বর্তমানে পাকিস্তানের ফর্ম অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের চেয়েও এগিয়ে
আলমের খান: সমীহ জাগানিয়া ক্রিকেট দল হিসেবে বেশ আগে থেকেই নাম রয়েছে পাকিস্তানের। তবে সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য দলগুলোর ক্ষেত্রে সেই নামটি যেমন ধারাবাহিক গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এমন কিছু হয়নি। পাকিস্তান দেশটাইতো এমন চিরায়ত নিয়ম এখানে প্রযোজ্য নয়। যেই সময় কেউ আশা করেনা ঠিক সেই সময় দুর্দান্ত কিছু করে বসে তারা। আবার যেই সময় প্রত্যাশার বেলুন ফুলিয়ে বসে আছে বিশ্ববাসী।
তখন চুপসে দেওয়ার কাজটি যেন নিজ হাতেই করেন তারা। তাই এই দল নিয়ে আশা করতে হয় না, প্রত্যাশা করতে হয় না, আবার তাচ্ছিল্য করতেও হয় না। কারণ দলটি যে পাকিস্তান। অধরাবাহিকতা যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশ্রিত। তবে সাম্প্রতিক পাকিস্তান দলটি যেন নিজেদের এতদিনের ইতিহাসে খানিকটা বিশ্বাসঘাতকতার গান গাইছে। অধরাবাহিকতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে তারা যেন শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সাম্প্রতিক সময় পাকিস্তানের ফর্ম দেখলেই ব্যাপারটি বেশ পরিষ্কার হয়ে যায়। ২০১৫ সালের দিকে টাইগারদের বিপক্ষে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় পাকিস্তান। পরবর্তী কিছু বছর পাকিস্তান ক্রিকেটে বিরাজ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক অধ্যায়। টানা দুটি এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে ভারত এবং বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ঘরের মাঠ হিসেবে পরিচিত দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলতে ব্যর্থ হয় তারা। অনেকেই সেই সময় ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ্যের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। তবে সময়ের পালা বদলে অধিনায়ক বাবরের নেতৃত্বে পাকিস্তান ক্রিকেটে শুরু হয় নতুনত্বের জয়গান। নতুন উদ্দীপনায় নতুনভাবে দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যান তরুণ এই কান্ডারী। বর্তমানে পাকিস্তান নিজেদের সেই খারাপ সময়কে অতীতের এক দুঃস্বপ্ন হিসেবেই ধরে নিয়েছে।
২০১৯ সালের পর থেকেই টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক এক দলে রূপান্তরিত হয় পাকরা। টি ২০ রাঙ্কিং এ শীর্ষে অবস্থান করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে একটি ম্যাচও না হেরে উত্তীর্ণ হয় সেমিফাইনালে। হাসান আলী সেমিফাইনালে সহজ ক্যাচটি না ফেললে হয়তো ভাগ্য তাদের নিয়ে যেত ফাইনালে। তবে তা হয়নি। অবশ্য এই পীড়া খুব বেশিদিন ভোগায়নি পাকিস্তানকে। পরবর্তী বছরই অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা উত্তীর্ণ হয় ফাইনালে। এছাড়াও বর্তমান ওয়ানডে রাঙ্কিংয়ে পাকিস্তানের অবস্থান একেবারে চূড়ায়। সবমিলিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট সঠিক পথেই এগুচ্ছে। পাকিস্তানের শক্তির সবচেয়ে বড় জায়গা তাদের ভারসাম্যপূর্ণতা। উপমহাদেশের অধিকাংশ দলগুলোই কালে কালে নায়কদের উপর নির্ভরশীল ছিল।
ভারতের শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী রাহুল দ্রাবিদরা ছিল এককালের নায়ক। কপিল শর্মা, শ্রীকান্ত এবং সুনীল গাভাস্কাররা ছিল আরেক কালের নায়ক। বর্তমানের নায়ক বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা। অবশ্য বর্তমান ভারতীয় দল অতিরিক্ত রকমের ভারসাম্যপূর্ণ তাই তারাও এক অর্থে এই নায়কদের উপর খুব একটা নির্ভরশীল নয়। তবে শ্রীলংকা বাংলাদেশ এমনকি কিছুকাল আগে পাকিস্তানওতো নায়কদের উপরই নির্ভরশীল ছিল। শ্রীলংকায় সাঙ্গাকারা, মহেলা জয়াবর্ধনে, মালিঙ্গা এবং দিলশানের যুগ ছিল একটি।
এর আগে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলংকার নায়ক ছিল জয়সুরিয়া, রানাতুঙ্গা এবং চামিন্ডা ভাসরা। বাংলাদেশতো সেই পঞ্চপাণ্ডবের কবলে পড়ে রয়েছে সেই অনন্তকাল থেকেই। পাকিস্তানও ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম এবং জাবেদ মিয়াদাদের মতো গুটি কয়েক ক্রিকেটারের উপরই নির্ভরশীল ছিল কালের পর কাল। তবে সময়ের পালা বদলে সেই পাকিস্তানই হাটছে এখন উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর মতো করে। যাদের দলে দ্বিগবিজয়ী নায়ক থাকুক বা না থাকুক তবে দলের সবাই অবদান রাখে একটু একটু করে। ফলস্রুতিতে অনায়াসেই দল পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য। এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপর চাপও পড়ে না মাত্রাতিরিক্ত। দলে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের মতো ব্যাটসম্যান থাকার পরও দল তাদের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল নয়।
দলের অভিজ্ঞ থেকে শুরু করে তরুণ সবাই কম বেশি রাখছে অবদান। তর্ক সাপেক্ষে বিশ্বসেরা পেস আক্রমণের অধিকারী পাকিস্তান দল। অবশ্য পাকিস্তানের পেস ডিপার্টমেন্ট প্রায় সবসময় ছিল প্রশংসার দাবিদার। যেন পৈত্রিক সূত্রেই এই সম্পত্তির মালিকানা পেয়ে যান পাকিস্তান দল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের স্বভাববিরুদ্ধ কিছু দিক। মূলত পাকিস্তানের পেস আক্রমণ সদা শক্তিশালী হলেও তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্ভর করত ২/৩ জন পেসারের উপরেই। ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান, আকিব জাবেদ, শোয়েব আক্তার এরকম অনেক পেসারই এসেছে পাকিস্তান দলে। তবে তৎকালীন সেরা পেসারদেরই যেন সবগুলো ম্যাচ খেলানোর সিদ্ধান্তে সংকল্পবদ্ধ ছিল নির্বাচকেরা। তবে এখন সেই গেরা কিছুটা হলেও কেটেছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অতিরিক্ত চাপের ফলে বিশ্রাম দিয়ে দিয়ে রোটেশন পদ্ধতিতে খেলানো হচ্ছে পেসারদের। তাই কখনো শাহীন শাহ আফ্রিদির জায়গায় খেলছে মোঃ হাসনাইন আবার কখনো তার জায়গায় খেলছে ওয়াসিম জুনিয়র। এই ধরনের জায়গা পরিবর্তনে পারফরম্যান্সের পরিবর্তনও কিছুটা অনুমিতই। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য ক্রিকেটার যেই আসুক না কেন পারফরম্যান্সের গ্রাফে অবনতি একেবারেই হচ্ছে না।
অবশ্য পারফরমেন্সে পরিবর্তন যে হয় না এমন নয় মাঝে মাঝে গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হতে তো দেখাই যায়। অর্থাৎ বলাই বাহুল্য পাকিস্তান দল এখন ভিন্ন এক উচ্চতায় নিজেদের উপনীত করেছে। তাই ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে বর্তমানের ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ডের চেয়েও বেশি এগিয়ে পাকরা। আর বিশ্বকাপ যেহেতু উপমহাদেশে, তাই পাকিস্তান কি কি করতে পারে তা বলার প্রয়োজন দেখছি না। ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ ছুতে পারলে কি এক অর্জনই না হবে ধারাবাহিক পাকিস্তানের জন্য। তারা পারবেন কি? পারতেও পারেন, নতুন পাকিস্তান বলে কথা।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বিএনপির ২৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন! আসছে নতুন ১১ প্রার্থী
- HSC Re-scrutiny Result 2025: বোর্ড চ্যালেঞ্জের ফল দেখুন এখানেই
- হুট করে একলাফে কমলো সোনার দাম, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি কত
- কিছুক্ষণ পর এইচএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ রেজাল্ট ২০২৫ প্রকাশ: ফল দেখুন এখানেই
- বাংলাদেশ বনাম ভারত ফুটবল ম্যাচ: কখন, কোথায় ও কবে খেলা জানুন সময়সূচি
- আইএমএফের কড়া বার্তা: ঝুঁকিতে দেশের ১৬ ব্যাংক
- পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ৩য় ওয়ানডে: ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা, সরাসরি দেখুন Live
- কিছুক্ষণ পর এইচএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ রেজাল্ট ২০২৫ প্রকাশ: অনলাইনে যেভাবে দেখবেন
- আজ রাতে মুখোমুখি ব্রাজিল বনাম সেনেগাল: লাইভ দেখার উপায় ও সময়সূচি
- এইচএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ রেজাল্ট ২০২৫ প্রকাশ: ফলাফল দেখুন এখানে
- আজ রাতে মুখোমুখি ব্রাজিল বনাম সেনেগাল: খেলাটি লাইভ দেখার সহজ উপায়
- ব্রাজিল বনাম সেনেগাল: ৮০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন সর্বশেষ ফলাফল
- এইচএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ রেজাল্ট ২০২৫ প্রকাশ: অনলাইনে যেভাবে দেখবেন
- আজ HSC Board Challenge Result 2025 প্রকাশিত হবে, যেভাবে দেখবেন রেজাল্ট
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: অল-আউট করে উল্টো বিপদে ভারত, জানুন স্কোর কার্ড