ঢাকা, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২

গভীর রাতের নিস্তব্ধ আহ্বানে আল্লাহর নৈকট্য: তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৬ ১২:৪৩:৪৭
গভীর রাতের নিস্তব্ধ আহ্বানে আল্লাহর নৈকট্য: তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত

আধুনিক জীবনের কোলাহল ছাপিয়ে রাতের নিস্তব্ধ প্রহরে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের এক অনন্য উপায় হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। ফরজ না হলেও এই ঐচ্ছিক ইবাদত মুমিনদের আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সাথে একান্তে যোগাযোগের এক বিশেষ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। ইসলামে তাহাজ্জুদের সময়, এর গুরুত্ব এবং আদায় করার আদব সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

তাহাজ্জুদের শ্রেষ্ঠ সময়: শেষ রাতের আহ্বান

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয় ইশার নামাজের পর থেকে এবং তা ফজরের আযান পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৪৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৫৮)। এই হাদিস অনুযায়ী, রাতের শেষ ভাগে করা দোয়া আল্লাহ তাআলার কাছে বিশেষভাবে গ্রহণীয়।

বিখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ ইমাম নববী (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, "এই সময়ে আল্লাহর রহমত সবচেয়ে বেশি বর্ষিত হয়, কারণ এ সময় দুনিয়ার ব্যস্ততা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে এবং হৃদয় আল্লাহর প্রতি সবচেয়ে বেশি একাগ্র ও নিবিষ্ট থাকে।"

শেষ রাতের হিসাব এবং প্রস্তুতি

রাতের শেষ তৃতীয়াংশ কীভাবে হিসাব করা হবে, তা অনেকেই জানতে চান। এর একটি সহজ পদ্ধতি হলো: মাগরিবের পর ইশা শেষ হওয়ার সময় থেকে ফজরের আযান পর্যন্ত মোট সময়কে তিন দিয়ে ভাগ করা। উদাহরণস্বরূপ, যদি ইশার নামাজ রাত ৯টায় শেষ হয় এবং ফজরের আযান ভোর ৫টায় হয়, তাহলে মোট সময়কাল ৮ ঘণ্টা। এই ৮ ঘণ্টার শেষ তৃতীয়াংশ হবে প্রায় ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। অর্থাৎ, রাত ২:২০ থেকে ফজরের আযান পর্যন্ত সময়টি তাহাজ্জুদের জন্য সবচেয়ে উত্তম।

এই বরকতময় সময়ে তাহাজ্জুদ আদায়ে সক্ষম হওয়ার জন্য রাতেই আগেভাগে ঘুমানো জরুরি। মহানবী (সা.) ইশার নামাজের পর অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না, যা এই প্রস্তুতিমূলক ঘুমের ইঙ্গিত দেয়।

কোরআনের দৃষ্টিতে তাহাজ্জুদ: "বিছানা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা"

"তাহাজ্জুদ" শব্দটি আরবি "হুজুদ" মূল থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো ঘুম থেকে জেগে ওঠা। অর্থাৎ, তাহাজ্জুদ নামাজ সেই ইবাদত যা একজন মুমিন ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আদায় করে।

পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব বারবার তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, "রাতের একাংশে জেগে তোমার জন্য বিশেষ ইবাদত করো; এতে তোমার প্রভু তোমাকে প্রশংসিত এক স্থানে (মাকাম মাহমুদ) প্রতিষ্ঠিত করবেন।" (সুরা ইসরা, আয়াত: ৭৯)

অন্য এক আয়াতে মুমিনদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, "তাদের পার্শ্ব বিছানা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকে।" (সুরা সাজদা, আয়াত: ১৬) ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে স্পষ্ট করেছেন যে, এখানে "বিছানা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা" দ্বারা রাতের গভীর ঘুমে মগ্ন না হয়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য জেগে ওঠাকে বোঝানো হয়েছে।

তাহাজ্জুদ: আত্মিক প্রশান্তি ও জীবনের উদ্দেশ্য

তাহাজ্জুদ নামাজ শুধু আল্লাহর নিকটত্ব লাভের মাধ্যম নয়, এটি ইমানকে শক্তিশালী করে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করে। এই নামাজকে শুধুমাত্র আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হলেও, যে কোনো মুমিন যদি আল্লাহর নৈকট্য, মনের প্রকৃত শান্তি এবং জীবনের সত্যিকারের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে চায়, তবে সে নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ আদায় শু

রু করতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ