ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

শেয়ারবাজার কারসাজিতেও অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৬ ১২:৪৮:৪৩
শেয়ারবাজার কারসাজিতেও অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান

সাকিব আল হাসান শুধু ক্রিকেট মাঠে নয়, শেয়ারবাজারেও একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তার বিনিয়োগ কার্যক্রম এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বিতর্ক তাকে শেয়ারবাজারের একটি আলোচিত চরিত্রে পরিণত করেছে। তার শেয়ারবাজারে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে, যখন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাকে তাদের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। এর মাধ্যমে সাকিবের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কার্যক্রম আরও দৃশ্যমান হয়।

সাকিবের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে যখন তিনি বেশ কিছু সন্দেহজনক কোম্পানিতে বিনিয়োগ শুরু করেন। বিশেষ করে, শেয়ারবাজারের আলোচিত-সমালোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরুর মাধ্যমে তার বিনিয়োগের খবর গণমাধ্যমে আসে। হিরু বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন, এবং সাকিবের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

তদন্তে উঠে আসে যে, সাকিবের বিনিয়োগ কার্যক্রমে কিছু সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা শেয়ারবাজারে কারসাজির আভাস দেয়। বিশেষ করে, শেয়ারবাজারে তার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে, যা নিয়ে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তদন্ত শুরু করে। এই তদন্তের মধ্যে উঠে আসে, সাকিব কিছু কোম্পানির শেয়ারের মাধ্যমে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করেছেন, যা কারসাজির ইঙ্গিত দেয়।

তবে, এসব অভিযোগের মুখে পড়লেও, সাকিব আল হাসান শাস্তি থেকে রেহাই পেয়েছেন। অনেকের মতে, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে সাকিবের সম্পর্ক তাকে শেয়ার কারসাজির অভিযোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করেছে। তখন বিএসইসি থেকে জানানো হয়, অভিযোগগুলি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি, তাই সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, তদন্তে সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাকে শাস্তি দেওয়া হয়নি, যা সিস্টেমের দুর্বলতা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুযোগ নেওয়ার দিকটি তুলে ধরে।

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিবর্তন আসে বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ে। সংস্থাটির নতুন নেতৃত্ব অতীতের অনিয়ম ও কারসাজি ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ আগস্ট সংস্থাটির শুভেচ্ছাদূতের পদ থেকে সাকিব আল হাসানকে সরিয়ে দেয় বিএসইসি। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিএসইসির কমিশন সভায় ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সময়ে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

একই ঘটনায় তার সঙ্গে শেয়ারবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরুকে ২৫ লাখ টাকা, হিরুর পিতা আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ টাকা, সাকিব ও হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে ১ লাখ টাকা, হিরুর প্রতিষ্ঠান লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে ১ লাখ টাকা, ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে ৭৫ লাখ টাকা এবং মো. জাহিদ কামালকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সব মিলিয়ে চার ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে শেয়ার কারসাজির দায়ে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ছাড়াও আরো পাঁচ কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম এসেছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন নিয়ে তদন্ত করেছিল ডিএসই। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছিল। সে সময়ে যারা কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেছিলেন তাদের মধ্যে সাকিব আল হাসানও ছিলেন। তিনি কোম্পানিটির ৮ লাখ ২০ হাজার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছিলেন ২ লাখ শেয়ার। এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির কারণে বিএসইসি দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভ লিমিটেডকে ৭২ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। আবুল খায়ের হিরু এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

পরের বছর ২০২১ সালের ৫ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারদর ১২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছিল। এ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন নিয়ে তদন্ত করে ডিএসই। তদন্তে ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেনকারীর তালিকায় সাকিব আল হাসানের নাম উঠে আসে। ব্যাংকটির শেয়ার কারসাজির কারণে বিএসইসি কনিকা আফরোজ ও তার সহযোগীদের ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করে। কনিকা আফরোজ আবুল খায়ের হিরুর বোন।

২০২১ সালে শেয়ারবাজারে আরও একটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বড় কারসাজি হয়। ওই বছরের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত বহুল আলোচিত ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন নিয়ে আরেকটি তদন্ত করে ডিএসই। এ তদন্ত প্রতিবেদন বিএসইসির কাছেও পাঠিয়েছিল এক্সচেঞ্জটি। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএসইসি হিরুর পিতা আবুল কালাম মাতবর ও তার সহযোগীদের দেড় কোটি টাকা জরিমানা করে। এ তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, যারা কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেছিলেন, তাদের মধ্যে সাকিব আল হাসানের নামও ছিল। তিনি কোম্পানিটির ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৩টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৩টি।

২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৬০ পয়সা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তা দাঁড়ায় ২০ টাকা ১০ পয়সায়। ব্যাংকটির ওই সময়কার শেয়ার লেনদেন নিয়ে তদন্ত চালিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেনকারীদের তালিকায় আবারো সাকিব আল হাসানের নাম উঠে আসে। তিনি এ সময়ে ব্যাংকটির ৭৫ লাখ ১ হাজার ৬৭৬টি শেয়ার কেনার বিপরীতে ১০ লাখ ২০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। ব্যাংকটির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার কারণে বিএসইসি আবুল কালাম মাতবর ও তার সহযোগীদের ৩ কোটি টাকা জরিমানা করে।

এছাড়া ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়েও বড় কারসাজি হয়েছে। শেয়ারটির কারসাজিতে সহযোগিতায় রাষ্ট্রায়াত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির নামও জড়িয়ে যায়। ডেল্টা লাইফের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেছেন সাকিব আল হাসান। স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজিতে সাকিবের নামও উঠে আসে।

এরপর ২০২২ সালে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার নিয়েও কারসাজি হয়েছে। ওই বছরের ২৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ছিল ৩৪ টাকা। একই বছরের ২৪ এপ্রিল এর দর বেড়ে ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়ায়। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন নিয়ে ডিএসই তদন্ত করেছিল। আলোচ্য সময়ে সাকিব আল হাসান আইপিডিসির ১১ লাখ শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছিলেন ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৩টি শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কারসাজির জন্য বিএসইসি আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে।

এর বাইরেও আরো বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারের কারসাজিতে সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততার অনেক প্রমাণ থাকলেও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কারণে সে সময় এসব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হয়নি, বরং হিরু ও সাকিবদের শেয়ারবাজারে কারসাজিতে উৎসাহ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Undefined variable $webp_image_path in /home/24updatenews.com/public_html/config/function.php on line 367

Warning: Undefined variable $jpg_image_path in /home/24updatenews.com/public_html/config/function.php on line 368

Warning: Undefined variable $jpg_image_path in /home/24updatenews.com/public_html/config/function.php on line 369

শেয়ারবাজার নিয়ে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণার নতুন ফাঁদ!

শেয়ারবাজার নিয়ে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণার নতুন ফাঁদ!

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে একাধিক ভুয়া বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীদের ‘দ্রুত লাভ’ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। এসব বিজ্ঞাপনে দাবি করা... বিস্তারিত