ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারের নীরব বিপ্লব: বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় বিএসইসি!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৫:৫৯:১৬
শেয়ারবাজারের নীরব বিপ্লব: বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় বিএসইসি!

গতানুগতিক আয়োজনের ধারা ভেঙে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবার বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উদযাপন করেছে এক অভিনব কৌশলে। ০৬ অক্টোবর রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিএসইসি কার্যালয়ে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনুপস্থিতি শুরুতে কৌতূহল সৃষ্টি করলেও, এটি ছিল মূলত শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি তথ্য সুরক্ষায় এক সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ। নীতিনির্ধারকদের এক বিশেষ 'হাই-টেক' কর্মশালা থেকেই শুরু হয়েছে এই নীরব বিপ্লব।

কেন এই নীরবতা? প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকির মুখে নতুন কৌশল

বিশ্বের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনস (আইওএসসিও)-এর এবারের প্রতিপাদ্য ছিল "প্রযুক্তি ও এআইনির্ভর আর্থিক শেয়ার লেনদেনের ঝুঁকি ও তথ্য সুরক্ষা"। এই অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং অত্যাধুনিক বিষয় নিয়ে বিএসইসি কোনো তাড়াহুড়ো করতে চায়নি।

বরং, তারা প্রথম ধাপে শেয়ারবাজারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী, ব্রোকার হাউসের সিইও এবং আইনি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি 'কোর গ্রুপ' গঠন করে। এই কোর গ্রুপের মূল লক্ষ্য ছিল, প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার এবং বিনিয়োগকারী তথ্য সুরক্ষার জন্য একটি সমন্বিত ও শক্তিশালী কৌশল তৈরি করা, যা পরবর্তীতে বৃহত্তর বিনিয়োগকারী মহলে পৌঁছে দেওয়া হবে।

আইনি সুরক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি: অ্যাটর্নি জেনারেলের বার্তা

বিএসইসি-এর চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বয়ং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইনি কাঠামো জোরদার করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এছাড়া, বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ইয়াওয়ার সায়ীদ এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার জিসান হায়দার কর্তৃক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ইঙ্গিত দেয় যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আইনগত এবং প্রযুক্তিগত উভয় দিক থেকেই বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।

আলোচনার গোপনীয়তা ও চূড়ান্ত স্বচ্ছতা

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি ছিল আলোচনার সংবেদনশীলতা ও গুরুত্ব বজায় রাখার জন্য। যদিও একজন সাংবাদিকের উপস্থিতির খবরে একজন কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক উদ্বেগ প্রকাশ—বিএসইসি তার অভ্যন্তরীণ নীতি ও গোপনীয়তাকে কতটা মূল্য দেয়, তা প্রমাণ করে। একই সময়ে, সংস্থার মুখপাত্র আবুল কালামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সমস্ত তথ্য দ্রুত প্রকাশের আশ্বাস নিশ্চিত করে যে, কৌশলগত নীরবতা সত্ত্বেও চূড়ান্ত লক্ষ্যে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই বিএসইসি বদ্ধপরিকর।

ডিজিটাল সেমিনারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর দুয়ারে শিক্ষা ও সুরক্ষা

প্রাথমিক প্রস্তুতির পর্ব শেষ হওয়ার পর, এবার মূল পর্বের পালা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান জানিয়েছেন, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ এবং মার্চেন্ট ব্যাংক সমিতি বিএমবিএ যৌথভাবে জুম প্ল্যাটফর্মে একটি অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছে।

এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই প্রথম ধাপে তৈরি হওয়া সুরক্ষা কৌশল এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর বিনিয়োগ শিক্ষা, যা আইওএসসিও-এর মূল নির্যাস বহন করে, তা লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এটি স্পষ্টতই বোঝায় যে, বিএসইসি প্রথমে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে নিয়ে এবার বিনিয়োগকারীদের জন্য তা উন্মুক্ত করছে।

প্রশ্ন জাগায় বিএসইসি-এর 'নিঃশব্দ বিপ্লব'

বিএসইসি-এর এই অভিনব পদক্ষেপ দ্বিধাহীনভাবে প্রমাণ করে যে, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের মূল লক্ষ্য—বিনিয়োগ শিক্ষা, আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা—এবার গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে আরও টেকসই এবং কার্যকরী উপায়ে সম্পন্ন হবে।

তবে, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই 'নিঃশব্দ বিপ্লব' নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর কৌতূহল থেকেই যায়। পর্দার আড়ালে এত বড় কৌশলগত প্রস্তুতি—যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সরাসরি অনুপস্থিত ছিলেন—তা কি শুধুই আগামী দিনের সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলা করার একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ, নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে শেয়ারবাজারের বৃহত্তর কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনো অজানা ইশারা? বিএসইসি-এর এই 'নীরব পরিবর্তনের বিপ্লব' কেবল আলোচনার জন্ম দিচ্ছে না, এটি জন্ম দিচ্ছে রহস্যময় প্রত্যাশারও।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ