ঢাকা, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

উদ্যোক্তাদের আস্থা কমছে! ১১ কোম্পানিতে বিনিয়োগে ধস!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৯:৫৮:২১
উদ্যোক্তাদের আস্থা কমছে! ১১ কোম্পানিতে বিনিয়োগে ধস!

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১১টি কোম্পানিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগে (Promoter Directors’ Investment) বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে এই চিত্র ধরা পড়েছে, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই বিনিয়োগ হ্রাস বাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

যে ১১টি কোম্পানিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ কমেছে, সেগুলো হলো: এবি ব্যাংক, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, বার্জার পেইন্টস, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, এনআরবিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, রহিমা ফুড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক।

কোম্পানিভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগ হ্রাসের চিত্র:

এবি ব্যাংক:

কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮৯.৮৭ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ৮৯৫.৬৯ কোটি টাকা। জুলাই মাসে যেখানে উদ্যোক্তা পরিচালকদের অংশীদারিত্ব ছিল ৩১.২১ শতাংশ, আগস্টে তা ৯.৯৮ শতাংশ কমে ২১.২৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য শেয়ারধারীদের মধ্যে সরকার (০.৫৭%), প্রাতিষ্ঠানিক (৩২.৬২%), বিদেশি (০.৫৪%) এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের (৪৫.০৪%) অংশ রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটি ২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স:

এই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মোট শেয়ার ৪.২৪ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ৪২.৩৫ কোটি টাকা। জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩৬.৬৯ শতাংশ শেয়ার আগস্টে ৩.০৮ শতাংশ কমে ৩৩.৬১ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩০.৩২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৬.০৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়েছে।

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ:

৪৯.১০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানির মোট শেয়ার ৪.৯১ কোটি। জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের রেকর্ড ৯৫.০০ শতাংশ শেয়ার ছিল, যা আগস্টে ৫.২৮ শতাংশ কমে ৮৯.৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ৮.৩৩ শতাংশ, বিদেশি ০.১৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১.৭৬ শতাংশ রয়েছে। ৩১ মার্চ, ২০২৫ অর্থবছরের জন্য ২২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে বার্জার পেইন্টস।

ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স:

কোম্পানিটির মোট শেয়ার ১১.৭০ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ১১৭.৯৩ কোটি টাকা। জুলাই মাসের ৫০.৫৭ শতাংশ থেকে আগস্টে উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ ৪.৮২ শতাংশ কমে ৪৫.৭৫ শতাংশ হয়েছে। সরকারি মালিকানা ৯.৩৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ১৪.৭৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩০.১৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংক:

৮২৮.৬৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এনআরবিসি ব্যাংকের মোট শেয়ার ৮২.৮৬ কোটি। জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৬০.৭৩ শতাংশ শেয়ার আগস্টে মাত্র ০.২৬ শতাংশ কমে ৬০.৪৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২.৬৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৬.৮৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। উল্লেখ্য, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়নি।

প্রিমিয়ার ব্যাংক:

প্রিমিয়ার ব্যাংকের মোট শেয়ার ১২৩.৩৪ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ১,২৩৩.৪৩ কোটি টাকা। এই ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ জুলাই মাসের ৩২.৯৭ শতাংশ থেকে আগস্টে ৯.০৫ শতাংশ কমে ২৩.৯২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য পতন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২২.০০ শতাংশ, বিদেশি ০.২৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৩.৭৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ অর্থবছরের জন্য ১২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

প্রাইম ব্যাংক:

১,১৬০.৫৯ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রাইম ব্যাংকের মোট শেয়ার ১১৬.০৬ কোটি। জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩৮.৩৫ শতাংশ শেয়ার ছিল, যা আগস্টে ২.৪ শতাংশ কমে ৩৫.৯৫ শতাংশ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩৫.৩৪ শতাংশ, বিদেশি ৭.৪৮ শতাংশ এবং সাধারণ ২১.২৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে আছে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটি ১৭.৫০ শতাংশ ক্যাশ এবং ২.৫০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

রহিমা ফুডস:

কোম্পানিটির মোট শেয়ার ২.০০ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ২০.০০ কোটি টাকা। জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩৭.৩৮ শতাংশ শেয়ার আগস্টে ১.৪৩ শতাংশ কমে ৩৫.৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ৬.২৯ শতাংশ, বিদেশি ৩.৭৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫৪.০১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৩০ জুন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক:

১,১১২.৯৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ার ১১১.৩০ কোটি। জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৪৫.৩০ শতাংশ শেয়ার আগস্টে ৩.৯৪ শতাংশ কমে ৪১.৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ২৫.৪৯ শতাংশ, বিদেশি ০.০১ শতাংশ এবং সাধারণ ৩৩.১৪ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

সাউথইস্ট ব্যাংক:

সাউথইস্ট ব্যাংকের মোট শেয়ার ১৩৩.৭৪ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ১,৩৩৭.৪০ কোটি টাকা। জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩৪.৪৭ শতাংশ শেয়ার আগস্টে ২.২৫ শতাংশ কমে ৩২.২২ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ৩৭.৩৭ শতাংশ, বিদেশি ০.৯২ শতাংশ এবং সাধারণ ২৯.৪৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটি ৬ শতাংশ ক্যাশ এবং ৪ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

উত্তরা ব্যাংক:

৯৭০.২৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের উত্তরা ব্যাংকের মোট শেয়ার ৯৭.০৩ কোটি। জুলাই মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০.৬৩ শতাংশ শেয়ার আগস্টে ২.৫২ শতাংশ কমে ২৮.১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ২৩.০০ শতাংশ, বিদেশি ১.০৫ শতাংশ এবং সাধারণ ৪৭.৮৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটি ১৭.৫০ শতাংশ ক্যাশ এবং ১৭.৫০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

বাজারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ ভাবনা:

উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণের হার কমে যাওয়া সাধারণত বাজারের জন্য একটি নেতিবাচক প্রবণতা। এটি কোম্পানিগুলোর প্রতি তাদের নিজস্ব আস্থায় ঘাটতি অথবা অন্যান্য কৌশলগত সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিতে পারে। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও সংশয় সৃষ্টি করতে পারে এবং শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।

বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য, ডিভিডেন্ড ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক শেয়ারহোল্ডিং প্যাটার্ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ