়া হয় মোট ৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা জরিমানা। এর মধ্যে সাকিবের নামেই আছে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকার জরিমানা।

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫:

ফরচুন সুজে নতুন করে কারসাজির ঘটনায় হিরুর একার বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা ও তার স্ত্রী কাজী সাদিয়াকে ২৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

‘মুনাফার খেলা’ থেকে জবাবদিহির মঞ্চে

শুধু জরিমানা দিয়েই শেষ নয়—বিএসইসি’র পক্ষ থেকে এই সিন্ডিকেটের সব সদস্যের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “এটি শুরুমাত্র। শেয়ারবাজারে অনিয়ম করে কেউ পার পাবে না। একের পর এক তদন্তে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হব না।”

বিএসইসির মতে, এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম শুধু আইনভঙ্গই নয়, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরিয়েছে। পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ফেরাতে এরকম শক্ত অবস্থান এখন সময়ের দাবি।

শেয়ারবাজার যেন কোনো ব্যক্তির লোভ পূরণের ক্ষেত্র নয়—এই বার্তাই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএসইসি’র সাম্প্রতিক পদক্ষেপে। যখন একটি পরিবার, একজন তারকা এবং প্রভাবশালী শক্তির জাল মিলে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, তখন রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকেরা বলেছে—“না, এটা আর চলবে না।”

জামাল/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ