ঢাকা, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে নতুন উদ্দীপনা: 'বুল রান'-এর ঝলক, তবে সতর্কতার মিশ্রণ

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৬ ১৩:৩৮:১৭
শেয়ারবাজারে নতুন উদ্দীপনা: 'বুল রান'-এর ঝলক, তবে সতর্কতার মিশ্রণ

দীর্ঘদিনের মন্দার ধাক্কা কাটিয়ে অবশেষে গতি ফিরতে শুরু করেছে শেয়ারবাজারে। বিনিয়োগকারীদের মুখে এখন স্বস্তির হাসি, কারণ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই বাজারে দেখা গেছে 'বুল রান'-এর আশাব্যঞ্জক লক্ষণ। রবিবার (৫ অক্টোবর) দিনে আটটি কোম্পানির শেয়ার ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হয়েছে, যা বাজারে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি করেছে।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, গত কয়েক মাস ধরে বাজারে যে মন্দা ভাব বিরাজ করছিল, তা ধীরে ধীরে কাটছে। এর প্রধান কারণ, ভালো পারফরম্যান্স ও শক্ত আর্থিক ভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই 'বুল রান' তালিকায় দুর্বল ও খারাপ পারফরম্যান্সের কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো, যা বাজারকে মাঝে মধ্যেই কিছুটা ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

আজকের আলোচিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে— সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, কেঅ্যান্ডকিউ, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ, সাপোর্ট ও সোনালী পেপার। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামের উল্লম্ফন অনেক বিনিয়োগকারীকেই চমকে দিয়েছে। কিন্তু বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এই কোম্পানিগুলোর অধিকাংশেরই শেয়ার 'ঝুঁকিপূর্ণ'।

রবিবারের লেনদেন শেষে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে ৫২ সপ্তাহের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে: সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল উঠেছে ১৯২ টাকা ৫০ পয়সায়, কেঅ্যান্ডকিউ পৌঁছেছে ৪২৬ টাকা ৯০ পয়সায়, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকা ৭০ পয়সায়, প্রগতি লাইফ এর দাম ২৪২ টাকা ৩০ পয়সা, সাপোর্ট এর শেয়ার ৪৩ টাকা ২০ পয়সা, আর সোনালী পেপার ছুঁয়েছে ৩০২ টাকা ১০ পয়সা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ দামে এই শেয়ারগুলোর লেনদেনের পেছনে সরাসরি মৌলভিত্তি শক্তির চেয়ে কারসাজি ও অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রভাবই বেশি। এই ধরনের আচমকা উত্থান অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে লোভনীয় মনে হলেও, অনেকে সতর্ক—কারণ এর পেছনে বাজারের স্বাভাবিক গতি নয়, বরং নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড ও লেনদেনের ছাপ স্পষ্ট।

একজন অভিজ্ঞ ব্রোকার মন্তব্য করেছেন, “বাজারে এমন হঠাৎ উল্লম্ফন অনেকদিন পর দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত এখন ধীরে ধীরে ও সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া— অস্থির শেয়ার থেকে দূরে থাকাটাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ।”

তিনি আরও যোগ করেন, “বর্তমানে বড় দাম বৃদ্ধির প্রায় সব শেয়ারই স্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নয়। এর পেছনে অনেক সময় কারসাজি বা স্বল্প-মেয়াদি লেনদেনের প্রভাব কাজ করে। বিনিয়োগকারীদের উচিত শুধুমাত্র রেকর্ড ভেঙে যাওয়া দামে আকৃষ্ট না হয়ে সতর্কভাবে বিশ্লেষণ করা।”

বিশ্লেষকরাও সতর্ক করে বলছেন, হঠাৎ দামের এই উত্থান স্বাভাবিক বাজার চক্রের অংশ নয়, বরং কারসাজি বা বাজারে স্বল্প-মেয়াদি প্রভাব বিস্তারের ফল হতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার কেনার আগে কোম্পানির রিপোর্ট, ডিভিডেন্ড ইতিহাস এবং বাজারের সাম্প্রতিক কার্যক্রম ভালোভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি।

সব মিলিয়ে, সপ্তাহের শুরুতেই ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ দামে শেয়ার লেনদেনের এই ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও আশাবাদের পাশাপাশি সতর্কতারও মিশ্রণ তৈরি করেছে। অনেকেই বলছেন, এমন হঠাৎ লাফের পেছনে যদি প্রকৃত কারণ না জানা যায়, তাহলে সামনে বাজার আরও অস্থির হতে পারে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ