ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

খাদ্য খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের জোয়ার: ১১ কোম্পানিতে আস্থা বৃদ্ধি

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০১ ০৭:৪৭:০১
খাদ্য খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের জোয়ার: ১১ কোম্পানিতে আস্থা বৃদ্ধি

দেশের শেয়ারবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে ১১টিতে আগস্ট মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ০.১০ শতাংশের বেশি এই বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে।

যেসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন, সেগুলো হলো: অ্যাপেক্স ফুডস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবিসি), বিডি থাই ফুড, বিচ হ্যাচারি, ফাইন ফুডস, জেমিনি সি ফুডস, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো, লাভেলো আইসক্রিম, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, আরডি ফুড এবং জিলবাংলা সুগার মিলস।

নিচে কোম্পানিগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ পরিস্থিতির একটি বিশদ বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:

অ্যাপেক্স ফুডস:

৫ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ৫৭ লাখ ২ হাজার ৪০০টি শেয়ার নিয়ে এই কোম্পানি জুলাইয়ে ৫.৫৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছিল, যা আগস্টে ৬.৭৪ শতাংশে উন্নীত হয় (১.১৬% বৃদ্ধি)। উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৫৩.৩৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩৯.৮৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবিসি):

৫৪০ কোটি টাকার বিশাল পরিশোধিত মূলধন এবং ৫৪ কোটি শেয়ারের অধিকারী বিএটিবিসি'তে জুলাই মাসে ১৪.২৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল, যা আগস্টে ১৪.৪১ শতাংশে (০.১৭% বৃদ্ধি) পৌঁছেছে। এর শেয়ারের সিংহভাগ (৭২.৯১%) উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে, এছাড়া সরকারের ০.৬৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৩.৫৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৮.৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য বিএটিবিসি ৩০০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে।

বিডি থাই ফুড:

৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ৮ কোটি ১৫ লাখ শেয়ার সহ, বিডি থাই ফুড জুলাই মাসে ৩১.৬১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দেখেছিল, যা আগস্টে ২.০২ শতাংশ বেড়ে ৩৩.৬৩ শতাংশ হয়েছে। কোম্পানিটির ৩৫.৬১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের এবং ৩০.৭৬ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানাধীন। ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য এটি ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

বিচ হ্যাচারি:

৪১ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ৪ কোটি ১৪ লাখ ১ হাজার ২১টি শেয়ার সহ বিচ হ্যাচারি জুলাইয়ে ১৫.২১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রেকর্ড করে। এটি আগস্টে ৩.১৯ শতাংশ বেড়ে ১৮.৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ৩৪.৯৭ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের এবং ৪৬.৬৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

ফাইন ফুডস:

১৩ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৮টি শেয়ার নিয়ে ফাইন ফুডস জুলাইয়ে ২৫.০৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ পেয়েছিল, যা আগস্টে ২.২৩ শতাংশ বেড়ে ২৭.৩১ শতাংশে পৌঁছেছে। উদ্যোক্তা পরিচালকদের ১৫.২৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫৭.৪৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য এটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

জেমিনি সি ফুডস:

১১ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪১৮টি শেয়ার রয়েছে। জুলাইয়ে ৮.৯২ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ থেকে আগস্টে ১.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এটি ১০.৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ৩০.০১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের, ০.১৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এবং ৫৯.৩৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৭.৫০ শতাংশ ক্যাশ ও ৭.৫০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো:

২১৫ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ২১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬২১টি শেয়ার সহ, এই কোম্পানি জুলাইয়ে ৩৮.৩৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দেখেছিল, যা আগস্টে ০.২৩ শতাংশ বেড়ে ৩৮.৫৬ শতাংশ হয়েছে। উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০.৪২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ০.৩১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩০.৭১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়েছে।

লাভেলো আইসক্রিম:

৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ৯ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার নিয়ে লাভেলো আইসক্রিম জুলাইয়ে ২২.৪২ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ পেয়েছিল, যা আগস্টে ২.৮৩ শতাংশ বেড়ে ২৫.২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩৮.৬৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৬.০৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য এটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ:

১৯৯ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৬টি শেয়ার সহ অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ জুলাই মাসে ২১.০১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দেখেছিল, যা আগস্টে ০.৩১ শতাংশ বেড়ে ২১.৩২ শতাংশ হয়েছে। এর শেয়ারের ৩২.৩৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের, ৩৩.৪২ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এবং ১২.৮৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানাধীন। ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

আরডি ফুড:

৭৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬৬টি শেয়ার সহ আরডি ফুড জুলাইয়ে ১২.২৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রেকর্ড করে, যা আগস্টে ২.৩৬ শতাংশ বেড়ে ১৪.৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ৩৭.৫১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের এবং ৪৭.৮৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য এটি ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

জিলবাংলা সুগার মিলস:

৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন এবং ৬০ লাখ শেয়ারের এই কোম্পানিটি জুলাইয়ে ১৩.১৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছিল, যা আগস্টে ০.৫১ শতাংশ বেড়ে ১৩.৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ৫১.০০ শতাংশ শেয়ার সরকারের এবং ৩৫.৩৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে, তবে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কোনো শেয়ার নেই। জিলবাংলা সুগার মিলস ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি এবং গত ১০ বছরেও ডিএসই-তে এর কোনো ডিভিডেন্ড প্রদানের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এই বিশ্লেষণ দেশের খাদ্য খাতের সার্বিক স্থিতিশীলতা এবং কিছু কোম্পানির প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিশেষ আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়, যা শেয়ারবাজারে এই খাতের ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ