ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

১৫ কোম্পানির শেয়ার: পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৯ ২১:৩৪:১২
১৫ কোম্পানির শেয়ার: পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা!

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৫টি ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কোম্পানি দীর্ঘকাল ধরে বিনিয়োগকারীদের জন্য এক বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণখেলাপি ও অব্যবস্থাপনার জেরে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে উঠে গেছে। এর ফলস্বরূপ, এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার এখন নামমাত্র মূল্যে লেনদেন হচ্ছে, যা অসংখ্য বিনিয়োগকারীর পুঁজিকে কার্যত আটকে রেখেছে।

ব্যাংকিং খাতের নাজুক পরিস্থিতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক ঋণখেলাপির তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। এই গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একটি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই খবর বাজারে আসার পর থেকেই উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর শেয়ারদরে অব্যাহত পতন শুরু হয়েছে। গত এক বছরে এসব শেয়ারের মূল্য ৫৮ শতাংশ থেকে ৭২ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের করুণ দশা

একই ধরনের দুর্দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতেও। জিএসপি ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বে লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, ফনিক্স ফাইন্যান্স, বিআইএফসি ফাইন্যান্স এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স—এই প্রতিষ্ঠানগুলোও টানা দরপতনের মুখে পড়েছে। এদের মধ্যে অনেক কোম্পানিই দীর্ঘ সময় ধরে লোকসান এবং ঋণখেলাপির বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে, যার ফলে তাদের শেয়ারদর এখন নামমাত্র মূল্যে নেমে এসেছে। গত এক বছরে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার মূল্যে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন ঘটেছে।

বিনিয়োগকারীদের হতাশা ও কর্তৃপক্ষের নীরবতা

গত এক বছরে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় এই ১৫টি কোম্পানির নাম উঠে আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা বিরাজ করছে। তাদের অনেকেই অভিযোগ করছেন যে, বছরের পর বছর ধরে এই কোম্পানিগুলোতে তাদের বিনিয়োগ আটকে আছে, অথচ কোনো সম্ভাব্য সমাধান বা আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—বিনিয়োগকারীদের করণীয় কী? বাংলাদেশ ব্যাংক এই কোম্পানিগুলোর বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিচ্ছে না, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করত, তাহলে শেয়ারবাজারে অন্তত কিছুটা হলেও অস্থিরতা কমত। একইভাবে, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি-ও এই গুরুতর বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর মন্তব্য বা পদক্ষেপ নেয়নি।

অস্তিত্ব সংকট ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

বাংলাদেশ ব্যাংক অস্তিত্ব সংকটে থাকা বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়িত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে এসব কোম্পানির শেয়ার নামমাত্র দামে লেনদেন হচ্ছে, অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা কার্যত ফাঁদে আটকে পড়েছেন। তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, টানা দরপতনের পর একসময় এই খাতেও স্বাভাবিক সমন্বয় আসতে পারে। তবে এটি নির্ভর করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ এবং সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর। এই বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে একটি কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব অন্ধকারের মধ্যেও আলোর রেখা থাকে। যদি আর্থিক খাত সংস্কারের উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে দুর্বল কোম্পানিগুলো বাদ পড়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরাও ধীরে ধীরে নতুন সম্ভাবনার পথে হাঁটতে পারবেন। তাই বাজার সংশ্লিষ্টরা বিনিয়োগকারীদের এখন আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ