ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

লঙ্কাবাংলা-এপেক্স ট্যানারির শেয়ারে মহাবিপর্যয়: কী করবেন বিনিয়োগকারীরা?

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৫ ১৯:০৮:১৫
লঙ্কাবাংলা-এপেক্স ট্যানারির শেয়ারে মহাবিপর্যয়: কী করবেন বিনিয়োগকারীরা?

আজ যখন দেশের শেয়ারবাজারে সূচকের ব্যাপক পতন হচ্ছে, ঠিক তখনই দুটি ঐতিহ্যবাহী কোম্পানির 'নো ডিভিডেন্ড' ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি করেছে। লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স এবং এপেক্স ট্যানারি – এই দুই কোম্পানি তাদের দীর্ঘদিনের ডিভিডেন্ড প্রদানের ঐতিহ্য ভেঙে 'নো ডিভিডেন্ড' ঘোষণা করায় শেয়ারবাজারে তাদের দরপতন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পতনের শীর্ষ তালিকায় আজ এই দুটি কোম্পানি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে।

লঙ্কাবাংলা ও এপেক্স ট্যানারির শেয়ারে বড় ধাক্কা

বিনিয়োগকারীদের কাছে একসময় নিয়মিত ডিভিডেন্ড প্রদানকারী হিসেবে পরিচিত এই কোম্পানিগুলোর অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য 'নো ডিভিডেন্ড' ঘোষণা করায় কোম্পানিটির শেয়ারদর এক দিনেই ১২.৭৩ শতাংশ কমে গেছে। শেয়ারটি ১৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে নেমে ১৪ টাকা ৪০ পয়সায় স্থির হয়েছে।

অন্যদিকে, এপেক্স ট্যানারি লিমিটেড ৩০ জুন, ২০২৫ অর্থবছরের জন্য 'নো ডিভিডেন্ড' ঘোষণার কারণে দর কমেছে ১২.০১ শতাংশ। শেয়ারটি ৬৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে ৬০ টাকা ১০ পয়সায় নেমে এসেছে। এই দুটি কোম্পানির শেয়ারের এমন বিপর্যয়কর পতন এর আগে কখনো দেখা যায়নি, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারাচ্ছে, বাজার উদ্বিগ্ন

তালিকাভুক্তির পর থেকে বিনিয়োগকারীরা এই কোম্পানিগুলো থেকে নিয়মিত ডিভিডেন্ডের প্রত্যাশা করে আসছিলেন। সেই ঐতিহ্যে ছেদ ঘটায় তাদের আস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরেছে। এই বিপুল দরপতন স্পষ্টতই বাজারে এই দুই কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর ইঙ্গিত দেয়। শেয়ারের মূল্যে এত বড় পরিবর্তন আসার প্রধান কারণ হলো, বাজার এই কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা বিনিয়োগকারীদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা।

ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো?

তবে, এই চরম নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্লেষকরা ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো দেখছেন। তারা মনে করেন, 'নো ডিভিডেন্ড' সিদ্ধান্তটি কোম্পানি দুটির আর্থিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুনাফার পুরো অংশটি সংরক্ষিত রাখা হয়, যা ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক সক্ষমতা বাড়াতে এবং যেকোনো আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।

এছাড়াও, এই ব্যাপক দরপতনকে অনেকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন। লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন দর ১৩ টাকা ৬০ পয়সা এবং এপেক্স ট্যানারির দরও ৫২ সপ্তাহের নিম্নসীমার খুব কাছাকাছি চলে আসায়, এই পতন আকর্ষণীয় ক্রয় পথ তৈরি করেছে। যেসব বিনিয়োগকারী কোম্পানির মৌলিক কাঠামো এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বাসী, তারা এই কম দামে শেয়ার সংগ্রহ করে ভবিষ্যতে লাভবান হওয়ার সুযোগ খুঁজছেন।

বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী করণীয়

পরিশেষে বলা যায়, এই দুই কোম্পানির 'নো ডিভিডেন্ড' ঘোষণা শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ ও দরপতন সৃষ্টি করলেও, এখন কোম্পানি দুটির ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং আগামী অর্থবছরের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করেই বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা এই পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে কোম্পানির ভবিষ্যৎ কৌশল পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ