Alamin Islam
Senior Reporter
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতের অবস্থান কী? জানুন ভেতরের খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক শেখ হাসিনার ওপর মৃত্যুদণ্ড আরোপের পরও তাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের প্রশ্নে নয়াদিল্লির অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ভারতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন যে এই গুরুতর রায়ের কারণেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তাদের নীতি বদলাচ্ছে না, এবং তাকে ঢাকার হাতে তুলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
রায় ঘোষণার পর পরই ভারত এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেয়। তারা জানায় যে এই সিদ্ধান্ত তাদের নজরে এসেছে এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বিষয়টি তারা পুনর্ব্যক্ত করে।
সুরক্ষার জন্য 'সাময়িক আতিথেয়তা'
বিবিসি-র প্রতিবেদন অনুসারে, ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে আসার পর শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ভারতের নীতি অবিচল রয়েছে। নয়াদিল্লির সেই ঘোষিত অবস্থান হলো, এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতির ফল—বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ‘সাময়িক’ সময়ের জন্য এই দেশে আতিথেয়তা দেওয়া হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাজা ঘোষণার পরেও ভারতের এই নীতিতে কোনো হেরফের ঘটেনি। এর স্পষ্ট অর্থ হলো, তাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত বা ভারতে তার বর্তমান অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
প্রত্যর্পণের অনুরোধ ও নীরবতা ভাঙার চাপ
তবে, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে, শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা অনুরোধের ভবিষ্যৎ কী, সেই প্রশ্ন এখন সামনে আসছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে এই সংক্রান্ত একটি কূটনৈতিক পত্র বা ‘নোট ভার্বাল’ ভারতকে পাঠানো হয়েছিল। ভারত দুই দিনের মধ্যে তা গ্রহণের স্বীকৃতি জানালেও, সেই অনুরোধের বিষয়ে তারা কী ভাবছে বা কী অবস্থান নিচ্ছে, তা নিয়ে আজ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শব্দ খরচ করেনি। প্রায় এক বছর ধরে এই বিষয়ে তারা নীরবতা পালন করে আসছে। তবে এখন, সাজা ঘোষণার পর, এই নীরবতা ভাঙার জন্য ভারতের ওপর চাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে, একান্ত আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বারংবার উল্লেখ করেছেন যে, প্রত্যর্পণ চুক্তির অসংখ্য ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে তারা এই হস্তান্তরের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে বা দিনের পর দিন ধরে ঝুলিয়ে রাখতে পারে। প্রয়োজন হলে ভারত যেকোনো মুহূর্তে সেই আইনি রাস্তাও নিতে প্রস্তুত।
পরিস্থিতি পাল্টেছে: এখন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক
গত বছরের ডিসেম্বরে যখন প্রথম নোট ভার্বাল পাঠানো হয়, তখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুধু জুলাই গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল; তখনো চার্জ গঠন বা রায় ঘোষণা অনেক দূরে ছিল।
কিন্তু আজকের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের আদালতে গণহত্যার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত একজন অপরাধী। এমন একজন অন্য দেশের পলাতক ও দণ্ডিত ব্যক্তিকে ভারত কেন দিনের পর দিন আশ্রয় দিচ্ছে, সেই কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য নয়াদিল্লির ওপর এখন অবশ্যই চাপ তীব্র হবে।
যদিও এই চাপ বাড়লেও, ভারতের মৌলিক অবস্থান বদলাচ্ছে না। অর্থাৎ, শেখ হাসিনাকে আতিথেয়তা দেওয়ার জন্য ভারতকে হয়তো এখন বিভিন্ন সাফাই বা ব্যাখ্যা দিতে হবে, কিন্তু তাকে কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হবে না।
প্রত্যর্পণ চুক্তির আইনি কৌশল
২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে: যার হস্তান্তরের অনুরোধ করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি যদি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতি’র হয়, তবে সেই অনুরোধ সরাসরি খারিজ করা যেতে পারে।
তবে, এই চুক্তিতে হত্যা, গুম, অনিচ্ছাকৃত হত্যা, বোমা বিস্ফোরণ ও সন্ত্রাসবাদের মতো বহু অপরাধকে ‘রাজনৈতিক’ নয় বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, গুম ও নির্যাতনের মতো অভিযোগ থাকায়, আপাতদৃষ্টিতে এই ধারা ব্যবহার করে অনুরোধ খারিজ করা কঠিন হতে পারে।
চুক্তির জটিলতা আরও বাড়ে ২০১৬ সালের সংশোধনীতে। সংশোধিত চুক্তির ১০(৩) ধারায় বলা হয়েছিল, কোনো অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে অভিযোগের পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না-করলেও চলবে, কেবল আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলেই তা বৈধ অনুরোধ হিসেবে গণ্য হবে।
কিন্তু এরপরেও চুক্তিটিতে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা প্রয়োগ করে ভারত অনুরোধটি খারিজ করার ক্ষমতা রাখে। যেমন:
১. যদি অনুরোধ-প্রাপক দেশের মনে হয় যে 'অভিযোগগুলো শুধুমাত্র ন্যায় বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি', তাহলে তারা তা নাকচ করতে পারে।
২. অভিযোগগুলো যদি এমন 'সামরিক অপরাধে'র হয় যা সাধারণ ফৌজদারি আইনের পরিধির বাইরে, তাহলেও অনুরোধ নাকচ করা যাবে।
দিল্লির পর্যবেক্ষকদের অভিমত হলো, ভারত খুব সহজেই এই যুক্তি দিতে পারে যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার পাননি। সেক্ষেত্রে, তারা ‘অভিযোগগুলো শুধুমাত্র ন্যায় বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি’—এই ধারাটি ব্যবহার করেই প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করবে।
FAQ (Frequently Asked Questions)
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
উত্তর: না, ভারতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন যে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ফলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির অবস্থান আদৌ বদলাচ্ছে না এবং তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ারও কোনো প্রশ্ন উঠছে না।
প্রশ্ন: ভারত কেন শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিচ্ছে?
উত্তর: ভারতের ঘোষিত অবস্থান হলো, একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে এদেশে ‘সাময়িক’ (ফর দ্য টাইম বিয়িং) আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ (নোট ভার্বাল)-এর বর্তমান অবস্থা কী?
উত্তর: গত বছরের ডিসেম্বরে অনুরোধ পাওয়ার পর ভারত সেটি নিয়ে এতদিন একেবারে চুপচাপ বসেছিল। তারা প্রাপ্তি স্বীকার করলেও, আনুষ্ঠানিকভাবে এই অনুরোধ নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো অবস্থান জানায়নি।
প্রশ্ন: প্রত্যর্পণ চুক্তি ব্যবহার করে ভারত কীভাবে এই অনুরোধ নাকচ করতে পারে?
উত্তর: ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির হাজারটা ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে অনুরোধ নাকচ বা ঝুলিয়ে রাখতে পারে। বিশেষত, যদি তারা মনে করে অভিযোগগুলো ‘রাজনৈতিক প্রকৃতি’র অথবা ‘শুধুমাত্র ন্যায় বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি’, তবে তারা তা নাকচ করার ক্ষমতা রাখে।
প্রশ্ন: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে কীসের অভিযোগ রয়েছে?
উত্তর: গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন, কারণ শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের আদালতে গণহত্যার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত একজন অপরাধী।
তানভির ইসলাম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম ভারত ফুটবল ম্যাচ: কখন, কোথায় ও কবে খেলা জানুন সময়সূচি
- বিএনপির ২৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন! আসছে নতুন ১১ প্রার্থী
- আইএমএফের কড়া বার্তা: ঝুঁকিতে দেশের ১৬ ব্যাংক
- পুঁজিবাজারে স্বস্তি: বিএসইসি'র ‘মার্জিন রুলস নীতিমালা ২০২৫’ আসলো নতুন সিদ্ধান্ত
- একলাফে কমলো সোনার দাম, আজ ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি কত
- আগামীকাল ভারত বনাম বাংলাদেশ ফুটবল ম্যাচ: সময়সূচি, সম্ভাব্য একাদশ ও পরিসংখ্যান
- পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ৩য় ওয়ানডে: ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা, সরাসরি দেখুন Live
- এইচএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ রেজাল্ট ২০২৫ প্রকাশ: ফলাফল দেখুন এখানে
- ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উত্তরণ এক কোম্পানি
- ব্রাজিল বনাম তিউনিশিয়া: কবে, কখন, কোথায় ম্যাচ জানুন সময়সূচি
- এইচএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ রেজাল্ট ২০২৫ প্রকাশ: অনলাইনে যেভাবে দেখবেন
- এইচএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ: রেজাল্ট দেখুন এখানে
- আজ ভারত বনাম বাংলাদেশ ফুটবল ম্যাচ: সময়সূচি ও হেড টু হেড পরিসংখ্যান
- শেখ হাসিনা রায় ঘোষণা করা হচ্ছে, সরাসরি দেখুন Live
- পর্তুগাল বনাম আর্মেনিয়া: শেষ হলো ১০ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচ জানুন ফলাফল