ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

বিদেশি বিনিয়োগে নতুন মোড়: কতটা ইতিবাচক?

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৩ ১২:০১:৫৩
বিদেশি বিনিয়োগে নতুন মোড়: কতটা ইতিবাচক?

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) কিছুটা গতি অর্জন করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এফডিআই বেড়েছে পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে মোট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রান্তিক প্রবৃদ্ধি।

তবে, এই পরিসংখ্যান যতটা আশাব্যঞ্জক দেখাচ্ছে, এর গভীরে রয়েছে কিছু উদ্বেগের দিক। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এফডিআই বৃদ্ধির এই গতি মূলত পুরোনো বিনিয়োগকারীদের পুনঃবিনিয়োগের ফল। নতুন প্রকল্প বা নতুন বিদেশি মূলধনের আগমন তেমন চোখে পড়ছে না। এর ফলে, যদিও সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগের পরিধি বাড়ছে, কিন্তু নতুন শিল্প প্রবাহের গতি এখনও মন্থর।`পুনঃবিনিয়োগ: আস্থার প্রতীক, না সীমাবদ্ধতা?

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিস্তারিত পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে পুনঃবিনিয়োগের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬৮ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর অর্থ হলো, যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, তারাই তাদের মুনাফা বা রিজার্ভের একটি বড় অংশ পুনরায় বিনিয়োগ করছে। এটি বর্তমান বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি আস্থার ইঙ্গিত দিলেও, একইসাথে নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরছে।

নতুন মূলধনে অশনি সংকেত:

পুনঃবিনিয়োগের এই ইতিবাচক চিত্রের বিপরীতে নতুন মূলধন বিনিয়োগ (ইকুইটি ইনফ্লো) উদ্বেগজনক হারে কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে যেখানে নতুন মূলধন ছিল প্রায় ২১৩ মিলিয়ন ডলার, সেখানে এবার তা ৬২ শতাংশ কমে মাত্র ৮১ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এটি একটি গুরুতর বিষয়, কারণ নতুন মূলধন বিনিয়োগই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং অর্থনীতির বহুমুখীকরণের মূল ভিত্তি।

অন্তরায়সমূহ: সংকট ও অনিশ্চয়তা:

এছাড়াও, আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে, যা সামগ্রিক বিনিয়োগ সক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য সংকট, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং প্রকল্প অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রিতা নতুন বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আসতে নিরুৎসাহিত করছে। দেশের বর্তমান ডলার সংকট নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, নীতি প্রণয়নে ধারাবাহিকতার অভাব এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।`ভবিষ্যৎ পথ:

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ এবং বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুত করা অপরিহার্য। দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য নতুন শিল্পের আগমন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র পুরোনো বিনিয়োগকারীদের পুনঃবিনিয়োগের উপর নির্ভর করে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বর্তমান চিত্রটি একদিকে যেমন বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতিফলন, তেমনি অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারলে বাংলাদেশ সত্যিই বিদেশি বিনিয়োগের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে আরও গতিশীল করতে সক্ষম হবে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ