ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২

ভারত বনাম বাংলাদেশ: একনজরে দেখেনিন ম্যাচের সকল অনিয়ম

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২২ নভেম্বর ০৩ ২১:১৫:৫৪
ভারত বনাম বাংলাদেশ: একনজরে দেখেনিন ম্যাচের সকল অনিয়ম

প্রথমত, এই শ্রেণির লোকদের জন্য বুধবারের ম্যাচ একটা শিক্ষা। এই ম্যাচটা হারার জন্য যদি তর্ক হয়, সেখানে দুটা বিষয় নিয়ে তর্ক হতে পারে। একটা অনিয়ম, অসহযোগিতা, পক্ষপাত। অন্যটি হলো, আমাদের ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা।

প্রতিবারই এই ব্যর্থতা নিয়ে আমরা আলাপ করি, আলোচনা-সমালোচনা করি। এবারও সেই আলোচনা-সমালোচনার বিস্তর জায়গা রয়েছে; কিন্তু আজ আমি সেই বিস্তর ক্ষেত্রটা সিলেক্ট করবো না। আমার কাছে সবকিছু ছাপিয়ে ‘অনিয়ম’কেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।

প্রথমতঃ এই ম্যাচে বাংলাদেশ যখন ৭ ওভারে ৬৬ রান তুলে ফেলেছিল, তখন বৃষ্টি শুরু হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পক্ষে ছিলো খেলা। কিন্তু এর মধ্যেই হলো একটা অনিয়ম। ফেইক থ্রো করার পরও মেলেনি পেনাল্টি রান।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেলো, অক্ষর প্যাটেলের করা ইনিংসের সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ঘটে ওই ঘটনা। সীমানা থেকে আর্শদিপ সিংয়ের থ্রোয়ে বিরাট কোহলিকে দেখা গেছে বল না ধরেও থ্রো করার ভান করেছেন। ভিডিও ক্লিপ দেখে এটিকে পরিষ্কার ফেক ফিল্ডিং বলেছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও।

উইকেটে থাকা ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত তাৎক্ষণিক অভিযোগ করেছিলেন আম্পায়ারের কাছে। তবে আম্পায়ার তাকে জানান, এরকম কিছু তাদের চোখে পড়েনি। যদিও ভিডিও রিপ্লাইয়ে দেখা গেছে, লেগ আম্পায়ারের খুব কাছেই ছিলেন কোহলি। এতো কাছে থেকেও কেন এসব দেখেন না তারা এবং পরবর্তীতে সেটা কেন যাছাই করেন না? তা বোধগম্য নয় আমার। এই ৫টি পেনাল্টি রান পেলে জয়টা নিশ্চয় বাংলাদেশেরই হতো!

এরপর আসা যাক, ভেজা আউটফিল্ড নিয়ে। বৃষ্টিতে ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর তড়িঘড়ি করে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিলেন আম্পায়াররা। অথচ আউটফিল্ড পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত কখনও খেলা শুরু করতে দেখা যায় না।

আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মত এতোবড় একটা আসরে এমন কান্ডও ঘটে! বড় বিষয় হচ্ছে, বৃষ্টি থামার ৭/৮ মিনিটের মাথায় মাঠে নামতে হয়েছিল দু’ দলকে। অথচ, সেখানে অন্তত ২০ মিনিট পর সাধারণত মাঠে নামে ক্রিকেটাররা। কারণ এর আগ পর্যন্ত মাঠ শুকানোর কাজ করতে হয়।

টিভি পর্দায় দেখা গেলো, আম্পায়াররা যখন ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিলেন তখন ড্রেসিংরুমের সামনে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলছেন সাকিব, সেখানে উপস্থিত ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথাবার্তায় সাকিব অসন্তুষ্ট হলেও তাদের না খেলে কোনো উপায় ছিলো না। এ যেন ভারতের জন্য সুবিধার আর সহযোগিতা দিতে ব্যস্ত আম্পায়াররা এবং আইসিসিও।

এরপর আসা যাক, ডিএল মেথড নিয়ে। ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর মাত্র ৪ ওভার কমানোর সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয় আম্পায়াররা? সেটাও বড় প্রশ্ন। বৃষ্টির শুরুর পর যে সময় অতিবাহিত হয়েছে, তাতে নিয়ম অনুযায়ী যেখানে ৬ থেকে ৮ ওভার কার্টেল করে ১২ কিংবা ১৪ ওভার খেলা হওয়ার দেওয়ার নিয়ম, সেখানে তারা ভারতের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে ১৬ ওভার খেলিয়েছে বাংলাদেশকে।

এসব নিয়ে বাংলাদেশের কোনো ধরনের মন্তব্য শুনেনি আম্পায়াররা। শুধু কি তাই! বিরাট কোহলি মাঠে বারবার আম্পায়ারদের উপর যেভাবে প্রভাব খাটাচ্ছিলেন এবং আম্পায়াররা যেভাবে বিরাটের কথা গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত দিচ্ছিলেন, সেটাও বড় প্রশ্নবিদ্ধ।

বৃষ্টির পর লিটন যখন ভেজা মাঠে খেলতে নামছে তখন আম্পায়ার ইরাসমাসকে বিরক্ত ও রাগ নিয়ে কিছু একটা বলছিলেন তিনি। টিভিতে স্পষ্ট সেটা দেখা গিয়েছে। হয়তো এই ভেজা মাঠ নিয়েই বলেছেন তিনি।

প্রথম রানেই লিটন একবার পিছলে পড়ে যান এবং ২য় বার রান আউটই হয়ে গেলেন তিনি। পরপর দুইবার পিছলে পড়ে যাওয়ার পরও এ বিষয় নিয়ে আইসিসির টনক নড়েনি। একটা বৈশ্বিক আসরে কিভাবে এমন হয়, সেটাও কল্পনার বাইরে। লিটনের সেই আউট বাংলাদেশ দলের জন্য কতটা ক্ষতি হয়েছে- তা তো স্পষ্টই দেখা গেলো। লিটন থাকলে এই ম্যাচ কি হতো সেটা স্বয়ং আইসিসিও জানতো নিশ্চয়ই।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এমন ঘটনা যদি এবারই প্রথম হতো তাহলেও মানা যেতো। যদিও প্রথম আর দ্বিতীয় কোনোবারই এমন ভুল প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু ভুলটা যখন একই দলের বিপক্ষে বারবার হয় তখন এটা অন্যকিছুর বার্তা দেয়।

এই অস্ট্রেলিয়াতেই ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিতে উঠেছিল ভারত; কিন্তু সেবারও ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল পেসার রুবেল হোসেনের যে বলে রোহিত শর্মা ক্যাচ দিয়েও নো বলের কল্যাণে নতুন জীবন পান, সেটা।

বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা এখনও বিশ্বাস করেন সেই বলটি ‘নো’ ছিল না। সেসঙ্গে ফুলটস বলকে ‘নো’ বল বানিয়ে দেওয়া নিয়ে সে সময় কতশত ঝড় উঠেছে! ওইদিনও বাউন্ডারি লাইনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচটা ধরতে গিয়ে শিখর ধাওয়ান বাউন্ডারি লাইনে পা লাগিয়ে দেয়ার পরও আউট দেয়া হয়।

পরিষ্কার বিষয় ছিল যে, ওটি ক্যাচ নয়, ছক্কাই হয়েছে। প্রেসবক্সে ভারতীয় সাংবাদিকরাও বলছিলেন, সেটি ছক্কা হয়েছে। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে গড়িমসি করে, ভালোভাবে না দেখেই দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া হয়েছিলো সেদিন। ভারতের বেলায় যেটা ওয়াইড, বাংলাদেশের বেলায় সেটি আবার বল হিসেবেও গণ্য হয়।

এই এতোকিছুর পরও এই ২০২২ সালে এসে আবারও এমন কাণ্ড ঘটেছে! এ সমস্যা নিয়ে সেই ১৫ সালেও অভিযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এবারও অভিযোগ দিবে বলেছে বিসিবি; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ থেকে এক প্রকার ছিনতাই করে ম্যাচ জিতে যায় ভারত।

সুতরাং এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ যদি না নেওয়া হয়, এতে অদূর ভবিষ্যতে ক্রিকেটেরই ক্ষতি হবে। আইসিসির যে ক্রিকেট গ্লোবাইজেশনের চিন্তা সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়- যদি এমন ঘটনা নিয়মিত চলতে থাকে।

সে সাথে আম্পায়রদের ভারতপ্রীতিটাও বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব নিয়েও আইসিসিকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার জন্য আম্পায়াররা যে পরিমাণ ভারতের দালালি করেন, সেটা সত্যি বলতে অতিমাত্রায় নোংরামি। আর সে সব নোংরামি বন্ধ করতে হলে আইসিসিকে আরও কঠোর এবং নিরপক্ষ হতে হবে। আদৌ আইসিসি নিরপক্ষ হবে কি-না সেটাই এখন বড় প্রশ্ন!

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ