ঢাকা, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

জেড ক্যাটাগরিতে তিন শেয়ারের বড় ধস: নি:স্ব বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৪ ১৪:১৩:৩৭
জেড ক্যাটাগরিতে তিন শেয়ারের বড় ধস: নি:স্ব বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ: জাহিন স্পিনিং, এইচআর টেক্সটাইল ও বারাকা পাওয়ারের শেয়ারে পতন

গত এক মাসে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা মারাত্মক লোকসানের শিকার হয়েছেন। উৎপাদন বন্ধ এবং চরম আর্থিক সংকটের কারণে এই কোম্পানিগুলো—জাহিন স্পিনিং, এইচআর টেক্সটাইল এবং বারাকা পাওয়ার—ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) জেড ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে। এর ফলে, এক মাসের মধ্যে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের গড় দর প্রায় ২৪% থেকে ২৮% পর্যন্ত কমে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর হতাশা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

এক নজরে তিন কোম্পানির শেয়ারের পতন:

জাহিন স্পিনিং: এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৭.৭৮% কমে ৫ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

এইচআর টেক্সটাইল: এই কোম্পানির শেয়ার ২৫.২৪% কমে ২৩ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে এসেছে।

বারাকা পাওয়ার: বারাকা পাওয়ারের শেয়ার ২৩.৪৮% কমে ৮ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

এই আকস্মিক দরপতন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ অনেকেই তাদের পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন।

কেন এই পতন এবং এর পেছনের কারণ:

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে নামলে সাধারণত তারল্য সংকট দেখা দেয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। এতে শেয়ারের ক্রেতা কমে যাওয়ায় দরপতন হয় এবং অনেক বিনিয়োগকারী বাধ্য হয়ে "লস কাট" দেন, যার ফলে তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ে।

ডিএসই-এর তথ্য অনুযায়ী, জাহিন স্পিনিং এবং বারাকা পাওয়ার—এই দুটি কোম্পানির উৎপাদন ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এই দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদন বন্ধের কারণেই তাদের বি ক্যাটাগরি থেকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে, এইচআর টেক্সটাইলের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল; রিজার্ভ সমন্বয়ের পরেও কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসান পরিশোধিত মূলধনকে ছাড়িয়ে গেছে, যা এর চরম আর্থিক অস্থিতিশীলতার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

তবে কি সব শেষ? আশার ক্ষীণ আলো:

বর্তমান পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য নেতিবাচক হলেও, বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব আশার আলো নিভে যায়নি। অতীতেও এমন অনেক কোম্পানি দেখা গেছে যারা জেড ক্যাটাগরিতে নেমে যাওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং পরবর্তীতে 'বি' বা 'এ' ক্যাটাগরিতে ফিরে এসেছে।

বারাকা পাওয়ার: বিদ্যুৎ খাতের একটি কোম্পানি হওয়ায়, সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব ভবিষ্যতে বারাকা পাওয়ারের জন্য ইতিবাচক সুযোগ তৈরি করতে পারে।

জাহিন স্পিনিং: যদি জাহিন স্পিনিং তার উৎপাদন পুনরায় শুরু করতে সক্ষম হয়, তবে এর কম দামের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের নতুন আগ্রহের কারণ হতে পারে।

এইচআর টেক্সটাইল: সুদূর ভবিষ্যতে এইচআর টেক্সটাইলের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হতে পারে, যদি তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

ডিভিডেন্ডের হালচাল:

কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক ডিভিডেন্ড প্রদানের চিত্র নিম্নরূপ:

বারাকা পাওয়ার: সর্বশেষ ২০২৪ সালে ৩.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

এইচআর টেক্সটাইল: ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

জাহিন স্পিনিং: ২০২৩ সালে ০.২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে।

বিনিয়োগকারীদের উচিত বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। এই কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক স্বাস্থ্য ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ