ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২

বাংলাদেশের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকা প্রকাশ

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৩ জানুয়ারি ০২ ১৪:৪০:৩৫
বাংলাদেশের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকা প্রকাশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ জেতা (২টি) এবং সবশেষ ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জেতা। এরকম অনেক অর্জন যেমন দেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট তেমনই চরম ভরাডুবি ও দেখতে হয়েছে দেশবাসীকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি২০ সিরিজ হার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া।

ঘরের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। এছাড়াও এশিয়া কাপ এবং ত্রিদেশীয় সিরিজে একটি ম্যাচও জিততে না পারা। তাই বলাই চলে মিশ্র অনুভূতির এক বছরই কাটিয়েছে টিম টাইগার্স। তবে দলের জয় পরাজয় ছাপিয়ে ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটে ছাপ রেখেছে দেশের কিছু ক্রিকেটাররা। তাদের মধ্য থেকেই বাছাই করা হয়েছে স্পোর্টস আওয়ার ২৪ এর মতে বর্ষসেরা পাঁচ জন বাংলাদেশি ক্রিকেটার।

নিঃসন্দেহে বর্ষসেরা বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের তালিকায় শীর্ষে থাকবেন লিটন কুমার দাস। শুধু দেশের শীর্ষ পাঁচে নয় বিশ্বেরই শীর্ষ পাচে থাকার দাবিদার এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৯২১ রান করেছেন লিটন! ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশেই এই ব্যাটার। লিটনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন শুধুই পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম।

এছাড়া বিশ্বের সব বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা পিছনে রয়েছেন লিটন দাসের। তৃতীয় স্থানে থাকা শ্রেয়াস আইয়ারের চেয়ে ৩১২ রান বেশি করেছেন লিটন দাস। নিঃসন্দেহে ২০২২ সালে দেশের ক্রিকেটের তথা বিশ্ব ক্রিকেটেরই অন্যতম সেরা পারফর্মার লিটন কুমার দাস। বর্ষসেরা দেশি ক্রিকেটারদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকবেন তাসকিন আহমেদ। বছরজুড়ে তাসকিন এর যে পারফরমেন্স ছিল তাতে দেশের বর্ষসেরা ক্রিকেটার হওয়ারই দাবিদার এই গতি তারকা। তবে লিটনের অতিমাণবীয় পারফরমেন্সের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় স্থানেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে তাসকিনকে।

বছর শুরু করেছিলেন মাউন্ট মাঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করে। ১২ বলের ব্যবধানে চার উইকেট নিয়ে এবাদত হোসেন ম্যাচের প্রেক্ষাপট বদলে ফেলায় লাইম লাইটের বাইরে চলে যায় তাসকিন। তবে পুরো ম্যাচ জুড়ে তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতেই উইকেট গুলো স্বীকার করতে পারে এবাদত। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট শিকার করে এবাদতকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন তাসকিন।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পার্শ্ব চরিত্রে থাকা তাসকিনই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বনে যান ম্যাচের মহানায়ক। প্রথম ওয়ানডেতে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহ পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনআপের বিপরীতে টার্গেটটি কতটা সুরক্ষিত এ ব্যাপারে যথেষ্ট দুশ্চিন্তার অবকাশ ছিল। তবে তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সৌজন্যে ম্যাচটি বেশ অনায়াশেই জিতে যায় লাল সবুজ ধারীরা।

দ্বিতীয় ম্যাচে বাজেভাবে হারতে হয় টাইগারদের, তাসকিনের পারফরমেন্সও ছিল হতাশাজনক পুরো ম্যাচে উইকেট শূন্য ছিলেন এই পেসার। তবে ছন্দপতন হওয়ার পর মুহুর্তেই পুনরায় ছন্দ ফিরে পান তাসকিন। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে যে পারফরম্যান্স করেছেন তা এখনো চোখে ভেসে রয়েছে হাজারো ক্রিকেট সমর্থকের। ৯.১ ওভার বল করে ৩৬ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেন তাসকিন। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডারকে একপ্রকার ধ্বংসই করে দেন ডান হাতি এই পেসার। ,উইজডেনের বর্ষসেরা শীর্ষ ৫ বোলিং স্পেলে জায়গা করে নিয়েছে তাসকিনের এই পারফরমেন্সটি।

বিশ্বকাপেও তাসকিনের পারফরমেন্স ছিল প্রশংসনীয়। বল হাতে প্রতিপক্ষ শিবিরকে সবসময় এক ধরনের আতঙ্কে রাখতেন এই পেসার। বিশ্বকাপের এক সময় শীর্ষ উইকেট শিকারিও ছিলেন তাসকিন। তবে দল বেশি দূর যেতে না পারায় খুব বেশি এগোতে পারেননি তিনিও। তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বছরজুড়ে নিয়মিত পারফর্ম করে গিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

তবে বছরের শুরুতে এবং শেষে যা করলেন তা এক অর্থে দুর্দান্তই বটে। বছরের শুরুতে দলের চরম বিপদের মুহূর্তে হাল ধরেন মিরাজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪৮ রানের ছয় উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে বাংলাদেশ। আফিফ হোসেন ধ্রুবকে সঙ্গে নিয়ে ১৭৪ রানের অনবদ্য পার্টনারশিপ করে ম্যাচটি জেতান মিরাজ। ব্যক্তিগত ৮১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন এই ক্রিকেটার।

ভারত সিরিজেও ব্যাট হাতে এভাবেই জ্বলে উঠতে দেখা গিয়েছে মিরাজকে। আকাশী নীলদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় শেষ ৫২ রান করে ফেলেন মিরাজ। এই চমকপদ পারফরমেন্সের পর বিশ্ববাসীর জন্য যে আরেকটি চমক অপেক্ষা করছিল তা কে জানতো। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৯ রানে টাইগারদের ষষ্ঠ উইকেটের পতনের পর মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মিরাজ।

শেষ পর্যন্ত দলের স্কোরকে ২৭১ রান পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হন এই অলরাউন্ডার। ব্যক্তিগত ১০০ রান করে মাঠ ছাড়েন এই ক্রিকেটার। দেশের ক্রিকেটের কোনো তালিকা হচ্ছে এবং এখানে সাকিবের নাম নেই তা কি করে হয়? প্রতিবারের মতো এবারও সেরাদের তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। সব সময়ের মতো এ বছরও ধারাবাহিক পারফর্ম করেছেন সাকিব। বছরের উল্লেখযোগ্য পারফরমেন্সের মধ্যে রয়েছে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ফিফটি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস এবং ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট শিকার। তালিকার পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে তরুণ তুর্কি আফিফ হোসেন ধ্রুব। নিশ্চিতভাবেই আফিফের কাছ থেকে যতটুকু আশা করা হয়েছিল ততটুকু পারফর্ম করতে পারেননি এই ক্রিকেটার। তবে এই বছর যা অর্জন করেছেন সেটাও নিহাইতি কম নয়।

বছরজুড়ে আফিফের উল্লেখযোগ্য পারফরমেন্স বলতে রয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ১৭৪ রানের অনবদ্য পার্টনারশিপটি। এই পার্টনারশিপের পরিপ্রেক্ষিতে ৪৮ রানে ৬ উইকেট থেকে টার্গেট ২১৬ রানে পৌঁছে যায় টিম টাইগার্স। ব্যক্তিগত ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কঠিন সময় আফিফের আশি উর্ধ্ব ইনিংস রয়েছে এই বছর।

এছাড়াও আরব আমিরাতের বিপক্ষে কঠিন মুহূর্তে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে দলের মান রাখেন আফিফ। সবমিলিয়ে বছরটি ভালই গিয়েছে তরুণ এই ক্রিকেটারের। তবে নিশ্চিতভাবে আরো ভালো পারফরম্যান্স আশা করা হয়েছিল তরুণ এই তুর্কির কাছ থেকে।

স্পোর্ট আওয়ার ২৪ এর বর্ষসেরা পাঁচ বাংলাদেশী ক্রিকেটার:

১. লিটন কুমার দাস

২. তাসকিন আহমেদ

৩. মেহেদী হাসান মিরাজ

৪. সাকিব আল হাসান

৫. আফিফ হোসেন ধ্রুব

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ