ঢাকা, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

বিএনপির ২৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন! আসছে নতুন ১১ প্রার্থী

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১২ ১৩:৫৫:৪৯
বিএনপির ২৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন! আসছে নতুন ১১ প্রার্থী

অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মুখে বিএনপি: ২৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের জোর গুঞ্জন, হাইকমান্ডের কড়া সতর্কতা

দু'শ আটত্রিশটি আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করার পরও দলটির ভেতরের চিত্র স্বস্তিদায়ক নয়। মাঠপর্যায়ে মনোনীত প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করলেও, অন্তত ২৩টি নির্বাচনী এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র অসন্তোষ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এই অভূতপূর্ব বিরোধের মুখে, শেষ মুহূর্তে তাদের প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় রদবদল আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে।

দলীয় ঐক্যের স্বার্থে, কোন্দল সৃষ্টিকারী এবং অসন্তোষ সামলাতে ব্যর্থ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

'ঐক্য না গড়লে পদ যাবে': কোন্দল দমনে কঠোর দলীয় নীতি

মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের কর্মকাণ্ড বর্তমানে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে—তারা বঞ্চনা ও বিদ্রোহে থাকা পুরনো ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছেন। এমনকি যারা ঐক্য প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছেন, দায়ীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, একাধিক প্রার্থীর মধ্যে একজনকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা সম্ভব হয়েছে। এখন মনোনীতদের প্রধান দায়িত্ব হলো, বঞ্চিতদের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে দ্রুত দলকে ঐক্যবদ্ধ করা। এতে ব্যর্থ হলে, ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে দল প্রার্থী পরিবর্তন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।

এদিকে, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতাদের তদন্তে উঠে এসেছে, অন্তত ২৩টি আসনে বঞ্চিত নেতারা এতই দৃঢ় অবস্থানে আছেন যে পুনর্মূল্যায়ন না হলে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামতে পারেন। নীতিনির্ধারকদের কাছে তথ্য রয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় কিছু নেতাকে অন্য রাজনৈতিক দল প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। একটি বড় দল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাদের মাঠে রাখতে চাইছে, যা বিএনপির ভোট ভাগাভাগি করে ওই দলের প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। এমন সব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া বিদ্রোহ: কোন কোন আসনে তীব্র বিরোধ?

ঘোষিত ২৩টি আসনে স্থানীয় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ এখন চরমে। কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

সাতক্ষীরায় দ্বিমুখী বিক্ষোভ: সাতক্ষীরা-২ আসনে মনোনীত আবদুর রউফের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সদর উপজেলার ৩৩ জন নেতা সরাসরি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর আবেদন জমা দিয়েছেন। একই জেলার সাতক্ষীরা-৩ আসনে 'গরিবের বন্ধু' নামে পরিচিত ডা. শহিদুল আলমের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলের একাংশ।

সংঘর্ষ ও প্রতিবাদ: ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে মনোনীত এম ইকবাল হোসেইন ও বঞ্চিত নেতা আহম্মেদ তায়েবুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হওয়ার খবর মিলেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে আব্দুল মান্নানের পরিবর্তে নাজমুল হোসেনকে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে কবীর আহমেদ ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

বিক্ষোভের আগুন: চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহারকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার সমর্থকরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

মনোনীত নেতার কন্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ: নাটোর-১ আসনে প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুলকে প্রার্থী করার পর প্রতিদ্বন্দ্বী তাইফুল ইসলাম টিপু ও ইয়াছির আরশাদ রাজনের সমর্থকরা পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

গুরুত্বপূর্ণ আসনে কোন্দল: এছাড়া সিলেট-৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, হবিগঞ্জ-৪, রংপুর-৩, কক্সবাজার-৪, মেহেরপুর-২, নরসিংদী-৪, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনসহ চট্টগ্রাম-১৬, নোয়াখালী-৫, ঠাকুরগাঁও-৩, রাজশাহী-৪ ও ৫ আসনেও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ফাঁকা আসন ও মিত্রদের সঙ্গে সমঝোতা: আসছে নতুন ১১ প্রার্থী

৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (সিলেটের একটি আসন যোগ হয়, মাদারীপুর-১ স্থগিত)। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, তালিকাটি চূড়ান্ত নয় এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন আনা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, 'কয়েকটি আসনে ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। আমরা তা ভালোভাবে হ্যান্ডল করছি, পর্যবেক্ষণ করছি।' তিনি আরও জানান, ৬৩টি ফাঁকা আসন সম্পূর্ণভাবে মিত্রদের জন্য সংরক্ষিত নয়; এর মধ্যে দলীয় আসনও রয়েছে, যেখানে কয়েক দিনের মধ্যে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

সূত্র অনুসারে, বেশির ভাগ ফাঁকা আসনে মিত্রদের ছাড় দেওয়া হতে পারে। এই বিষয়ে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে চলতি মাসের শেষ দিকে গুলশান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার কথা রয়েছে। এর আগে, দলীয়ভাবে কমপক্ষে আরও ১১টি আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে, যা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

শীঘ্রই ঘোষিত হতে পারে এমন আসনগুলো হলো: ঢাকা-৯, ঢাকা-১৮, ঢাকা-২০, মাদারীপুর-২, গাজীপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১১, ঝিনাইদহ-৪ এবং সিরাজগঞ্জ-১।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) উত্তর

প্রশ্ন ১: বিএনপি কেন প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে?

উত্তর: অন্তত ২৩টি আসনে তীব্র বিরোধ ও কোন্দল দেখা দেওয়ায় এবং মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

প্রশ্ন ২: বিএনপি কয়টি আসনে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও কোন্দল পর্যবেক্ষণ করছে?

উত্তর: ঘোষিত আসনের মধ্যে কমপক্ষে ২৩টি আসনে তীব্র বিরোধ ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের শক্ত অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

প্রশ্ন ৩: ফাঁকা ৬৩ আসনের বিষয়ে বিএনপির পরিকল্পনা কী?

উত্তর: ৬৩টি ফাঁকা আসনের বেশির ভাগই মিত্রদের জন্য রাখা হতে পারে। তবে এর মধ্যে ১১টি আসনে শীঘ্রই দলের পক্ষ থেকে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

প্রশ্ন ৪: যারা কোন্দল তৈরি করছে বা ঐক্যে বাধা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নেবে?

উত্তর: ঐক্যের উদ্যোগ নেওয়ার পরও যদি কেউ বিরোধিতা করে তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দল। এছাড়া, যারা ঐক্য তৈরি করতে ব্যর্থ হবে, তাদের প্রার্থীতাও পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে হাইকমান্ড।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ