ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২

কঠিন তবে অসম্ভব নয় টাইগারদের বিশ্বকাপ জয়, দেখুন তার সমীকরণ

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৩ অক্টোবর ০৫ ১৪:০৮:২৫
কঠিন তবে অসম্ভব নয় টাইগারদের বিশ্বকাপ জয়, দেখুন তার সমীকরণ

আগের বিশ্বকাপের তুলনায় বাংলাদেশ দলে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। এশিয়া কাপে ভালো না করলেও আগের চেয়ে ম্যাচজয়ী খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি। সেটা ব্যাটিং ও বোলিংয়েও।

তাওহীদ হার্টের অন্তর্ভুক্তির পর মিডল অর্ডারের শক্তি বেড়েছে। মিডল অর্ডার থেকে ছক্কায় মুশফিকুর রহিমের খেলার ধরনে পরিবর্তন দলকে শক্তিশালী করেছে। পেস ও স্পিনের সঙ্গে দলের বোলিং কম্বিনেশনে আগে কিছুটা দুর্বলতা ছিল, অনিশ্চয়তা ছিল। এটা এখন বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ. অবশ্য পেসার, স্পিনাররাও ভালো ভূমিকা রাখছেন। এখন যদি ব্যাটসম্যানরা ভালো স্কোর করতে পারে, বোলারদের তা রক্ষা করার ক্ষমতা আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও তারা কম পুঁজি নিয়ে লড়াই করেছিল।

নতুন বলে মোস্তাফিজুর রহমানের কার্যকর বোলিংও দলের জন্য ইতিবাচক। এছাড়া ফিল্ডিংয়ে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। হয়তো তরুণ খেলোয়াড়ের সংখ্যার কারণেই। এ কারণে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা আগের চেয়ে কিছুটা বেশি।

পরিস্থিতি বাংলাদেশের পক্ষেও যেতে পারে। ভারতের কন্ডিশন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পছন্দের বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশও বড় স্কোর গড়তে পারে, যা এই বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত। তবে এবার ৩০০ বা তার বেশি স্কোর করতে হবে এবং এই দলের সেই ক্ষমতা আছে।

খেলোয়াড়দের মানসিকতায় আক্রমনাত্মক মানসিকতাও আমাদের শক্তির আরেকটি ক্ষেত্র হতে পারে। সবাই এখন ইতিবাচক ক্রিকেট খেলে। প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করেন, কিন্তু এখনও ইতিবাচক খেলেন। এই দলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের কিছু তরুণ সদস্য রয়েছে। তাদের ইতিবাচক মানসিকতা পুরো দলে ঘষে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

এর আগে বাংলাদেশ যত ভালো খেলুক না কেন, মানসিকভাবে অন্যান্য বড় দলের তুলনায় বেশ পিছিয়ে ছিল। তরুণদের আগমনের পর পরিবর্তন এসেছে। এখন তারা ভাবতে পারে যে তারা কোনোভাবেই কারো থেকে নিকৃষ্ট নয়। এটি বেশ পরিবর্তন।

এতে সাকিবের অধিনায়কত্ব বাড়তি লাভ হবে। সাকিব নিজেও আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়, আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে এই সিদ্ধান্তগুলো নেয় বেশ নির্ভয়ে, পিছপা না হয়ে। তার অভিজ্ঞতা, একজন অধিনায়ক হিসেবে খেলোয়াড়দের ওপর নিয়ন্ত্রণ, খেলোয়াড়দের গ্রহণযোগ্যতা—সব মিলিয়ে একই লক্ষ্য নিয়ে দল গঠন করা তার পক্ষে সহজ। খেলোয়াড়রাও তার অধীনে খেলা উপভোগ করেন।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ওয়ানডেতে ধারাবাহিকভাবে ভালো দল, যদিও তারা সম্প্রতি ওয়ানডেতে তেমন ভালো খেলেনি। সেই আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই হারায়নি। আমার মনে হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে জয়ের পর তার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে দল মানসিকভাবে এগিয়ে যাবে, যা তাদের বিশ্বকাপে ভালো করতে সাহায্য করবে।দুর্বলতার কথা বললে টপ অর্ডারে ফর্মের অভাব ছিল। লিটন দাস ও অনভিজ্ঞ তানজিদ হাসানও তেমন পার পেয়ে যাননি। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ দুজনের জন্য ভালো গেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তানজিদ ভালো করেছে। তারপরও কিছুটা অস্বস্তি থাকবেই। আরও দু-এক ম্যাচে রান করে ধারাবাহিকতা দেখালে দলকে সাহস যোগাবে।

দলে তৃতীয় কোনো ওপেনার নেই, সেই সুযোগ হয়তো হয়নি। সম্প্রতি যেগুলো চেষ্টা করা হয়েছে তাদের কেউই তেমন কিছু করতে পারেনি। প্রয়োজনে মিরাজের সাথে চেষ্টা করা যেতে পারে। মিরাজ ভালো খেলছে, তবে নিয়মিত ওপেনার আর অস্থায়ী ওপেনারের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে এই অস্থায়ী ওপেনার কতটা করবে নিশ্চিত নয়। বড় শট খেলার সক্ষমতায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশও কিছুটা পিছিয়ে থাকবে।

বেশিরভাগ দলেই হয়তো একজন লেগ স্পিনার থাকতে পারে, যেটা বাংলাদেশের নেই। যে ধরনের উইকেটে খেলা হচ্ছে তাতে সব স্পিনার সাহায্য পাবেন না। কিন্তু আমরা জানি লেগ স্পিনার মানে উইকেট নেওয়া বোলার। লেগ স্পিনাররা যেকোনো ধরনের উইকেটে কার্যকর। বাংলাদেশ সে সুবিধা পাবে না।

এবার বাংলাদেশের প্রস্তুতি মোটেও ভালো ছিল না। আমরা শেষ মুহূর্তের দল নির্বাচন, দল নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা, এশিয়া কাপ বা নিউজিল্যান্ড সিরিজে আত্মবিশ্বাস হারানোর মতো পারফরম্যান্স দেখেছি। এসব থেকে বেরিয়ে আসা স্বাভাবিকভাবেই একটি চ্যালেঞ্জ হবে।

মাহমুদউল্লাহকে দলে নেওয়া হলেও তার আগে ছয় মাস সেভাবে সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার ম্যাচ প্রস্তুতির অভাব হবে। তানজিদের ক্ষেত্রেও একই কথা। এশিয়া কাপে এক ম্যাচ খেলার পর তাকে বেঞ্চ করা হয়েছে, বোঝানো হয়েছে তিনি মূল খেলোয়াড় নন। কিন্তু তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্বকাপে। এগুলি ভাল ইঙ্গিত দেয় না। যদি আগে বোঝা যেত- মোহাম্মদ নাঈমকে দেওয়া হচ্ছে না, তাহলে তানজিদকে আরও আগে সুযোগ দেওয়া যেত। আরেকটু সাহস নিয়ে যেতে পারতেন।

এর বাইরে সাকিব ও তামিম ইকবালকে নিয়ে যে বিতর্ক এবং সেসব ঘিরে ক্রিকেট অঙ্গনে যে আলোড়ন, তার নেতিবাচক একটা প্রভাব শুরুতে ছিল অবশ্যই। আমি জানি না বোর্ড বা টিম ম্যানেজমেন্ট সেটিকে কীভাবে সামলেছে। অবশ্য একবার খেলার মধ্যে ঢুকে গিয়ে ভালো খেললে তা থেকে হয়তো বের হয়ে আসতে পারবে। তবে এর নেতিবাচক একটা প্রভাব শুরুতে থাকবে।

ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিষ্ঠিত দলগুলো লম্বা সময় ধরে নিজেদের খেলা ধরে রাখতে পারে। বাংলাদেশের মতো দলের ক্ষেত্রে সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ। খেলা ভালো হবে, খারাপ হবে। খারাপ একটি দিনের পর পারফরম্যান্স ফিরিয়ে আনাটাই চ্যালেঞ্জ। মোমেন্টামটা কতক্ষণ ধরে রাখতে পারে দলটি, সেটি দেখার বিষয়। ভিন্ন ভিন্ন মাঠে ভিন্ন কন্ডিশনে আলাদা প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা হবে। নিয়মিত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। ফলে মানসিক চাপ থাকবে। এর বাইরে মিডিয়া, সাধারণ মানুষ দলকে অনেক চাপে রাখবে। সেগুলো দল কীভাবে সামলায়, সেটিও দেখার বিষয়।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে শুধু ভালো খেললে হবে না, জিততে হবে। তাহলে দল মানসিক দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে, যেটি দলকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। সে মোমেন্টাম দিয়েই বড় দলগুলোকে বিপদে ফেলতে পারে বাংলাদেশ।

শীর্ষ চারে যাওয়াটা এমনিতে অনেক কঠিন হবে। কারণ, টুর্নামেন্টের ফরম্যাট এমন, বড় দলগুলোর সঙ্গে কয়েকটি ম্যাচ জিততে হবে। তবে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যায় না, ম্যাচজয়ী খেলোয়াড়েরা আশা জাগাতে পারে। বোলিংয়ের শক্তিটাও কিন্তু নেহায়েত খারাপ নয়।

শর্ত হলো আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডের মতো সমান শক্তির দলের বিপক্ষে হারতে হবে না। এ ছাড়া পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের দুটি; ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে যেকোনো একটি ম্যাচ জিতলে সেমিফাইনালে খেলা সম্ভব।

পথটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। চেষ্টা করলে অনেক দূর যাওয়ার ক্ষমতা আছে দলটির। তা না হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে কেউ সহজে জিতবে বলে মনে হয় না। এখন তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ