ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

জনসমুদ্রে অন্তিম বিদায়: চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ৩১ ১৫:২০:০৭
জনসমুদ্রে অন্তিম বিদায়: চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া

এক বিষণ্ণ বিকেলের সাক্ষী হলো রাজধানী ঢাকা। অগণিত মানুষের ভালোবাসা আর অশ্রুভেজা নয়নে চিরবিদায় নিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজা শেষে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মানুষের ঢল

সকাল থেকেই রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরো এলাকাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বেলা ৩টার পর বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেকের ইমামতিতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সংসদ ভবন এলাকা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে আশেপাশের প্রধান সড়কগুলোতেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। হাজার হাজার মানুষ মূল মাঠে জায়গা না পেয়ে রাস্তা ও ফুটপাতে দাঁড়িয়ে জানাজায় শরিক হন। এ সময় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়; প্রিয় নেত্রীকে হারানোর শোকে লাখো মানুষকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।

জানাজায় রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক উপস্থিতি

দেশের এই সংকটে ঐক্যবদ্ধ সংহতি প্রকাশ করতে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।

বিদেশের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও প্রতিনিধিরাও জানাজায় অংশ নিয়ে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। জানাজা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান।

আপসহীন সংগ্রামের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পথচলা

দীর্ঘ ৪১ বছর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির হাল ধরে রাখা এই নেত্রী ছিলেন অকুতোভয় দেশপ্রেমের উদাহরণ। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে রাজনীতির মাঠে থাকা খালেদা জিয়া গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে কখনও আপস করেননি।

রাজনৈতিক জীবনে কারাবরণ ও নানা প্রতিকূলতা সহ্য করলেও তিনি মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। জীবনের শেষ দিনগুলোতেও তিনি জেল-জুলুম ও কঠোর শাসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যা তাঁকে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে এক অবিসংবাদিত অবস্থানে নিয়ে গেছে।

শেষযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো অবস্থায় এই নেত্রীর মরদেহ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নিয়ে আসা হয়। এরপর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে লাল-সবুজ পতাকায় সজ্জিত ফ্রিজার ভ্যানে করে জানাজাস্থলে তাঁর কফিন নেওয়া হয়।

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শেরে বাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে চিরসমাহিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সমাহিত করার সময় উপস্থিত থাকবেন পরিবারের সদস্য ও মনোনীত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। দাফন প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে ওই এলাকায় জনসাধারণের চলাচল সাময়িকভাবে সীমিত করা হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়ার এই বিদায় কেবল একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়, বরং কোটি মানুষের হৃদয়ে দেশপ্রেমের এক গভীর ছাপ রেখে যাওয়া।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ