ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে কঠোর পদক্ষেপ ও কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে বিএসইসি

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ১২ ১৬:৩৪:০০
শেয়ারবাজারে কঠোর পদক্ষেপ ও কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেয়ারবাজার সংস্কার অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। এক বছর পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্তৃত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে শেয়ার কারসাজি দমনে রেকর্ড জরিমানা, নীতি পরিবর্তন এবং কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ।

সূচক নিয়ন্ত্রণ নয়, নীতি সংস্কারে মনোযোগ

পূর্বে বাজার সূচক ধরে রাখতে ব্রোকারদের শেয়ার কেনার জন্য চাপ দেওয়া হতো, যা এখন বন্ধ হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কমিশন এখন স্বল্পমেয়াদি সূচক ব্যবস্থাপনার বদলে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও কাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে।

রেকর্ড জরিমানার নজির

নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে গত এক বছরে বিএসইসি ১,১০০ কোটির বেশি জরিমানা আরোপ করেছে—যা ১৯৯৩ সালের পর সর্বোচ্চ। অবৈধ মুনাফার ওপর জরিমানার হার ২০% থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৯০% করা হয়েছে।

সবচেয়ে আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি, যেখানে পাঁচ প্রতিষ্ঠান ও চার ব্যক্তির ওপর ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলামকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১৯০ কোটির বেশি জরিমানা করা হয়েছে, যেখানে জাতীয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নামও রয়েছে।

কাঠামোগত পরিবর্তনের উদ্যোগ

সরকার পরিবর্তনের পর পাঁচ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়, যারা আইপিও, মার্জিন ট্রেডিং এবং মিউচুয়াল ফান্ড সংস্কারের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া এখন ডিজিটালাইজেশনের পথে, যা প্রভাব খাটানোর সুযোগ কমাবে। ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ বছরই এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

নতুন বাজেটে বিও অ্যাকাউন্ট ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে, ব্রোকারদের টার্নওভার ট্যাক্স ০.০৫% থেকে ০.০৩% করা হয়েছে এবং তালিকাভুক্ত ও অনতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের ব্যবধান আরও বেড়েছে।

বাজারের অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

আগের সরকারের পতনের পর তিন দিনে ডিএসইএক্স সূচক ৫৮৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬,০০০-এর ওপরে উঠেছিল। পরে তা নেমে আসে ৪,৬১৫-এ, তবে বর্তমানে ৫,৩৫০-এর ওপরে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাজার অতিমাত্রায় অবমূল্যায়িত থাকায় এই পুনরুদ্ধার স্বাভাবিক।

তবে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—গত এক বছরে কোনো নতুন আইপিও অনুমোদন হয়নি এবং বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ১% কমেছে। তবুও ডিএসই চেয়ারম্যান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলার সংস্কৃতি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ