বিপিএল ২০২৬ মেগা অকশন: নিলাম পদ্ধতি, সরাসরি চুক্তি এবং সম্পূর্ণ নিয়মাবলী

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আগামী ২০২৬ সিজনের জন্য নিলাম পদ্ধতিতে (Auction Format) ফিরছে, যা বেশ কয়েকটি সিজন ধরে ড্রাফট সিস্টেমে চলার পর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল নিলামের নিয়মাবলী, বেস প্রাইস এবং ক্যাটেগরি কাঠামো চূড়ান্ত করে দল ও মিডিয়ার কাছে পাঠিয়েছে।

তারিখ, স্থান এবং অকশনারের বিবরণ

বিপিএল ২০২৬-এর এই বহু প্রতীক্ষিত নিলামটি প্রাথমিকভাবে ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, একাধিকবার পেছানোর পর অবশেষে ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। নিলামটি ঢাকার র্যাডিসন ব্লু হোটেলে বিকেল ৪:০০ টায় শুরু হবে। এই নিলাম পরিচালনার জন্য নিলামকারী (Auctioneer) হিসেবে অর্ম্যান রাফি নিজামকে নিয়োগ করা হয়েছে।

নিলামে খেলোয়াড় নিবন্ধন ও তালিকা

আগামী সিজনের জন্য মোট ১৪৭ জন স্থানীয় এবং ২৬০ জন বিদেশী ক্রিকেটার নিলামের জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন। ৫০০ জনেরও বেশি বিদেশী ক্রিকেটার নাম দিলেও, শুধুমাত্র ২৬০ জনকে শর্টলিস্ট করা হয়েছে। এই তালিকা থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা তাদের দল গঠন করবে।

নিলামের আগে সরাসরি চুক্তি (Direct Signings)

নিলামের আগে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সর্বোচ্চ দুজন স্থানীয় এবং দুজন বিদেশী খেলোয়াড়ের সাথে সরাসরি চুক্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ছয়টি দলই তাদের এই বিকল্প ব্যবহার করে খেলোয়াড়দের দলে ভিড়িয়েছে:

ঢাকা ক্যাপিটালস সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে তাসকিন আহমেদ, সাইফ হাসান, অ্যালেক্স হেলস এবং উসমান খানকে দলে ভিড়িয়েছে।

রংপুর রাইডার্স দলে নিয়েছে নুরুল হাসান সোহান, মুস্তাফিজুর রহমান, খোয়াজা নাফে ও সুফিয়ান মুকিমকে।

নোয়াখালী এক্সপ্রেস তাদের দুই স্থানীয় তারকা সৌম্য সরকার ও হাসান মাহমুদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, সাথে আছেন জনসন চার্লস ও কুশল মেন্ডিস।

সিলেট টাইটানস সরাসরি চুক্তির তালিকায় আছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, মোহাম্মদ আমির এবং সাইম আইয়ুব।

রাজশাহী ওয়ারিয়র্স সরাসরি চুক্তি করেছে তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোহাম্মদ নওয়াজ এবং সাহেবজাদা ফারহানের সাথে।

চট্টগ্রাম রয়্যালস সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে শেখ মেহেদি, তানভীর ইসলাম এবং আবরার আহমেদকে দলে নিয়েছে।

বাদ পড়া ক্রিকেটার এবং অনুপস্থিতির কারণ

নিলামের জন্য তালিকাভুক্ত স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পরিচিত খেলোয়াড় অনুপস্থিত রয়েছেন। ফিক্সিং-সংক্রান্ত সন্দেহের কারণে বাদ পড়া খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন— এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আলাউদ্দিন বাবু, সানজামুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, নিহাদুজ্জামান এবং শফিউল ইসলাম।

এছাড়াও, আল-আমিন হোসেন ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নেওয়ায় নাম প্রত্যাহার করেছেন, এবং শামসুর রহমান শুভ স্বেচ্ছায় নাম প্রত্যাহার করে তরুণ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি করেছেন।

বেস প্রাইস এবং বিভাগীয় কাঠামো

খেলোয়াড়দের বেস প্রাইস এবং তাদের বিভাগ নিম্নরূপ নির্ধারিত হয়েছে:

স্থানীয় ক্রিকেটার: স্থানীয় ক্রিকেটারদের ছয়টি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ স্তরে বেস প্রাইস ৫০ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন স্তরে ১১ লাখ টাকা ধার্য করা হয়েছে।

বিদেশী ক্রিকেটার: বিদেশী খেলোয়াড়দের পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই বিভাগগুলোতে বেস স্যালারি রাখা হয়েছে USD 50,000 থেকে USD 10,000-এর মধ্যে।

বিডিংয়ের ধাপ (increments) খেলোয়াড়ের বিভাগ অনুযায়ী ভিন্ন হবে, যেখানে উচ্চ বিভাগগুলোতে বড় অঙ্কের জাম্প দেখা যাবে।

স্কোয়াড গঠনের নিয়মাবলী ও বাজেট সীমা

স্কোয়াড গঠনের নিয়ম

প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ২২ জন খেলোয়াড়ের একটি স্কোয়াড তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে নিলাম থেকে ১২ থেকে ১৪ জন স্থানীয় খেলোয়াড় কিনতে হবে। সব মিলিয়ে কোনো দলে ১৬ জনের বেশি স্থানীয় খেলোয়াড় থাকতে পারবে না। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে নিলাম থেকে কমপক্ষে দুজন বিদেশী খেলোয়াড় কিনতে হবে।

এছাড়াও বিভাগ অনুযায়ী স্থানীয় খেলোয়াড় নির্বাচনের কোটা পূরণ করতে হবে: 'এ' এবং 'বি' বিভাগ থেকে কমপক্ষে দুজন; 'সি' এবং 'ডি' বিভাগ থেকে কমপক্ষে ছয়জন; এবং 'ই' ও 'এফ' বিভাগ থেকে কমপক্ষে চারজন খেলোয়াড় নিতে হবে।

বাজেট সীমা

স্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্য (সরাসরি চুক্তিকৃতদের বেতন এই সীমার বাইরে) ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিলাম থেকে কমপক্ষে ১২ জন স্থানীয় খেলোয়াড় অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ ৪.৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে। অন্যদিকে, বিদেশী খেলোয়াড়দের জন্য— সরাসরি চুক্তিকৃত এবং নিলাম থেকে কেনা উভয় ক্ষেত্রেই— সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা হলো USD 350,000।

খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো

বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল খেলোয়াড়দের বেতনের জন্য একটি তিন-ধাপের অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছে: প্রথমত, ২৫ শতাংশ স্বাক্ষর ফি (signing fee) হিসেবে প্রদান করতে হবে; দ্বিতীয়ত, ৫০ শতাংশ গ্রুপ পর্ব শেষ হওয়ার আগে পরিশোধ করতে হবে; এবং তৃতীয়ত, অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

আল-মামুন/