ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হঠাৎ কমল আমের দাম

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৮ ০৮:১৬:০৬
হঠাৎ কমল আমের দাম

ঈদের ছুটিতে বন্ধ কুরিয়ার, অনলাইন বিক্রিও থমকে গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুনের শুরুতে জমে উঠেছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের বাজার। গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া—সব জাতের আমেই ছিল চাহিদা ও ভালো দাম। কিন্তু কোরবানির ঈদের ছুটির প্রভাব আর কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকায় হঠাৎ করেই কমে গেছে আমের দাম। প্রতি মণ আমে দরপতন হয়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারের বড় ভরসা অনলাইন অর্ডার ও কুরিয়ার সার্ভিস। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে সব ধরনের কুরিয়ার বুকিং। ৪ জুন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় আম পরিবহনের বুকিং কার্যক্রম। ফলে চাষি থেকে শুরু করে অনলাইন ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কনসাট আম বাজারে ৪ জুন গিয়ে দেখা যায়, বাজারে আগের মতো ভিড় নেই। বেচাকেনাও অনেক কম। ১ জুন পর্যন্ত যেখানে ক্ষীরশাপাতি আম বিক্রি হচ্ছিল ২২০০–২৮০০ টাকা মণে, সেখানে ৪ জুন তা নেমে এসেছে ১৬০০–২৪০০ টাকায়। ল্যাংড়া আমের দাম ১৪০০–২৪০০ টাকা থেকে কমে এখন ১২০০–১৮০০ টাকা।

নাচোল উপজেলার চাষি সাত্তার হোসেন জানালেন, ৩ জুন পর্যন্ত তিনি গোপালভোগের ক্ষুদি জাত বিক্রি করেছেন ১৬০০–২২০০ টাকায়। পরদিনই সেই আমের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

“বাজারে কাস্টমারই নেই। বাজার স্বাভাবিক না হলে গাছেই আম পেকে ঝরে যাবে,”—বলেন তিনি।

ময়মনসিংহ থেকে আসা অনলাইন ব্যবসায়ী রিয়াদ হাসান লিটন জানান, গত কয়েকদিন তিনি অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার মারফত দেশের বিভিন্ন জায়গায় আম পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু কুরিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।“সিজনের ভেতরে এমন ছুটি এলে আমের সবচেয়ে বড় বাজারটাই আটকে যায়,”—বললেন তিনি।

কনসাট বাজারের আড়তদার মো. মজিবুর রহমান সরকার জানান, বাইরের বেপারি আসছেন না, তাই বিক্রিও কম।

“৪ জুন থেকেই বাজারে দামের বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে,”—বলেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোখলেসুর রহমান বলেন,

“এ বছর আম পাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। ফলে চাষিরা গাছে আম পাকলেই নামাচ্ছেন। কিন্তু পরিবহন ও বাজারজাতকরণে বাধা এলে ক্ষতির মুখে পড়বেন।”

শিবগঞ্জের আম উদ্যোক্তা শহিদুল হক হায়দারী বলেন, “আম তো ছুটি বোঝে না। সময় হলে পেকে যাবে, আর না তুললে ঝরে পড়বে। কুরিয়ার সার্ভিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থাগুলো ঈদের সময় অন্তত কাঁচামালের জন্য খোলা রাখা উচিত ছিল।”

তবে আশার কথা শোনালেন কনসাট বাজারের ইজারাদার শফিকুল ইসলাম। তাঁর মতে, “ঈদের আগে-পরে দু-একদিন এমন থাকবেই। ৯ জুন বুকিং চালু হলে আবার বাজার চাঙা হয়ে উঠবে।”

এখন চাষিরা তাকিয়ে আছেন ঈদের ছুটি শেষে বাজার কেমন চেহারা নেয়, সেদিকেই। কারণ আমের সিজন ছোট, আর প্রতিদিনের দেরিতে নষ্ট হচ্ছে হাজারো টাকার পাকা স্বপ্ন।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন: ঈদের ছুটিতে আমের দাম কেন কমে গেল?

উত্তর: কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকায় অনলাইন অর্ডার বন্ধ হয়ে গেছে। বাইরের ক্রেতাও বাজারে কম, তাই চাহিদা কমে দাম পড়েছে।

প্রশ্ন: কোন জাতের আমের দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে?

উত্তর: গোপালভোগ ও ক্ষীরশাপাতি আমের দাম ৪০০–৬০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। ল্যাংড়া আমেও দরপতন দেখা গেছে।

প্রশ্ন: কুরিয়ার সার্ভিস কবে থেকে চালু হবে?

উত্তর: ৫ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ। আবার ৯ জুন থেকে বুকিং চালু হবে।

প্রশ্ন: চাষিরা এখন কী করছেন?

উত্তর: অনেকে দাম কমে যাওয়ায় আম তুলতে ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ ক্ষতির আশঙ্কায় পাকা আম আগেভাগেই বাজারে নিয়ে আসছেন।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ