ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

পুঁজিবাজারে স্বস্তি: বিএসইসি'র ‘মার্জিন রুলস নীতিমালা ২০২৫’ আসলো নতুন সিদ্ধান্ত

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১৮:৩০:২৬
পুঁজিবাজারে স্বস্তি: বিএসইসি'র ‘মার্জিন রুলস নীতিমালা ২০২৫’ আসলো নতুন সিদ্ধান্ত

আজ দেশের পুঁজিবাজারে বহুল আলোচিত 'মার্জিন রুলস নীতিমালা ২০২৫'-এর ওপর এনেকস ৩৪ নং কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ ইনজাংশন জারি করেছে। একইসঙ্গে, আদালতের এই আদেশে সকল 'ফোর্স সেল' বা জোরপূর্বক শেয়ার বিক্রয় কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মার্জিন সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ থেকে আপাতত স্বস্তি পেলেন বিনিয়োগকারীরা।

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কর্তৃক প্রণীত ‘মার্জিন রুলস নীতিমালা ২০২৫’ কার্যকর হলে মার্জিন অর্থায়ন এবং শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসতো। কিন্তু এনেকস ৩৪ নং কোর্টের আদেশের ফলে এই নীতিমালার বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রইল।

স্থগিত হওয়া মার্জিন নীতিমালার কঠোর শর্তাবলী

যে মার্জিন রুলস নীতিমালাটি আদালত কর্তৃক স্থগিত হলো, তাতে একাধিক কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। নীতিমালার প্রধান প্রধান শর্তগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

১. ক্যাটাগরি এবং লভ্যাংশ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ:

মার্জিন অর্থায়নকারী স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত শুধুমাত্র ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ারসমূহে অর্থায়ন করতে পারত।

শর্ত ছিল, ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোনো কোম্পানি বার্ষিক ন্যূনতম ৫ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ না করলে সেই শেয়ারে মার্জিন অর্থায়ন করা যেত না।

যদি মার্জিন অর্থায়নকৃত কোনো শেয়ার পরবর্তীতে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রূপান্তরিত হয়, অথবা ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোনো কোম্পানি ৫% লভ্যাংশ প্রদান না করে, তবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে নোটিশ দিয়ে পরবর্তী ৬০ ট্রেডিং দিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে উক্ত শেয়ার বিক্রয় করে হিসাব সমন্বয় করতে হতো।

২. প্ল্যাটফর্ম ও সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা:

স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই, এটিবি বা ওটিসি প্ল্যাটফর্ম বা বোর্ডে তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিতে মার্জিন অর্থায়ন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।

যদি বিদ্যমান মার্জিন হিসাবে রক্ষিত কোনো সিকিউরিটি এই বিধিমালা কার্যকর হবার কারণে নন-মার্জিনেবল (non-marginable) হয়ে যেত, তবে ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে তা আবশ্যিকভাবে বিক্রয় করে হিসাব সমন্বয় করার শর্ত ছিল।

৩. মার্জিন অর্থায়নে নূন্যতম বিনিয়োগ ও পোর্টফোলিও শর্ত (১১ নং ধারা):

কোনো গ্রাহকের হিসাবে, মার্জিন অর্থায়ন দিবসের অব্যবহিত পূর্বের ১ (এক) বছরে গড়ে ন্যূনতম ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকার বিনিয়োগ না থাকলে, উক্ত হিসাবে মার্জিন অর্থায়ন করা যেত না।

মার্জিন অর্থায়ন দিবসে পোর্টফোলিওতে ন্যূনতম ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা বা সমমূল্যের মার্জিন সংরক্ষিত না থাকলে অর্থায়ন করা যেতো না।

বিদ্যমান গ্রাহকের ক্ষেত্রে, পোর্টফোলিও মূল্য ৫ লক্ষ টাকার কম থাকলে, গেজেট প্রকাশের ১ (এক) বছরের মধ্যে তা ৫ লক্ষ টাকায় উন্নীত করতে হতো।

৪. বাজার মূলধন ও পি/ই রেশিও শর্ত (১১ নং ধারা):

মার্জিন অর্থায়নের জন্য বিবেচিত সিকিউরিটির উন্মুক্ত বাজার মূলধন (free float market capital) ন্যূনতম ৫০ (পঞ্চাশ) কোটি টাকা না হলে তাতে কোনো মার্জিন অর্থায়ন করা যেতো না।

মার্জিন অর্থায়নের জন্য বিবেচ্য সিকিউরিটির পূর্ববর্তী মূল্য-আয় (P/E) অনুপাত ৩০ (ত্রিশ) এর অধিক হলে উহাতে কোনো মার্জিন অর্থায়ন করা যেত না।

৫. অন্যান্য কঠোর বিধি-নিষেধ:

কোনো ইস্যুয়ার কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে নিরীক্ষক কর্তৃক কোম্পানি বা ব্যবসার অস্তিত্বের হুমকি সংক্রান্ত বিরূপ মন্তব্য থাকলে, সেই শেয়ারে মার্জিন অর্থায়ন করা যেত না।

মার্জিন অর্থায়নকারী বা উহার উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত কোনো সিকিউরিটিতে মার্জিন অর্থায়ন নিষিদ্ধ ছিল।

কোনো পাবলিক অফার বা রাইট ইস্যুতে অংশগ্রহণের নিমিত্ত মার্জিন অর্থায়ন করা যেত না।

কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালককে, কোনো অবস্থাতেই, স্বীয় কোম্পানির কোনো শেয়ার ক্রয়ের নিমিত্ত মার্জিন অর্থায়ন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।

গ্রাহকের লককৃত বা বন্ধকীকৃত শেয়ারকে মার্জিন হিসেবে জমা রেখে কোনো মার্জিন অর্থায়ন করা যেত না।

এনেকস ৩৪ নং কোর্টের এই ইনজাংশন জারি হওয়ায় ‘মার্জিন রুলস নীতিমালা ২০২৫’ এর কঠোর বিধিনিষেধগুলো আপাতত স্থগিত রইল। আদালতের এই আদেশের ফলে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখা যাচ্ছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ