ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ঋণগ্রস্ত পাঁচ কোম্পানির কার্যক্রম তদন্তে বিএসইসির চার সদস্যের কমিটি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ০৯:৪৩:৩০
ঋণগ্রস্ত পাঁচ কোম্পানির কার্যক্রম তদন্তে বিএসইসির চার সদস্যের কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনায় বিশেষ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের ‘ইনসপেকশন, ইনকোয়ারি অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন’ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব কোম্পানির ওপর তদন্ত চালানো হবে, সেগুলো হলো—বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো, শাইনপুকুর সিরামিকস, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) এবং নিউ লাইন ক্লোথিংস। এর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ও শাইনপুকুর সিরামিকস বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।

তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএসইসি চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে রয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান, উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি এবং সহকারী পরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তদন্তের আওতায় কোম্পানিগুলোর কারখানা ও অফিস পরিদর্শনের পাশাপাশি তাদের আর্থিক হিসাব, ব্যাংক লেনদেন, শেয়ারহোল্ডিং কাঠামো, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম), অভ্যন্তরীণ লেনদেন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হবে। কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলোর আয়-ব্যয়ের তথ্য যথাযথ নথিপত্রে দলিলভুক্ত আছে কি না এবং তারা সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিনিষেধ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা যাচাই করা হবে।

কোম্পানিভিত্তিক ঋণ পরিস্থিতি:

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস:

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৪২৬.৭৫ কোটি টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১৭৫.৮০ কোটি টাকা। মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০২.৫৪ কোটি টাকা।

বেক্সিমকো:

একই সময় পর্যন্ত বেক্সিমকোর স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৩,১০৯.১৭ কোটি টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৩,৩৪০.৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কোম্পানিটির মোট ঋণ ৬,৪৪৯.৬৮ কোটি টাকা।

শাইনপুকুর সিরামিকস:

২০২৪ সালের জুন শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ ৯৮.৫৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৯৭.৫৯ কোটি স্বল্পমেয়াদি এবং ০.৯৫ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি।

রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (RSRM):

২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯৩.৬৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৯৫ কোটি স্বল্পমেয়াদি ও ৯৮.৬৭ কোটি দীর্ঘমেয়াদি। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের পর থেকে RSRM কোনো হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

নিউ লাইন ক্লোথিংস:

২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির মোট ঋণ ৯১.৭৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২১.৮৩ কোটি স্বল্পমেয়াদি এবং ৬৯.৯১ কোটি দীর্ঘমেয়াদি। এই কোম্পানিরও ২০২১ সালের পর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

তদন্তের উদ্দেশ্য

বিএসইসির মতে, এই পাঁচটি কোম্পানির কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কি না এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতেই তদন্ত করা হচ্ছে। কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করাই এই তদন্তের মূল উদ্দেশ্য।

একই সঙ্গে কমিশনের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এবং এর বড় একটি অংশ এখন মন্দ ঋণে রূপান্তরিত হয়েছে, যা কমিশনের উদ্বেগের অন্যতম কারণ।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ