ঢাকা, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদের দিন কুরবানি নিষিদ্ধ সারা বিশ্বে তোলপাড়

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৫ ১৭:৫৫:১৭
ঈদের দিন কুরবানি নিষিদ্ধ সারা বিশ্বে তোলপাড়

খরা-সংকটে সিদ্ধান্ত, ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা ও কৃষক সমাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র ঈদুল আজহা—ত্যাগের প্রতীক, এক আত্মিক উৎসব। এই দিনে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা পালন করে থাকেন কুরবানির অন্যতম ধর্মীয় রীতি। তবে এবছর মরক্কোয় যেন ঈদের সেই আনন্দে ছায়া ফেলেছে এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। রাজকীয় আদেশে দেশজুড়ে কুরবানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আর এতেই ধর্মীয় আবেগ, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র টানাপোড়েন।

বুধবার সন্ধ্যায় মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ঘোষণায় ইসলামবিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক জানিয়ে দেন, রাজা পঞ্চম মোহাম্মদের জারি করা এক রাজকীয় ফরমান অনুযায়ী, এবছর ঈদের দিন কোনোভাবেই পশু কুরবানি করা যাবে না।

কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে—চরম খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং পশুর ঘাটতি। খাদ্য সংকটে থাকা কৃষি খাত আর ভবিষ্যতের পশু প্রজননের স্বার্থে আপাতত এই ত্যাগ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে জনগণকে।

তবে রাজকীয় আদেশ মানেই কেবল অনুরোধ নয়—তার সঙ্গে এসেছে কঠোর নজরদারি। পশু পরিবহনের পথে কড়া চেকপোস্ট, গ্রামে গ্রামে বিশেষ বাহিনীর অভিযান, এমনকি পোষা ভেড়াও জব্দ করা হচ্ছে—এই সব দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই বলছেন, এ যেন কুরবানি নয়, আত্মপরিচয়ের ওপর কুড়াল।

এদিকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে খামারিদের বুকে। যারা বছরভর গরু-ছাগল লালন করেছেন ঈদের হাটে বিক্রির আশায়, তারা আজ নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কায়। মরক্কোর একটি কৃষি সংগঠনের প্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আমের আক্ষেপ করে বলেন,“এই ঈদের জন্যই তো আমাদের প্রস্তুতি। পশু বিক্রি করতে না পারলে আমরা পথে বসব। সরকারের উচিত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।”

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ ধর্মীয় অনুভূতির ওপর ‘রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন এই সিদ্ধান্তকে।

“আমরা কুরবানি করবই। এটা শুধু প্রথা নয়, আমাদের ঈমানের অংশ,”—বলেছেন এক নাগরিক, যিনি মুখ ঢেকে একটি ভিডিও বার্তায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।

এই সিদ্ধান্ত মরক্কোর সমাজে নতুন এক প্রশ্ন তুলেছে—একদিকে ধর্মীয় কর্তব্য, আরেকদিকে জলবায়ু সংকটে পড়া বাস্তবতা। রাষ্ট্র কি নাগরিকের বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করতে পারে? নাকি কঠিন সময়ে ধর্মীয় অনুশাসনেও সাময়িক রদবদল আনা যায়?

মরক্কোর ঈদ এবার কুরবানি নয়, বরং এক গভীর আত্মসংঘাতের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই সিদ্ধান্ত দেশটিকে কোথায় নিয়ে যায়, আর কিভাবেই বা সরকার জনতার ক্ষোভ প্রশমিত করে—সেটিই এখন বিশ্ব মুসলিম সমাজের কৌতূহলের কেন্দ্রে।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ