ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২

Zakaria Islam

Senior Reporter

পুঁজি সংগ্রহে ব্যর্থ শেয়ারবাজার: দায়ী কারা? ফাঁস করলেন বিশেষজ্ঞরা

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০১ ০০:০৬:৫৫
পুঁজি সংগ্রহে ব্যর্থ শেয়ারবাজার: দায়ী কারা? ফাঁস করলেন বিশেষজ্ঞরা

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতিতে পুঁজি সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ানুর রহমান। তিনি অভিযোগ করেন, "বাংলাদেশই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে পুঁজি সংগ্রহে শেয়ারবাজারের কোনো ভূমিকা নেই।" এই নাজুক পরিস্থিতির জন্য তিনি সরাসরি বর্তমান ও অতীতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেছেন, তাদের আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে অক্ষমতাই এর মূল কারণ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশ (পিআরআই) এবং অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) আয়োজিত মাসিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি (এমএমআই) সেমিনারে এই সমালোচনামূলক মন্তব্য আসে। রিজওয়ানুর রহমান আরও সতর্ক করে দেন যে, বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশে কোনো শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইবে না। তিনি শেয়ারবাজারের অন্যান্য অনিয়ম ও দুর্বলতাও তুলে ধরেন।

১৯৯২ সালের "আত্মঘাতী" সিদ্ধান্ত এবং ব্যাংক নির্ভরতা:

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি শেয়ারবাজারের বর্তমান সংকটের একটি বড় কারণ হিসেবে ১৯৯২ সালের একটি নীতিগত সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করেন। ওই সিদ্ধান্তে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি "আত্মঘাতী" বলে মন্তব্য করেন। ফরাসউদ্দিনের মতে, এই পদক্ষেপ শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ব্যাংক খাতের ওপর অত্যধিক নির্ভরতা না কমালে দেশের শেয়ারবাজারের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক পরিচালকদের মূল কাজ নীতি নির্ধারণ হওয়া উচিত হলেও, তারা সরাসরি ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকেন। তিনি প্রস্তাব করেন, "আমাদের অবশ্যই ব্যাংকের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে সুস্পষ্টভাবে আলাদা করতে হবে।"

অ্যালার্মিং পরিসংখ্যান: জিডিপি-তে শেয়ারবাজারের অবদান তলানিতে:

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সামগ্রিক পুঁজি সংগ্রহে শেয়ারবাজারের অবদান ১ শতাংশেরও কম। বিগত ১৬ বছরে প্রায় ১৫০টি ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) থেকে মাত্র ১১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ ব্র্যাক ব্যাংকের এক বছরের ঋণ বৃদ্ধির (প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা) সমান, যা শেয়ারবাজারের দুর্বল চিত্র তুলে ধরে।

২০১০ সালে যেখানে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর প্রায় ৪০ শতাংশ ছিল বাজার মূলধন, তা বর্তমানে সংকুচিত হয়ে মাত্র ৭.২ শতাংশে নেমে এসেছে। তুলনামূলকভাবে, শ্রীলঙ্কার বাজার মূলধন তাদের জিডিপি-এর ২২ শতাংশ এবং ভারতের বাজার তাদের অর্থনীতির আকারকেও ছাড়িয়ে গেছে, যা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ভঙ্গুর দশাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

উত্তরণের প্রচেষ্টা: বিএসইসি-এর টাস্কফোর্স সুপারিশ:

তবে এই নেতিবাচক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত একটি টাস্কফোর্স গত এপ্রিল মাসে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি টার্নওভার সম্পন্ন বহুজাতিক ও বৃহৎ সংস্থাগুলোর জন্য সরাসরি তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে, যেসব কর্পোরেশনের ঋণের পরিমাণ এই সীমা অতিক্রম করেছে, তাদের জন্য বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্তির সুপারিশও করা হয়েছে। এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের শেয়ারবাজারে নতুন গতি আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ