ঢাকা, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে আতঙ্ক! ১৪ প্রতিষ্ঠানের রদবদলে অন্ধকারে বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৯ ১০:০১:৫৩
শেয়ারবাজারে আতঙ্ক! ১৪ প্রতিষ্ঠানের রদবদলে অন্ধকারে বিনিয়োগকারীরা

দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে এবং নয়টি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানের এই রদবদল শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, যেখানে হাজারো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর অর্থ বিনিয়োগ করা আছে।

বিএসইসিকে পাশ কাটানোয় বাড়ছে নেতিবাচক প্রভাব

আশ্চর্যজনকভাবে, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষাকারী প্রধান সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) সম্পূর্ণ পাশ কাটানো হয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা না যাওয়ায় শেয়ারবাজারে টানা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গত প্রায় দুই মাস ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর হতাশা তৈরি করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কমিটি, অনুপস্থিত বিএসইসি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য একটি আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু এই কমিটিতে বিএসইসির কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিষয়ে এমন বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তারপরও স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে এখনো কোনো সরকারি ঘোষণা নেই, ফলে কোম্পানিগুলো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে না।

বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রাখা বড় ঝুঁকি

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রেখে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, "ব্যাংক একীভূতকরণ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রাখা ঠিক হয়নি। তাদের স্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জকেই এগিয়ে আসা উচিত ছিল, কিন্তু সেটাও হয়নি।" বিনিয়োগকারীদের আস্থা রক্ষায় এ ধরনের প্রক্রিয়ায় বিএসইসিকে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, তালিকাভুক্ত ব্যাংক বা এনবিএফআই একীভূত বা বন্ধ হলে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা আগেভাগেই জানানো অত্যন্ত জরুরি ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির বক্তব্য

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য জানিয়েছে যে প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। ব্যাংকটির মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, ধাপে ধাপে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। অন্যদিকে, বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম জানিয়েছেন, বিষয়টি যখন তাদের কাছে আসবে, তখন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আস্থাহীনতা বাড়ার আশঙ্কা

তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যেখানে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আটকে আছে, সেখানে শুরু থেকেই তাদের প্রতিনিধি রাখা উচিত। নইলে একীভূতকরণ ও বন্ধের এই সিদ্ধান্ত বাজারে আস্থাহীনতা আরও বাড়াবে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ