ঢাকা, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তদন্তে তামিম দোষী নয়, সাকিবের অভিযোগই একমাত্র সূত্র

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৬ ১০:১৬:৩৬
তদন্তে তামিম দোষী নয়, সাকিবের অভিযোগই একমাত্র সূত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার পর গঠিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ফের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিপোর্টের একটি নির্দিষ্ট অংশ ঘিরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়, যেখানে দাবি করা হয়—তামিম ইকবাল এবং ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে একটি তথ্য ‘ফাঁস’ করেছিলেন, যাতে কোচকে বরখাস্ত করা যায়।

তবে খোদ তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই অভিযোগ আসলে তদন্ত কমিটির কোনো ‘ফাইন্ডিংস’ নয়, বরং এটি কেবলমাত্র সাকিব আল হাসানের ব্যক্তিগত অভিযোগ। তদন্ত কমিটি সাকিবের বক্তব্য হিসেবে বিষয়টি রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করলেও, সেটিকে কোনোভাবে সত্যতা যাচাই করে ‘প্রতিবেদন’ হিসেবে উল্লেখ করেনি বা তা থেকে কোনো সুপারিশ প্রদান করেনি।

সাকিবের বক্তব্য, তদন্ত কমিটির নয়

তদন্ত রিপোর্টে মোট ১৬ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ছিলেন আটজন ক্রিকেটার এবং আটজন কোচিং স্টাফ ও বোর্ড কর্মকর্তারা। ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও তানজিম সাকিব। কোচিং স্টাফদের মধ্যে ছিলেন চণ্ডিকা হাথুরুসিংহ, খালেদ মাহমুদ সুজনসহ দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশার এবং বোর্ড পরিচালক জালাল ইউনুস।

প্রতিবেদনের একটি অংশে পাঁচজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের নির্যাস আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়—তারা হলেন: সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মিনহাজুল আবেদিন, হাবিবুল বাশার ও জালাল ইউনুস। এই অংশে সাকিবের মোট ৯টি মন্তব্য/অভিযোগের মধ্যে ৯ নম্বর পয়েন্টে তিনি অভিযোগ করেন যে, হাথুরুসিংহ নাসুম আহমেদকে চড় মারার যে ঘটনা ঘটেছিল, সেটি তামিম ইকবাল ও জালাল ইউনুস পরিকল্পিতভাবে মিডিয়ায় ফাঁস করেছেন যাতে হাথুরুকে বরখাস্ত করার মতো পরিবেশ তৈরি করা যায়।

অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো অনুসন্ধান হয়নি

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই অভিযোগটি তদন্ত কমিটি কোনোভাবেই আমলে নেয়নি। কেননা, এত বড় একটি অভিযোগ থাকার পরও তদন্ত কমিটি তামিম ইকবাল কিংবা জালাল ইউনুসকে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। তাদের সাক্ষাৎকার অংশেও এমন কোনো অভিযোগ বা তার প্রতিক্রিয়া নেই।

এ থেকে বোঝা যায়, তদন্ত কমিটি এই অভিযোগকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়নি এবং একে নিরপেক্ষ সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেনি। সাকিব যেহেতু অতীতে একাধিকবার তামিমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করেছেন—বিশেষ করে ২০২৩ বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে টি-স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে—তাই তার এই অভিযোগের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

মিডিয়ায় তথ্য ‘লিক’ প্রসঙ্গ এখন সামনে কেন?

প্রশ্ন উঠছে, তদন্ত প্রতিবেদনটি অনেক আগেই জমা পড়লেও এখন কেন এই বিষয়টি হঠাৎ করে সামনে চলে আসলো? কেউ কেউ মনে করছেন, বিসিবির আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরেই এই ইস্যুতে আবার আগুন লাগানো হয়েছে। বিশেষ করে তামিম ইকবালের বোর্ড নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার প্রেক্ষাপটে এই সময়োপযোগী ‘ফাঁস’ অনেকের কাছেই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।

জালাল ইউনুস যদিও কিছুদিন ধরেই ক্রিকেট প্রশাসন থেকে কিছুটা দূরে রয়েছেন, তবে তামিম ইকবালের ভবিষ্যৎ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। এই অবস্থায় তদন্ত রিপোর্টের একটি নির্দিষ্ট অংশ মিডিয়ায় তুলে ধরার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতেই পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

তদন্ত রিপোর্টেরও তদন্ত প্রয়োজন?

এই বিতর্কিত পরিস্থিতিতে একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে—তদন্ত কমিটির এই রিপোর্টের স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ ছিল কি না। কেননা, যদি একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে এতো বড় অভিযোগ উঠে, সেটি তদন্তে স্থান না পায়, তাহলে সেই রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। অনেকেই মনে করছেন, এই রিপোর্টেরও পুনঃতদন্ত হওয়া উচিত, যাতে করে প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হয় এবং কোনো পক্ষকে ভিত্তিহীনভাবে দোষারোপ না করা হয়।

তামিম ইকবাল এবং জালাল ইউনুসের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় তথ্য ফাঁসের অভিযোগ তদন্ত কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত নয়, এটি শুধুমাত্র সাকিব আল হাসানের ব্যক্তিগত অভিযোগ—যেটিকে কমিটি যাচাই করেনি, বরং নথিভুক্ত করেছে মাত্র। তাই একে তদন্ত রিপোর্টের ‘ফাইন্ডিংস’ হিসেবে উপস্থাপন করা বিভ্রান্তিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের চলমান নাটকীয়তা ও বিভাজনের মধ্যে এই ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া অনাকাঙ্ক্ষিত, এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া ক্রিকেটপ্রেমীদের ও দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ