ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

ফাঁস হলো ইসলামী ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট: মুনাফা নিয়ে চাঞ্চল্য!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১৫:২৮:৫৭
ফাঁস হলো ইসলামী ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট: মুনাফা নিয়ে চাঞ্চল্য!

বাংলাদেশের বৃহত্তম শরিয়াহভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি প্রথমবারের মতো এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিশাল আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ অর্থবছর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ঋণ ও বিনিয়োগের দুর্বল মান এবং সম্ভাব্য খেলাপি ঋণের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল না রাখার কারণে ব্যাংকটির ২০২৪ সালের ঘোষিত ১০০ কোটি টাকার মুনাফা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

প্রভিশন ঘাটতি ও মুনাফার অসঙ্গতি:

নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং এ. ওয়াহাব অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এবং অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা আমানতের জন্য ৭৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা প্রভিশন রাখা জরুরি ছিল। কিন্তু ব্যাংকটি মাত্র ৬ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা প্রভিশন রেখেছে, যার ফলে ৬৯ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

এই বিশাল ঘাটতি সত্ত্বেও ইসলামী ব্যাংক ২০২৪ সালে ১০৮ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েছে, যা আগের বছরের ৬৩৫ কোটি টাকা থেকে কম। নিরীক্ষকরা বলছেন, পুরো প্রভিশন না রাখার কারণেই ব্যাংকটি মুনাফা, সম্পদ ও ইকুইটি বেশি দেখিয়েছে।

তারল্য সংকট ও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা:

নিরীক্ষকরা আরও উল্লেখ করেছেন যে ইসলামী ব্যাংকের স্থিতিশীলতা এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তার উপর নির্ভরশীল। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকটির ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) এবং স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) সারাবছরই নিয়ন্ত্রক সীমার নিচে ছিল, যা তাদের তারল্য সংকটের ইঙ্গিত দেয়। খেলাপি ঋণ নাটকীয়ভাবে বেড়ে ৬৫ হাজার ৭১৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ৮৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি। এই বিষাক্ত সম্পদের জন্য প্রভিশন ৬৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা হয়েছে।

ব্যাংকের দাবি ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া:

তবে, ইসলামী ব্যাংক দাবি করেছে যে তারা বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রক চাহিদা পূরণ করেছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার ওভারড্রাফট সুবিধা নির্ধারিত সময়ের আগেই পরিশোধ করেছে এবং অন্যান্য ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণও পরিশোধ করেছে। ব্যাংকটি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণও আদায় করেছে বলে জানিয়েছে।এত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও, ২০২৪ সালে ইসলামী ব্যাংকের আমানত ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বা ৪ শতাংশ বেড়েছে।

এই বছরের প্রথম আট মাসে আমানত ১৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেড়েছে। ব্যাংকটি জানিয়েছে, এটি তাদের ২ কোটি ৫০ লাখের বেশি গ্রাহকের আস্থার প্রতিফলন। ব্যাংকটির মোট আমানতের ৯০ শতাংশ খুচরা গ্রাহকদের কাছ থেকে আসে এবং মাত্র ২ শতাংশ কর্পোরেট গ্রাহকদের।

ব্যাংকটি জানায়, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা তাদের প্রধান অগ্রাধিকার ছিল। এ লক্ষ্যে একটি তিন-পর্যায়ের পুনর্গঠন পরিকল্পনা চালু করা হয়েছে। প্রথম ধাপে তারল্য সংকট সমাধান করা হয়েছে এবং বিদেশি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান দ্বারা বিগত কার্যক্রম পর্যালোচনা করে তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের উদ্বেগ:

ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের এই বিশাল প্রভিশন ঘাটতি এবং তারল্য সংকট দেশের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ। তাদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং আমানতকারীদের আস্থা বজায় থাকে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ