ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ও আস্থা ফেরাতে সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৪:৩১:০৯
শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ও আস্থা ফেরাতে সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ

দেশের স্থবির শেয়ারবাজারকে চাঙা করতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একগুচ্ছ সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আটকে থাকা বাজারকে স্থিতিশীল করতে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) বিশাল অঙ্কের নতুন মূলধন সরবরাহ করা হচ্ছে।

২০০০ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে আইসিবিকে শক্তিশালীকরণ, ক্ষুদ্র বিনিয়োগ তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধি:

শেয়ারবাজারের মেরুদণ্ড শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার আইসিবিকে ২ হাজার কোটি টাকা দেবে। এর ফলে বাজারকে স্থিতিশীল করতে আইসিবির সক্ষমতা বহুলাংশে বাড়বে। পাশাপাশি, ২০১০ সালের ভয়াবহ বাজার ধসের পর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলটির মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ২০৩২ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।

এই তহবিলটি প্রথম ধাপে ৩৫ হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং বর্তমানে এটি ঘূর্ণায়মান ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এই দুটি পদক্ষেপই বাজারের তলানিতে থাকা আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাজারকে সমৃদ্ধ করতে বহুজাতিক ও রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ১০ কোম্পানি:

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা 'ভালো মানের শেয়ারের' সংকট নিরসনে সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলো মোট দশটি কোম্পানিকে চিহ্নিত করেছে, যাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা হবে। এর মধ্যে ছয়টি অত্যন্ত শক্তিশালী বহুজাতিক কোম্পানি এবং চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানি হলো: ইউনিলিভার, নেসলে, নোভারটিস, সিনজেনটা, সিনোভিয়া (সাবেক সানোফি বাংলাদেশ) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি। সরকার এসব বহুজাতিক কোম্পানিতে তাদের মালিকানার অন্তত পাঁচ শতাংশ শেয়ার জনগণের কাছে অফলোড করার পরিকল্পনা করছে।

চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হলো: পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন।

বিনিয়োগকারী তোফায়েল রতন এই উদ্যোগকে 'গেম চেঞ্জার' হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, "যখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে, তখন এটি শেয়ারবাজারে বিশাল ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিনিয়োগকারীরা উচ্চ-পারফর্মিং এই কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।

" তিনি গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তির উদাহরণ টেনে বলেন, "যদি আরও ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানি তাদের শেয়ার অফলোড করে, তবে একই ধরনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।" তবে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তিতে দীর্ঘদিনের বিলম্ব নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন। "যদিও এটি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি, কোনো সরকারই তাদের বাজারে আনতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়নি। এবার দেশের প্রধান নির্বাহী এই তালিকাভুক্তির কথা বলেছেন, যা আমাকে আশাবাদী করছে," বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বর্তমানে ৩৬০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে, যা তিন বছর আগে ছিল ৩৫০টি। গত ১৩ বছরে আইপিও-এর মাধ্যমে ১২৭টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশিই খারাপ পারফর্মিং কোম্পানি যারা খুবই কম বা কোনো ডিভিডেন্ড দেয় না। এমন পরিস্থিতিতে ভালো মানের কোম্পানির অন্তর্ভুক্তি বাজারের গুণগত মান বাড়াবে।

বাজারের স্বচ্ছতা বাড়াতে বিধিমালায় সংস্কার:

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে আরও স্বচ্ছ ও ন্যায্য লেনদেনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে মার্জিন, মিউচুয়াল ফান্ড এবং পাবলিক ইস্যু সংক্রান্ত বিধিতে সংশোধনীর খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে যুগোপযোগী করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)-এর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে বাজারে ভালো কোম্পানি প্রবেশ না করায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ তেমন ছিল না, যার কারণে বাজার স্থিতিশীল ও টেকসই হতে পারেনি। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে বলে আমি আশাবাদী।"

এই সমন্বিত ও শক্তিশালী পদক্ষেপগুলো দেশের শেয়ারবাজারে নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ