ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২

রপ্তানি আয়ের ৮ হাজার কোটি টাকা গায়েব: কেয়া গ্রুপ ও চার ব্যাংককে তলব

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২২ ২১:৪৩:০৩
রপ্তানি আয়ের ৮ হাজার কোটি টাকা গায়েব: কেয়া গ্রুপ ও চার ব্যাংককে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের আর্থিক খাতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কেয়া গ্রুপের প্রায় ৬৬ মিলিয়ন ডলার বা আট হাজার কোটি টাকার বেশি রপ্তানি আয় উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায়। এই গুরুতর অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা চারটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের (সিএফও) তলব করেছে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)।

ঘটনার গভীরে যেতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আগামী ২৬ আগস্ট এফআরসির প্রধান কার্যালয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে, যেখানে তলব করা ব্যাংক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের পরিচালককেও হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। শুধু মৌখিক ব্যাখ্যা নয়, কেয়া গ্রুপের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং হারিয়ে যাওয়া রপ্তানি আয়ের লেনদেন সংক্রান্ত সকল নথি উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চার ব্যাংক

এফআরসি’র পাঠানো নোটিশ অনুযায়ী, বছরের পর বছর ধরে কেয়া কসমেটিক্স লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা জমা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চারটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিবরণে বলা হয়েছে:

সাউথইস্ট ব্যাংক: ২০০৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার জমা দেয়নি।

পূবালী ব্যাংক: ২০০৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২০ কোটি ১৯ লাখ ডলার জমা দেয়নি।

ন্যাশনাল ব্যাংক: ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার জমা দেয়নি।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক: ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬৫ লাখ ডলার জমা দেয়নি।

সব মিলিয়ে এই চারটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মোট ৬৬ কোটি ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা কেয়া গ্রুপের অ্যাকাউন্টে জমা না করার অভিযোগ উঠেছে।

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

এই ঘটনায় কেয়া গ্রুপ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠান সরাসরি ব্যাংকগুলোকে দায়ী করে বলেন, "ব্যাংকগুলো আমাদের রপ্তানি আয়ের বিশাল একটি অংশ সময়মতো জমা না করায় আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাদের এই গাফিলতির কারণেই আমাদের প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি হতে বাধ্য হয়েছে।" তিনি আরও জানান যে, এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিনি অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএসইসি এবং এফআরসি-কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত ব্যাংকগুলো কেয়া গ্রুপের দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, কেয়া গ্রুপই তাদের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ২,৭০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেনি, যার কারণে কোম্পানিটিকে খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

তদন্তের একাধিক ধারা

উল্লেখ্য, এই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইতোমধ্যে একটি বিশেষ অডিট ফার্মকে দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করাচ্ছে এবং সেই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর মধ্যেই ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) নতুন করে তদন্তে নামায় বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ