ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

শ্যালিকাকে দুলাভাইয়ের ধর্ষণ, বড় বোনের সহায়তা

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৯ ২৩:০৫:০৩
শ্যালিকাকে দুলাভাইয়ের ধর্ষণ, বড় বোনের সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: যেখানে থাকা উচিত ছিল আশ্রয়, সেখানেই হলো সর্বনাশ। এক তরুণী, যিনি ভাবেন বড় বোনের ঘর হবে তার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়—সেই ঘরেই তাকে করতে হলো নরকের অভিজ্ঞতা।

মানিকগঞ্জে এক তরুণীকে জোর করে মদ খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণের পর সেই ঘটনার ভিডিও ও ছবি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারই দুলাভাই ও বড় বোনের বিরুদ্ধে।

ঘরের ভেতরেই আঁধারের হাতছানি

ভুক্তভোগী তরুণী জানান, ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর। সকালবেলা তার দুলাভাই ছত্তার মিয়া ফোন করে জানান, তার স্ত্রী—অর্থাৎ তরুণীর বড় বোন রুনা গর্ভবতী হয়েছেন। আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান তিনি। তরুণী সাদাসিধে বিশ্বাসে দুপুরে তাদের বাড়িতে যান।

কিন্তু সেই দিনটি ছিল একটি ফাঁদ পাতা দিনের সূচনা। এর কিছুদিন পর, ১৬ ডিসেম্বর রাতে ঘনিয়ে আসে জীবনের ভয়ানকতম মুহূর্ত। সেই রাতে ছত্তার মিয়া, তার স্ত্রী রুনা আক্তার এবং ছত্তারের আরেক স্ত্রী সোনিয়া মিলে তাকে জোর করে মদ খাইয়ে অচেতন করে দেন।

পরদিন সকালে যখন তরুণীর জ্ঞান ফিরে, তিনি দেখতে পান নিজেকে এক অচেনা ভয়াবহ বাস্তবতায়—নগ্ন শরীর, এলোমেলো কাপড় আর পাশেই ঘুমিয়ে থাকা ছত্তার মিয়া। বুঝতে দেরি হয়নি—তার সর্বনাশ হয়ে গেছে।

ছবিতে বন্দি লজ্জা, ব্ল্যাকমেইলের ছায়া

এই ঘটনার পর শুরু হয় আরেক অধ্যায়—মানসিক নির্যাতন। অভিযোগে বলা হয়, ছত্তার মিয়া ধর্ষণের সময় গোপনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। এরপর সেগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে একাধিকবার তরুণীকে ধর্ষণ করেন।

ভুক্তভোগী তরুণীর ভাষায়, "আমার নিরবতা, আমার ভয়ই তাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। আমি একা ছিলাম, চুপ ছিলাম, কিন্তু ওরা থামেনি।"

শেষ অবধি, ফেসবুকেই ভেঙে পড়ে নীরবতার দেয়াল

১৮ জুন (বুধবার) রাত ৮টার দিকে ‘কাঠ গোলাপ’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তরুণীর কিছু ব্যক্তিগত ছবি। ভীত-সন্ত্রস্ত তরুণী শেষ পর্যন্ত মুখ খোলেন এবং মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

আইন বলছে—এবার পালানোর পথ নেই

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ জানান, "অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।"

সমাজ কী বলছে?

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতোমধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়। নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, পরিবার যখন নারীর জন্য নিরাপদ নয়, তখন রাষ্ট্রের কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। একজনের শরীর আর সম্মান নিয়ে যে পাশবিক খেলা চলেছে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন সময়ের দাবি।

সম্পাদকীয় মন্তব্য

এই ঘটনা শুধু একটি মামলার বিষয় নয়, এটি প্রশ্ন তোলে—কতটা নিরাপদ আমাদের ঘর, কতটা সুরক্ষিত পরিবার? যখন আত্মীয় হয় ধর্ষক, তখন সমাজ কি কেবল নীরব দর্শক হয়ে থাকবে?

বি.দ্র.: ভুক্তভোগীর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে তার নিরাপত্তার স্বার্থে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ